News update
  • Hilsa Becomes Luxury as Prices Soar Amid Fishing Ban     |     
  • COP30 under difficult conditions     |     
  • Political parties who signed 'Historic July Charter'     |     
  • যা আছে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায়       |     
  • Climate Crisis Fuels Hunger, Migration, and Global Instability     |     

সেলুলয়েডের নায়িকাদের স্বপ্নের রবীন্দ্রনায়িকারা

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সেলিব্রিটি 2023-05-13, 9:08am

01000000-0aff-0242-8c5a-08db531e9644_w408_r1_s-200c66f40733f4329b2a42cdf3d38b321683947331.jpg




দামিনী, বিনোদিনী, সোহিনী, নন্দিনী, চিত্রাঙ্গদা, চন্ডালিকা, হরতনী, এলা – এই তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্ট নারী চরিত্রদের আবেদন কালোত্তীর্ণ। তারা আধুনিক, তারা ঐতিহ্যের অনুসারী, আবার সমাজের অচলায়তন ভাঙতেও তাঁরা এগিয়ে আসেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে নারী শুধুই ‘মিউজ’ নন, তিনি চরিত্রদের যেন একজন দার্শনিক, একজন শিল্পী, একজন সমাজ বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে দেখেছেন। এবং তারপর তাঁদের বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছে তাঁর লেখা নারী চরিত্রদের মধ্যে। বয়স, আর্থ-সামাজিক অবস্থান, চারিত্রিক ও মানসিক বৈচিত্র্যে তাঁরা অনন্য।

রবীন্দ্রসৃষ্ট নারীরা এই কারণেই মহিলা অভিনেতাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়, তাদের কাছে স্বপ্নের চরিত্র, তাঁদের অভিনেতা সত্তার কাছে চ্যালেঞ্জ – দশকের পর দশক ধরে বাংলার বিভিন্ন প্রজন্মের মহিলা অভিনেতা অভিনয় করেছেন, উন্মুখ হয়ে থেকেছেন। সেলুলয়েডে রবীন্দ্রনাথের নারী চরিত্রদের অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে পরতের পর পরত উন্মোচনের কথা ভেবেছেন, বলেছেন বাংলার নারী অভিনেতারা।

ভয়েস অফ আমেরিকা কথা বলেছে এই প্রজন্মের কয়েক জন তরুণ বাঙালি অভিনেত্রীর সঙ্গে। তারা বলেছেন তাঁদের স্বপ্নের রবীন্দ্রসৃষ্ট নারী চরিত্রের কথা, যে চরিত্রগুলি অভিনেতা হিসাবে তাদের প্রাণিত করে, নারী হিসাবে অনুপ্রাণীত করে।

প্রশ্ন: সুযোগ পেলে রবীন্দ্রনাথের কোন চরিত্রে অভিনয় করবেনকেন?

নুসরাত ফারিয়া মাজহার - বিনোদিনী

২০০৩ সালে, ঋতুপর্ণ ঘোষ 'চোখের বালি' বানিয়েছিলেন। ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন 'বিনোদিনী' চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আমি তখন অনেক ছোট, ৮ বছরের ছিলাম।

বড় হবার পর আবার যখন দেখলাম, বিনোদিনী চরিত্রটার প্রেমে পড়ে গেলাম। এত বৈচিত্র্য এই একটা চরিত্রে! আমার খুবই পছন্দ।

তো হ্যাঁ, যদি আমি কখনও সুযোগ পাই, অবশ্যই 'চোখের বালি'-র বিনোদিনী চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। আমি মনে করি, এই চরিত্রটির মধ্যে টক-মিষ্টি একটা ব্যপার আছে, যা আজকাল তেমন দেখা যায় না।
নাজিফা তুষি - হৈমন্তী

ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের যে চরিত্রের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়, সেটি হলো হৈমন্তী। যখন স্কুলে ছিলাম, তখনই হৈমন্তী ছোটগল্পটি আমি পড়ি। হৈমন্তীর জন্য তীব্র সহানুভূতি তৈরি হয় আমার মাঝে - কারণ হৈমন্তী চরিত্রটা বুদ্ধিদীপ্ত।

হৈমন্তীর অনেক ছোটবেলায় বিয়ে হয়। ছোট বয়সেই যখন একটা মানুষ শ্বশুরবাড়িতে চলে যায় এবং সেই জীবন যাপন শুরু করে… আমরা দেখি যে হৈমন্তী তার স্বামীকে অসম্ভব ভালোবাসে এবং তার স্বামীও তাকে অনেক ভালোবাসে; কিন্তু এই ভালোবাসায়ও তার জীবনটা সুখময় হয়ে উঠে না। দেখা যায়, তার স্বামীর ভালোবাসার পরেও আমাদের তৎকালীন সমাজের যে পারিবারিক, বিয়ে হবার পরেও যে ফ্যামিলি প্রবলেম গুলো থাকে, যেটা একটা মেয়ে ফেস করে। সেটা সে ছোট বয়সে করতেসে। তার স্বামী তাকে ভালোবাসার পরেও কোন স্ট্যান্ড নিতে পারে না তার জন্য। ছোট বয়সেও এ যন্ত্রণাগুলো বয়ে বেড়াচ্ছিলো সে। তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে তার কষ্ট অনুভব করতে পারতেসিলাম এবং আমার চরিত্রটির প্রতি একধরনের সহানুভূতি তৈরি হয়। এজন্য হৈমন্তি আমার প্রথম ভালোলাগার চরিত্র।

আবার, আমি যখন আরো বড় হতে শুরু করলাম, রবীন্দ্রনাথকে আরো বুঝতে শিখলাম, তখন আবারো যে চরিত্রটি আমাকে আকর্ষণ করে, সেটা হলো 'চোখের বালি'র 'বিনোদিনী' চরিত্রটি। কারণ আমরা দেখি যে এ উপন্যাসে বিনোদিনী বেশ প্রগতিশীল চরিত্র, সময়ের অসঙ্গতিগুলো তার চোখে পড়ে। তিনি বিধবা হওয়া সত্ত্বেও সবার কামনার নারী ছিলেন। একসাথে তিনি যেমন স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করেন, আবার আরেকটি দিক হচ্ছে তিনি অসম্ভব বাস্তববাদী। যেকোন অসঙ্গতিতে তিনি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন।

আমরা আরো দেখি, পেট্রিয়ার্কাল সোসাইটিতে যে ধরনের ‘সেট করা’ বিধবা তত্ত্ব ছিলো, বিনোদিনী সেটা প্রত্যাখান করেন। বিনোদিনী প্রথা বিরোধী চরিত্র। তাই তৎকালীন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিনোদিনী খুবই স্ট্রং একটা চরিত্র।

এ চরিত্রের যে লেয়ার, তা আমাকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করে এবং আমার আসলেই এ দুটো চরিত্রের প্রতি এখনো ঐ ভালোলাগা কাজ করে। আমি সত্যি চাই, কখনও যেন এ দুইটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ তৈরি হয় আমার।

আশনা হাবিব ভাবনা - নন্দিনী

আমি নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করতে চাই, থিয়েটার অথবা ফিল্মে।

'রক্তকরবী' তে নন্দিনী আমার কাছে প্রকৃতির প্রতিক। যক্ষপুরী থেকে নন্দনী প্রকৃতির কাছে যায় প্রতিমুহূর্তে। কুঁদফুলের মালা গেঁথে পদ্মপাতায় ঢেকে আনে। "আমি পর্বতের চূড়ার মতো, শূন্যতাই আমার শোভা," এই ডায়ালগগুলো আমার প্রিয়। আমি নিজেকে দেখতে পাই (নন্দিনীর ভেতর)। এই নাটকটি এ্যানালাইসিস করেছিলাম জামিল স্যারের (অভিনয়) ক্লাসে। তখন ক্লাসে অনেকেই আমাকে ‘নন্দিনী’ ডাকতো।

রবীন্দ্রনাথের সাথে তো আসলে আমার ছোটবেলা থেকেই বসবাস। আমি নৃত্যশিল্পী। আমি জানি, নন্দিনী করলে আমি অনেক ভালো করবো। নন্দিনী চরিত্রে একটা ছন্দ আছে। সেটা বুঝতে হলেও তাল লয় সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে।

"তোমার এত আছে, তবু কেবলই অমন লোভীর মতো কথা বল কেন?," এই লাইনটিতে আমরা বুঝি - কতটা নির্লোভ নন্দিনী।

"যাচ্ছি, কিন্তু বলে গেলুম, আজ আমার রঞ্জন আসবে, আসবে, আসবে… কিছুতে তাকে ঠেকাতে পারবে না," এই লাইনে তার যে প্রবল বিশ্বাস, তা আমরা দেখি।

নন্দিনী আমার কাছে প্রকৃতির সন্তান। আর আমি নিজেও তা-ই ভাবি সকলকে। অভিনেতা হিসেবে যদি বলি, চরিত্র অস্থির হলেও অভিনেতা স্থির। অভিনেতা হিসেবে নন্দিনী করলে আমার আনন্দ হবে, কারণ নন্দিনীকে আমি ধারণ করি নিজের অজান্তেই।

"নিঃশব্দ নয়। মৃত্যুর মধ্যে তার অপরাজিত কণ্ঠস্বর আমি যে এই শুনতে পাচ্ছি। রঞ্জন বেঁচে উঠবে-- ও কখনো মরতে পারে না," এই লাইনটাও আমার খুব প্রিয়।

অভিনয়ের কৌশল আমার কাজ। আমি কিভাবে একটি চরিত্র নির্মাণ করবো, তা বোঝাপোড়ার দায়িত্ব আমার। হ্যাঁ, (নন্দিনীর চরিত্রে অভিনয়) কখনো আমি নিশ্চই করবো।

শুভশ্রী গাঙ্গুলি – চিত্রাঙ্গদা, চন্ডালিকা

সত্যি কথা বলতে কোনও বিশেষ রবীন্দ্র-নায়িকা করার কথা আমি ভাবি না। কারণ রবীন্দ্রনাথের সব ক’টি নারীচরিত্রই বিশেষ। রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রত্যেকটি নারী চরিত্রেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং তাঁরা প্রত্যেকে একে অপরের থেকে আলাদা। যখনই পড়ি বা দেখি মনে হয় যেন, একজন অভিনেত্রী হিসাবে তাঁদের প্রতিটিতেই যদি অভিনয় করতে পারতাম কী ভালই না হতো! আর এটা সম্ভব হয়েছে রবীন্দ্রনাথের মতো একজন অসামান্য শিল্পীর জন্যই, তাঁর মধ্যে রসবোধ ছিল, তাঁর যে দেখার চোখ ছিল, তাঁর যে অনুভব করার ক্ষমতা ছিল তার সঙ্গে আর কারওর তুলনা চলে না।

তবুও যদি আলাদা করে বলতে হয় বলব, ‘চিত্রাঙ্গদা’ আর ‘চন্ডালিকা’-র কথা। ব্যক্তিগতভাবে এই দু’টি চরিত্র আমার কাছে বাকি সকলের থেকে অনেকটা আলাদা। কারণ এই চরিত্রগুলিতে বিভিন্ন শেডস আছে শুধু তাই নয়, এক আশ্চর্য শক্তিও যেন দেখতে পাই এই দুই নারী চরিত্রের মধ্যে। অথচ দেখুন, এই চরিত্র দু’টিও একে অপরের থেকে কতটা আলাদা! নারী চরিত্র্রের নানা দিক যত্ন করে রবীন্দ্রনাথ ফুটিয়ে তুলেছেন এই দুই চরিত্রের মধ্যে, যেগুলির কিছু আমাদের চেনা, কিছু অচেনা। আর সেগুলিই একজন অভিনেত্রী হিসাবে আমি ফুটিয়ে তুলতে চাই। কতটা ভালো পারব তা আমি আগে থেকে না বলতে পারলেও এটুকু বলব, রবীন্দ্রনাথের কোনও নারী চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেলে আমি নিজেকে ১০০ শতাংশ উজাড় করে দেব।

মিমি চক্রবর্তী – বিনোদিনী, বিমলা

আমার কাছে আলাদা করে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্ট কোনও নারী চরিত্র নেই, যেটা একজন অভিনেত্রী হিসাবে আমি করতে চাইব। কারণ আমি আলাদা করে রবীন্দ্রনাথের নারী চরি্ত্রের মধ্যে একটি বা দু’টিকে আলাদা করে বেছে নিতে পারব না। আমার কাছে তাঁর প্রতিটি চরিত্রই ভীষণ স্পেশাল। অভিনেত্রী হিসাবে মনে হয় যদি সব চরিত্রগুলিই করতে পারতাম মনে হয়। আসলে ঋতুপর্ণ ঘোষের গানের ওপারে ধারাবাহিকে পুপে-র চরিত্রে অভিনয় করে আমার কেরিয়ারের শুরুতেই যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা আমাকে ঋদ্ধ করেছে। যদিও চরিত্রটি কাল্পনিক ছিল, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির সঙ্গে সে এমনভাবেই জড়িয়ে ছিল যে তা আমাকে রবীন্দ্রনাথের অনেক কাছাকাছি নিয়ে গেছিল।

চোখ বুজলেও আমি আলাদা করে কোনও বিশেষ নারী চরিত্রকে দেখতে পাই না। কখনও মনে হয় যদি আবার ‘চোখের বালি’ হয় আমি বিনোদিনী করতে চাইব, কারণ সেখানে অভিনয়ের সুযোগ অনেক বেশি। আবার কখনও মনে হয়, ‘ঘরে বাইরে’-র বিমলা করতে পারলেও খুব ভালো হত – আশ্চর্য রকমের শেডস আছে চরিত্রটায়। অভিজ্ঞতা যত বেড়েছে ততই যেন চরিত্রগুলোকে নতুন করে বুঝতে শিখেছি। এরকমভাবেই মনে হয় একজন অভিনেত্রী হিসাবে রবীন্দ্রনাথের সব চরিত্রগুলিই করতে পারলে বিভিন্ন আবেগ ফুটিয়ে তোলার সুযোগ পেতাম। আসলে রবীন্দ্রনাথ মানেই তো একটা আবেগ, একটা ‘ফিলিংস’ যার সঙ্গে কোনও তুলনা হয় না। তথ্য সূত্র ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।