News update
  • US Issues Travel Alert for Bangladesh Ahead of Election     |     
  • Air ambulance carrying bullet-hit Hadi flies for Singapore     |     
  • Can Dhaka’s arms recovery drive ensure peaceful polls?     |     
  • ‘Unhealthy’ air quality recorded in Dhaka Monday morning     |     
  • BD peacekeepers' deaths: UN chief calls Dr. Yunus, offers condolence     |     

রাহুলের বাড়িতে হামলা : বিবৃতিতে যা জানালো জলের গান

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সেলিব্রিটি 2024-08-08, 11:28am

joler_gan-bae641b63627062198bda20e3f5ad60a1723094920.jpg




কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও পরে সরকার পতনের এক দফার গণ আন্দোলনে নেমেছিলেন সংগীত শিল্পী রাহুল আনন্দ, তবে ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর সহিংসতা থেকে রক্ষা পেলেন না তিনি। তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের পাশেই একটি বাড়িতে সোমবার দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এতে পুড়ে গেছে তার নিজের হাতে বানানো তিন শতাধিক বাদ্যযন্ত্র। বাড়ির মালামালও হয়েছে লুটপাট।

বাড়িতে হামলার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে জলের গান। বিবৃতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে একটি গান। এই বাড়িতে রেকর্ড করা শেষ গান।অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ব্যান্ডটি লিখেছে, ‘জলের গানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি শুধু রাহুল আনন্দের বসতবাড়ি ছিল না; ছিল পুরো দলটির স্বপ্নধাম, আনন্দপুর। যেখানে তৈরি হয়েছে কত গান, কত সু্র, আর দাদার ভাবনাপ্রসূত শত শত বাদ্যযন্ত্র। শুধু তা-ই নয়। জলের গানের অফিশিয়াল স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহৃত হতো বাড়িটি। দলের সকলের দলগত সংগীতচর্চা থেকে শুরু করে, সকল স্টুডিও ওয়ার্ক-রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং এখানেই হতো।’

ব্যান্ডটি লিখেছে, ‘যাঁরা নিয়মিত এই বাড়িতে যাতায়াত করতেন, তাঁরা জানেন যে রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার বাড়িটির সাদা গেটটি সব সময় খোলাই থাকত। তাতে তালা দেওয়া হতো না। যে কেউ, যেকোনো দরকারে যেন দাদার কাছে পৌঁছোতে পারে, সেই ভাবনায়। আর যাঁরাই দিনের যেকোনো প্রান্তে এই বাড়িতে এসেছেন, সকলেই একটি চিত্রের সাথে খুব পরিচিত, তা হলো রাহুল আনন্দ মাটিতে বসে একটি সিরিশ কাগজ হাতে নিয়ে তাঁর নতুন বাদ্যযন্ত্রের কাঠ ঘষছেন।’

ব্যান্ডটি লিখেছে, ‘জলের গানের বাদ্যযন্ত্র। রাহুল আনন্দের বিরাট ভাবনা ও স্বপ্নের দিকে ধাবমান এক নিরন্তর প্রয়াস। আমাদের দেশীয় কাঠে তৈরি, আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্র। শুধুই কি আমাদের? এই দলের? জলের গানের? না! এই প্রয়াস সকল নবীন মিউজিশিয়ানদের জন্য, যারা বিশ্বাস করবে, আমরাও আমাদের বাপ-দাদার মতো নিজেদের বাদ্যযন্ত্র নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারি! এই প্রয়াস সেই স্বকীয়তার; যার বলে এই দেশের মানুষ গর্বের সাথে বলতে পারে, এই আমাদের নিজেদের বাদ্যযন্ত্রে বেজে ওঠা অনন্য শব্দতরঙ্গ, যা কি না পুরো পৃথিবীর বুকে কেবল এই বাংলাদেশের মাটিতেই ঝনঝন করে বাজে, সুর তোলে, স্বপ্ন দেখায়। যেই স্বপ্নের ঝিলিক সুদূর ফ্রান্স থেকে আরেকজন মিউজিশিয়ানকে আমাদের দেশে টেনে আনে। পুরো পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষের চোখের আলো পড়ে আমাদের এই দেশে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের এই বাড়িটিতে।’

ব্যান্ডটি আরও লিখেছে, ‘তবে কি এই ঠিকানায় আবাস হওয়াটাই কিছু মানুষের এত ক্ষোভের কারণ? এত রাগের বহিঃপ্রকাশ? যারা ইতিমধ্যে সেখানে গিয়েছেন কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দেখেছেন, তারা সকলেই খবরটি জানেন। হ্যাঁ!, রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার, এবং আমাদের সকলের প্রিয় জলের গানের এই বাড়িটি আর নেই। সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং আশীর্বাদে বাড়ির সকল সদস্য নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং এখন নিরাপদে আছেন। কিন্তু রাহুলদা এবং আমাদের দলের সকল বাদ্যযন্ত্র, গানের নথিপত্র এবং অফিশিয়াল ডকুমেন্টস ছাড়াও দাদার পরিবারের খাট-পালং, আলনা আর যাবতীয় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে! সব!’

স্ত্রী উর্মিলা শুক্লা ও ১৩ বছরের পুত্রকে নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়েছে রাহুলকে। ব্যান্ডটি লিখেছে, ‘সকলের জন্য নিরন্তর ভেবে যাওয়া মানুষটিকে পরিবারসহ এক কাপড়ে তাঁর নিজ ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব হয়তো আজীবন লালিত থাকবে তাঁর সন্তানের মনে; যার বয়স কি না মাত্র ১৩ বছর—ভাবতেই কষ্ট হয়। এত দিন ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন সংসারের সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলেছে চোখের সামনে। কিছু মানুষের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার আগুনে!’

বিবৃতিতে সবার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে ব্যান্ডটি লিখেছে, ‘এই বাদ্যযন্ত্র, গান বা সাজানো সংসার হয়তো আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে আবার গড়ে নিতে পারব। কিন্তু এই ক্রোধ আর প্রতিহিংসার আগুনকে নেভাব কীভাবে! কেন আমরা ভালোবাসা আর প্রেম দিয়ে সবকিছু জয় করে নিতে পারি না? যেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি, সেই স্বাধীনতার রক্ষায় যদি একইভাবে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হই, তাহলে চরম নিরাশা, অপমান ও লজ্জায় নিজেদের গানই গেয়ে উঠি এক ভগ্ন হৃদয়ে, ‘কোন্ ছোবলে স্বপ্ন আমার হলো সাদা কালো? আমার বসত অন্ধকারে; তোরা থাকিস ভালো!’

সবশেষ ব্যান্ডটি লিখেছে, ‘সকল প্রাণ ভালো থাকুক। নতুন আগামীর স্বপ্নকে আমরাও অভিবাদন জানাই একইভাবে। কিন্তু নিজের উল্লাসের চিৎকার এবং সজোর হাততালিতে কারও স্বপ্ন ভেঙে না দিই!’

গত বছর রাহুল আনন্দের বাড়িতে এসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। গানে, গল্পে, আড্ডায় রাহুল আনন্দের সঙ্গে কাটিয়েছেন প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। তাঁর বানানো বাদ্যযন্ত্রের প্রশংসা করেছিলেন তিনি। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়েছে সেসব বাদ্যযন্ত্র। এনটিভি নিউজ।