News update
  • UN Warns Refugees Caught in Climate–Conflict Cycle     |     
  • Mohammadpur Sub-Jail in Magura lies abandoned     |     
  • BD trade unions demand 10-point climate action ahead of COP30     |     
  • Bangladesh criticises Rajnath remarks on Yunus     |     
  • ‘Very unhealthy’ air quality recorded in Dhaka Sunday morning     |     

রাশিয়ার মর্যাদার উপর আঘাত হেনেছে বাশার আল-আসাদের পতন

বিবিসি সংঘাত 2024-12-10, 10:15pm

retwtwt-982858044f895f299bf1579e699662511733847358.jpg




বাশার আল-আসাদকে প্রায় এক দশক ধরে ক্ষমতায় রেখেছিল রাশিয়ার আগ্নেয়াস্ত্র শক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সমস্ত কিছু বদলে দিয়েছে।

দামেস্কের পতন হয়েছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে এবংবিমান পথে তাকে মস্কোতে উড়িয়ে আনা হয়েছে বলে খবর।

ক্রেমলিনের একটা সূত্রের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, 'মানবিক কারণে' বাশার আল-আসাদ এবং তার পরিবারকে রাশিয়ার তরফে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে নাটকীয় পরিস্থিতির মাঝে ক্রেমলিনের সিরিয়া প্রকল্প উন্মোচিত হয়েছে এবং মস্কো তা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, "মস্কো গভীর উদ্বেগের সঙ্গে সিরিয়ার ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করছে।"

তবে, আসাদ সরকারের পতন কিন্তু রাশিয়ার মর্যাদার উপর আঘাত।

প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ২০১৫ সালে হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছিল রাশিয়া। এই পদক্ষেপের পেছনে রাশিয়ার একটা লক্ষ্যও ছিল। প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থনে সামরিক বাহিনী পাঠানোর পিছনে তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে নিজেদের জাহির করা।

সাবেক সোভিয়েত থেকে দূরে পশ্চিমাদের শক্তি ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে এটাই ছিল ভ্লাদিমির পুতিনের প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানে রাশিয়া সফল হয়েছে বলেও মনে হয়েছিল।

এরপর ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পুতিন সিরিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার হেমেইমিম বিমানঘাঁটি পরিদর্শন করেন। তার সেই অভিযান যে সফল, সেই ঘোষণাও দেয়া হয়।

এদিকে, রুশ বিমান হামলায় সিরিয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের খবর নিয়মিত প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিন্তু যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সেখানে (সিরিয়ায়) পাঠিয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের রাশিয়ার সামরিক অভিযান প্রত্যক্ষ করার ব্যবস্থাপনা করতেও দেখা গিয়েছে।

এইরকমই একটা সফরে আমার মনে আছে- একজন কর্মকর্তা সেই সময় আমাকে বলেছিলেন যে, রাশিয়া কিন্তু সিরিয়ায় 'দীর্ঘ মেয়াদের' জন্য থাকবে।

প্রসঙ্গত, রাশিয়ার তরফে সামরিক সহায়তার বিনিময়ে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের (রাশিয়াকে) ৪৯ বছরের জন্য হেমেইমিমের বিমানঘাঁটি এবং তারতুসের নৌঘাঁটি ইজারা দেয়।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল রাশিয়া। আফ্রিকার ভিতরে এবং বাইরে সামরিক ঠিকাদারদের স্থানান্তর করার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই ঘাঁটিগুলো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মস্কোর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো এখন ওই রুশ ঘাঁটিগুলোর কী হবে?

বাশার আল-আসাদের মস্কোয় পৌঁছানোর বিষয়ে ঘোষণা করে রাশিয়ার তরফে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে অন্য একটা বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে 'সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধীপক্ষের' প্রতিনিধিদের যোগাযোগ ছিল।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভির উপস্থাপক জানিয়েছেন, বিরোধী নেতাদের তরফে সিরিয়ার ভূখণ্ডে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি ও কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সিরিয়াস্থিত রাশিয়ার ঘাঁটিগুলোকে 'উচ্চ পর্যায়ের সতর্কতায়' রাখা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে 'এই মুহূর্তে তাদের উপর কোনও গুরুতর ঝুঁকি নেই'।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন বাশার আল-আসাদ। ক্রেমলিন কিন্তু তার উপর ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছিল। আসাদ সরকারের পতনের বিষয়টাকে একটা ধাক্কা ছাড়া অন্য কোনও দিক থেকে উপস্থাপন করতে গেলে কিন্তু রুশ কর্তৃপক্ষকে বেশ হিমশিম খেতে হবে।

তা সত্ত্বেও কিন্তু সেই চেষ্টাই করে চলেছে রাশিয়া আর একইসঙ্গে এই পরিস্থিতিতে 'দোষারোপের' জন্য বলির পাঁঠাও খুঁজছে তারা।

যেমন, রোববার রাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রধান সাপ্তাহিক নিউজ শোতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে নিশানা করা হয়। বিদ্রোহীদের রুখতে যুদ্ধ না চালানোর করার জন্য সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সমালোচনা করা হয়।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ইয়েভগেনি কিসেলেভকে বলতে শোনা গিয়েছে, "সবাই দেখতে পাচ্ছিল যে, সিরীয় কর্তৃপক্ষের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই নাটকীয় হয়ে উঠছে।"

"কিন্তু আলেপ্পোতে কার্যত বিনা লড়াইয়ে (সামরিক) অবস্থান ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষিত অঞ্চলগুলো একের পর এক আত্মসমর্পণ করে দেওয়া হয় এবং তারপরে উড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও তারা (সরকারি সৈন্যবাহিনী) অনেক বেশি পোক্ত ও সুসজ্জিত ছিল এবং আক্রমণকারী পক্ষকে তারা বহুগুণে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।"

"এটা (কেন এমন পরিণতি হলো) কিন্তু একটা রহস্য!"

ওই খবরের অনুষ্ঠানে উপস্থাপককে আরও দাবি করতে শোনা যায় যে "রাশিয়া সবসময়ই সিরিয়ায় (বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে) সমঝোতা আশা করেছিল।"

এরপর তার শেষ কথা ছিল, "সিরিয়ায় যা ঘটছে সে সম্পর্কে আমরা অবশ্যই উদাসীন নই। তবে আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে রাশিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তা- বিশেষত সামরিক অভিযানের (ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ) অঞ্চলে কী ঘটছে।"

এখানে রাশিয়ার নাগরিকদের জন্য এখানে একটা পরিষ্কার বার্তা রয়েছে। আর তা হলো, রাশিয়া নয় বছর ধরে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সম্পদ জুগিয়ে চললেও রাশিয়ার জনসাধারণকে বার্তা দেওয়া যে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে।