News update
  • Bangladesh Faces $1.25 Billion Export Loss from US Tariffs     |     
  • Israel Expands Gaza Assault as UN Warns of ‘Genocide’     |     
  • World Ozone Day Highlights Progress and Future Action     |     
  • DG Health Services gives 12 directives to treat dengue cases     |     
  • Stock market shows recovery as investors back: DSE chairman     |     

যেসব কারণে বাড়ছে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক স্বাস্থ্য 2024-09-25, 1:55pm

rtreterthggj-c892302dddc34dbda6ced6121b8894681727250941.jpg




ব্রেস্ট ক্যানসার (স্তন ক্যানসার) এক ঘাতক ব্যাধি। স্তন ক্যানসার নারীদের কাছে একটি আতংকের নাম। পুরুষের চেয়ে নারীদের স্তন ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে শতভাগ বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগী ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন নারীদের স্তন ক্যানসার মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। যদিও এর আগে জরায়ুর ক্যানসার শীর্ষস্থানে অবস্থান করছিল। নারীরা তাদের নিজেদের এই গোপন অঙ্গের রোগগুলো সহজে কারও কাছে বলতে চান না। ফলে তারা এ ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ব্রেস্ট ক্যানসারের কিছু নির্দিষ্ট ঝুঁকির কারণ রয়েছে, যেগুলোর জন্য এই ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

স্তন ক্যানসার কি, এর লক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—

স্তন ক্যানসার কি: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন বাংলাদেশে ক্যানসার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের হারও। চিকিৎসকেরা বলছেন, স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালীর লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যানসার।

এর লক্ষণ

১. পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার মা, বোন বা অন্য কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের স্তন ক্যানসার থাকে, তবে আপনার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

২. জেনেটিক মিউটেশন: বিআরসিএ১ এবং বিআরসিএ২ জিনের মিউটেশন স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া টিপি৫৩ এবং পিটিইএন এর মতো অন্যান্য জেনেটিক মিউটেশনও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৩. হরমোনাল ফ্যাক্টর: দীর্ঘদিন ধরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের বেশি মাত্রায় প্রভাব থাকার ফলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন, অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া এবং দেরিতে মেনোপোজ হওয়া।

৪. প্রজনন ও মাসিকের কারণ: সন্তান ধারণ না করা বা প্রথম সন্তানের জন্ম দেরিতে দেয়া (৩০ বছর বা তার পরে) স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৫. হরমোন থেরাপি: মেনোপোজ পরবর্তী হরমোন থেরাপি (যেমন ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন সমন্বিত থেরাপি) নেয়া হলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৬. জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং মদ্যপান ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৭. রেডিয়েশন থেরাপি: যদি পূর্বে বুকে রেডিয়েশন থেরাপি নেয়া হয়ে থাকে, তবে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

৮. ডেনস ব্রেস্ট টিস্যু: স্তনের টিস্যু যদি বেশি ঘন হয়, তবে ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ম্যামোগ্রামে ক্যানসার নির্ণয় করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

৯. বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ, বিশেষ করে পলিউশন এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

১০. অ্যালকোহল ও ধূমপান: নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন ও ধূমপান স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

এগুলো ছাড়াও, কিছু কারণে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে যা এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত নয়।

উপসর্গ

১. স্তনে চাকা দেখা দেওয়া।

২. স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া বা চামড়া মোটা হওয়া। (কমলালেবুর খোসার মতো)

৩. নিপল বা স্তনের বোঁটা ভেতরে দেবে যাওয়া।

৪. নিপল দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া।

ডায়াগনোসিস বা শনাক্তকরণ পরীক্ষা

প্রথমেই বিশেষজ্ঞরা রোগীর রোগের history নিয়ে থাকেন। শারীরিক পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যানসার শনাক্ত করা হয়। রোগীর বয়সের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখেই বিশেষজ্ঞরা তা দিয়ে থাকেন। যেমন-

১. ম্যামোগ্রাফি * আলট্রাসনোগ্রাফি * এমআরআই * FNAC -চাকা থেকে * বায়োপসি/মাংস পরীক্ষা

চিকিৎসা

২. প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ রোগী সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন। এ ক্যানসারের চিকিৎসা প্রধানত কয়েক ভাগে বিভক্ত-

৩. সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি।

৪. হরমোন থেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি।

সার্জারি: স্তন ক্যানসারের যে কোনো পর্যায়েই রোগীর সার্জারি করা প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারি করা যাবে কিনা বা কী ধরনের সার্জারি হবে তাই প্রাথমিক বিবেচ্য বিষয়। সিদ্ধান্ত নেবেন সার্জন এবং ক্যানসার বিশেষজ্ঞ দুজনে মিলে। অনেক সময় শুধু টিউমার কেটে ফেলা হয়। অনেক সময় পুরো বেস্টই ফেলে দেয়া হয়।

কেমোথেরাপি: প্রায় সব রোগীকেই কেমোথেরাপি নিতে হয়। সার্জারির আগে বা পরে এমনকি রোগ শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়লেও কেমোথেরাপি কাজ করে। যদিও কেমোথেরাপিতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তবুও রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য কেমোথেরাপির বিকল্প নেই। রোগীর শারীরিক অবস্থা, কেমোথেরাপির কার্যকারিতা, রোগীর আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়েই ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা উপযুক্ত পরামর্শ দেন। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাতে কম হয় তারও ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকরা।

রেডিওথেরাপি: বিশেষ ধরনের মেশিনের মাধ্যমে রোগীদের রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সাধারণ কেমোথেরাপির পরই রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। শুধু স্তনে এ নয়, যদি ক্যানসার পড়ে তাহলেও সেখানে রেডিও থেরাপি দিয়ে হাড়ের ভাঙন বা ফ্র্যাকচার রোধ করা যায়।

হরমোন থেরাপি: সব ব্রেস্ট ক্যানসারের রোগীর জন্য হরমোনের দরকার নেই। ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই হরমোনের চিকিৎসা কাদের লাগবে তা শনাক্ত করেন।

টার্গেটেড থেরাপি: এ থেরাপি রোগীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। যেমন- Transtyuumab, Lapatinib, Bevacizumab ইত্যাদি।

করণীয়: ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য Breast Cancer Screening জরুরি। ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে সবারই জানা উচিত এবং এই program-এর আওতায় আসা উচিত। তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়বে এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হবে।

আমাদের সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন হলে (যা ক্যানসার রোগের কারণ) এ রোগের প্রকোপ অনেকাংশেই কমে আসবে এবং আমাদের সমাজে সুস্থ-সুন্দর জীবনের অধিকারী মানুষের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।

যারা স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছেন

বয়স্ক নারী, যাদের স্তন ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস আছে, যেসব নারীরা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাননি BRCA-1, BRCA-2 নামক জিনের মিউটেশনের কারণে, অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে মাসিক বন্ধ হওয়া, মদ্যপান করলে, স্তনের কিছু অসুখ যেমন atypical ductal বা lobular hyperplasia থাকলে। এছাড়া অন্য কোনো ক্যানসার যেমন- কোলন, ডিম্বাশয়ে ক্যানসার হলে।

এই রোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা, এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।