News update
  • Spirit of Amar Ekushey helped wage July uprising: CA Yunus     |     
  • Singer Sabina Yasmin in HDU     |     
  • Tk5.63 bn Muhuri Irrigation Project fails to deliver, farmers at bay     |     
  • UNRWA Situation Report #157 on Crisis in Gaza and West Bank     |     
  • UNRWA rejects assertion, West Bank installations terror hubs     |     

শ্বেতী রোগ কি ছোঁয়াচে, এটি কি নিরাময়যোগ্য অসুখ?

বিবিসি নিউজ বাংলা স্বাস্থ্য 2025-02-02, 11:44am

rewreq-16b24353b8eada15c42b70253e1c02351738475050.jpg




দৈনন্দিন জীবনে আশপাশে আমরা প্রায়ই এমন কিছু মানুষকে দেখি, যাদের ত্বক অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তাদের অনেকের ত্বকের আসল রঙের মাঝে ছোপ ছোপ দুধ-সাদা রঙ দেখা যায়।

ত্বকের রঙের এমন তারতম্য মূলত ত্বকের একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যার নাম শ্বেতী বা ধবল রোগ।

এই রোগকে ইংরেজিতে বলে লিউকোডারমা বা ভিটিলিগো।

অনেকেই মনে করেন, শ্বেতী রোগ ছোঁয়াচে ও অভিশপ্ত। তাই সাধারণ মানুষ এই রোগীদের দেখলে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে চান।

সাধারণ মানুষ যেহেতু শ্বেতী রোগীদেরকে এমন চোখে দেখেন, তাই এই রোগীরা নিজেদেরকে নিয়ে সবসময় এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগেন; মানসিক অবসাদ তাদের নিত্যসঙ্গী।

এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো যে শ্বেতী রোগ আদৌ ছোয়াঁচে কী না।

এটি কাদের হয়, কেন হয়, কোন বয়সে বেশি হয়, এর চিকিৎসা কী ইত্যাদি নানা প্রশ্নের উত্তরও এখানে থাকবে।

শ্বেতী রোগের জন্য মেলানিনের অভাব দায়ী?

ত্বকের যেসব পরিচিত রোগ আছে, তার মধ্যে শ্বেতী রোগ অন্যতম। এই রোগে যখন কেউ আক্রান্ত হয়, তখন আক্রান্ত স্থানটি সাদা হয়ে ত্বকের স্বাভাবিক রঙ বা পিগমেন্টেশন নষ্ট হয়ে যায়।

আমাদের ত্বকে মেলানোসাইট নামক একটি কোষ আছে, যার কাজ হচ্ছে মেলানিন উৎপাদন করা। এই মেলানিনের কারণেই আমাদের ত্বকের রঙে র্ফসা, বাদামী কিংবা অন্যান্য তারতম্য দেখা যায়।

যখন ত্বকের কোনও অংশের মেলানোসাইট কোষ ধ্বংস হয়ে যায়, তখন সেখানে মেলানিন উৎপন্ন হতে পারে না এবং মেলানিনের অভাবেই ওই অংশটি অনেকটা সাদা হয়ে যায়।

যুক্তরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ শ্বেতী রোগে আক্রান্ত।

জনসংখ্যা বিষয়ক অনলাইন ডেটাবেজ ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’ (ডব্লিউপিআর) অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৮০০ কোটিরও বেশি। সেই হিসাবে শ্বেতী রোগীর সংখ্যা আট কোটির বেশি।

বিশ্বব্যাপী ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ২৫শে জুন ‘ওয়ার্ল্ড ভিটিলিগো ডে’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

ভিটিলিগো ডে হিসাবে এই তারিখটিকে বেছে নেওয়ার কারণ মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী মাইকেল জ্যাকসন, যিনি ২০০৯ সালের ২৫শে জুন মৃত্যুবরণ করেন।

মাইকেল জ্যাকসন ১৯৬০ সালে জন্ম নিলেও ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই রোগ তার সঙ্গী ছিল।

শ্বেতী রোগের কারণ

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, শরীরে মেলানিনের উৎপাদন কেন বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্বেতী রোগ হয়, সেই বিষয়টি এখনও অজানা। তবে কয়েকটি বিষয়কে এই রোগের কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

প্রথমত, শরীরের 'ইমিউন সিস্টেম' বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের শরীরের বিভিন্ন সুস্থ কোষকে (মেলানোসাইট) ভুল করে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মনে করে। ইমিউন সিস্টেম তখন শরীরকে সুরক্ষিত করতে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে মেলানোসাইট কোষকে ধ্বংস করে।

আরেকটি কারণ হচ্ছে জিনগত পরিবর্তন। শরীরের ডিএনএ-তে (জেনেটিক মিউটেশন) কোনও পরিবর্তন এলে তা মেলানোসাইটসের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক বলছে, ৩০ টিরও বেশি জিন রয়েছে, যা ভিটিলিগো বা শ্বেতী রোগ হওয়ার ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তাও এই রোগের অন্যতম কারণ। কেউ ক্রমাগত মানসিক বা শারীরিক চাপে থাকলে মেলানোসাইট কোষগুলোর মেলানিন উৎপাদনের পরিমাণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বিশেষ করে, কোনও শারীরিক আঘাতের পর অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে এটির বেশ ঝুঁকি থাকে।

এছাড়া, অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ এবং বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকার কারণেও শরীরের মেলানোসাইট কোষগুলোর ক্রিয়াকলাপে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক এও জানিয়েছে যে বংশগত কারণেও শ্বেতী রোগ হতে পারে। দেখা গেছে, শতকরা ৩০ শতাংশ রোগী বংশানুক্রমে এতে আক্রান্ত হয়।

তবে কারণ যেটাই হোক, এটি কোনও সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ নয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা এনএইচএস ও ক্লিভক্যান্ড ক্লিনিক।

ঝুঁকি বেশি যাদের

শ্বেতী রোগ জাতি, লিঙ্গ, বর্ণ নির্বিশেষে যে কারও যেকোনও বয়সে হতে পারে।

তবে যাদের ত্বক কালো বা বাদামী, অর্থাৎ গাঢ় রঙ, তাদের ক্ষেত্রে ত্বকের ছোপ ছোপ সাদা অংশ বেশি দৃশ্যমান।

এক্ষেত্রে সাধারণত ৩০ বছর বয়সের আগেই রঙহীন বা সাদা ত্বক (ম্যাকিউলস) সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

তবে, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক বলছে, কেউ যদি আগে থেকেই অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত থাকে, তাদের ক্ষেত্রে শ্বেতী রোগ হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে।

যেমন - হরমোন উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এডিসন’স ডিজিজ, এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, থাইরয়েড, ইত্যাদি।

এছাড়া, সন্তান জন্মদানের পর শরীরের কোনও হরমোনাল পরিবর্তন হলে, কারও লিভার বা কিডনিতে সমস্যা থাকলে এবং মেলানোমা (ত্বকের ক্যান্সার) হলে শ্বেতী রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে এনএইচএস।

শ্বেতী রোগের লক্ষণ

এনএইচএস ও ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক অনুযায়ী, শরীরের যে কোনও অংশের ত্বক শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

তবে সাধারণত ঠোঁট, চোখ, আঙ্গুল, হাতের কব্জি, পায়ের পাতা, বগল, যৌনাঙ্গ, নিতম্ব ও মুখের ভেতরের অংশে বা নাকের দুই পাশে এটি বেশি ছড়িয়ে পড়ে।

কখনও কখনও চুলের গোড়ায়, যেমন মাথার ত্বকে, দাড়ি কিংবা ভ্রুতেও এটি দেখা দিতে পারে।

এনএইচএস বলছে, শুরুতে আক্রান্ত ত্বকে ফ্যাকাশে ছোপ ছোপ দাগ হয়। তারপর তা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায়।

আক্রান্ত অংশের কেন্দ্র সাদা ও তার চারপাশ ফ্যাকাশে, এমনটাও থাকতে পারে। তবে আক্রান্ত ত্বকের নীচ দিয়ে যদি কোনও রক্তনালী যায়, তবে তা সাদা না হয়ে সামান্য গোলাপি হতে পারে।

এখন কার ত্বক কতটুকু বিবর্ণ হয়, তা আন্দাজ করার কোনও উপায় নেই। ত্বকের যে অংশ সাদা হয়, সেটিকে ম্যাকিউলস বা প্যাচ বলে। কারও কারও কেবল কয়েকটি ছোট প্যাচ হয়, খুব বেশি ছড়ায় না।

আবার, কারও কারও ক্ষেত্রে ত্বকের অনেক অংশ জুড়ে প্যাচ হয় বা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

শ্বেতী রোগ ত্বকে শুষ্কতার মত অস্বস্তি সৃষ্টি করে না। তবে মাঝে মাঝে প্যাচগুলো চুলকাতে পারে।

তবে ত্বকে প্যাচ হলেই তাকে শ্বেতী রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। কারণ অন্য রোগের কারণেও শরীরের ত্বক সাদা হতে পারে।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, শ্বেতী রোগের ক্ষেত্রে প্যাচগুলো এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় হয়। অথবা, কারও শ্বেতী রোগ থাকলে শরীরের যেসব আক্রান্ত স্থানে চুল আছে, তা সাদা বা রূপালি হয়ে যেতে পারে।

তাই, এইসব লক্ষণ দেখা দিলে সবার আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারে।

চিকিৎসা কী?

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক অনুযায়ী, শ্বেতী রোগের জন্য চিকিৎসা অত্যাবশ্যক না। কিন্তু এই রোগ যদি খুব বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগী যদি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন, তাহলে তিনি চিকিৎসা নিতে পারেন।

যদিও ত্বকের এই সাদা প্যাচগুলো ‘সাধারণত স্থায়ী’ হয় বলে জানিয়েছে এনএইচএস। অর্থাৎ, এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য না। কিন্তু এটি যাতে কম স্পষ্ট হয়, সেজন্য চিকিৎসা আছে।

ত্বকের রঙ ফিরিয়ে আনার জন্য চিকিৎসক স্টেরয়েড ক্রিম দিতে পারেন। কিন্তু সেই ক্রিমের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারে ত্বকে ‘স্ট্রেচ মার্ক’ পড়তে পারে এবং ত্বকের আবরণ পাতলা হয়ে যেতে পারে।

আর স্টেরয়েড ক্রিম যদি কাজ না করে, তাহলে লাইট থেরাপি বা ফটোথেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, এখন শ্বেতী রোগের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারও করা হয়।

কিন্তু চিকিৎসা করলে সাময়িকভাবে ত্বকের রঙ ফিরে পাওয়া গেলেও এর প্রভাব স্থায়ী না এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এর ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করা যায় না বলে জানিয়েছে এনএইচএস।

যেহেতু শ্বেতী রোগ নিরাময় করার কোনও নিশ্চিত উপায় নেই, তাই এই রোগের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য কয়েকটি বিষয় রপ্ত করার পরামর্শ দিয়েছে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক।

সেগুলো হলঃ সূর্যের আলোতে নিরাপদে যাওয়ার অভ্যাস করা, ত্বকে দৈনিক ভালো কোনও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা, মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা এবং শরীরে কোনও অটোইমিউন ডিজিজ বা স্বতঃঅনাক্রম্য রোগ থাকলে তার চিকিৎসা করা।