
১৯৯৭ সালে রিজভীর জবানবন্দি পত্রিকায় প্রকাশ হলে তা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে শোবিজ অঙ্গনে (বামে)। ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ২৯ বছর পর অভিনেতা সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়। এরপরই একে একে সামনে আসছে অভিনেতার হত্যায় জড়িত অভিযুক্ত অপরাধীদের নাম। কিন্তু আপনি কি জানেন, স্বপ্নের নায়কের চলমান মামলাটি নতুন মোড় পেয়েছে ১৯৯৭ সালের এক আসামির জবানবন্দিতে?
গত ২০ অক্টোবর মহানগর দায়রা জজ আদালতে চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলার চূড়ান্ত শুনানি হয়। ওই দিন দুপুরের পর শুনানিতে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হকের কাছে সালমান শাহর পক্ষের আইনজীবী আবিদ হোসেন প্রমাণসহ নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন।
আইনজীবী আবিদ হোসেন শুনানিতে যুক্তি হিসেবে উত্থাপন করেন রেজভি আহমেদ ফরহাদ নামের একজন আসামির জবানবন্দি।সালমান শাহ হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি রেজভি। আইনজীবী জানান, রেজভি ১৯৯৭ সালে অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন। ওই মামলা চলাকালীন তিনি জবানবন্দিতে বলেন, সালমানকে হত্যা করে ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে সাজানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথাও জবানবন্দিতে স্বীকার করেন রেজভি।
তৎকালীন সময়ে রেজভির জবানবন্দি পত্রিকায় প্রকাশ হলে তা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে শোবিজ অঙ্গনে। ওই জবানবন্দিতেই সালমান শাহকে খুন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হন নায়কের মা নীলা চৌধুরী ও বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
এছাড়া সালমান শাহর মৃত্যুর দিন নায়কের ইস্কাটনের ফ্ল্যাটের বেশ কয়েকটি দৃশ্যও সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন নায়কের মামা আলমগীর কুমকুম। যে কারণে সর্বশেষ পিবিআইয়ের তদন্তে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করা হলে এ তদন্তের প্রতিবেদনে না রাজি জানায় নায়কের পরিবার। ছেলে হত্যার বিচার পেতে দীর্ঘ ২৯ বছর চালিয়ে যান আইনি প্রক্রিয়া।
এদিকে সালমান শাহ হত্যা মামলায় সর্বমোট ১১ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। হত্যা মামলায় প্রধান আসামি নায়কের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। অন্য ১০ আসামি হলেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, মেফিয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আবদুস সাত্তার, সাজু ও রেজভি আহমেদ ফরহাদ।
এতদিন ৫টি কারণ দেখিয়ে তদন্তের প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করা হয়। এগুলো হলো চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে নায়কের গভীর সম্পর্ক, স্ত্রীর সঙ্গে সে সম্পর্ক নিয়ে কলহ, নায়কের অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা, মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গে জটিল সম্পর্ক ও নায়কের সন্তানহীনতা। তদন্তে উল্লেখিত সবকটি কারণকে মিথ্যা, ভুল বলে দাবি করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আদিব হোসেন। ওইসব তদন্তে সঠিক তথ্য লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে শক্তিশালী যুক্তি দেন তিনি।
সালমান শাহর পরিবারও শুরু থেকে নায়কের আত্মহত্যার কারণকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী জানান, পরিবারের অজান্তেই পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। আর এ অপমৃত্যুর মামলাকে একাধিকবার হত্যা মামলায় রূপান্তর করার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিদের ক্ষমতার কারণে অপমৃত্যুর মামলা এতদিন হত্যা মামলায় রূপ নিতে পারেনি।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছরে রহস্যজনক মৃত্যু হয় ঢালিউড চিত্রনায়ক সালমান শাহর। অভিনেতার হঠাৎ মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করেন তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। তবে স্ত্রীর এ দাবি মেনে না নিয়ে সালমান শাহর পরিবার জানায়, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে চলমান মামলাটি সম্প্রতি আমলে নিয়েছেন আদালত। যে কারণে মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পর সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়।