News update
  • Putin claims Russian forces halting Ukrainian counteroffensive     |     
  • Children lost for 40 days in Colombian Amazon found alive     |     
  • 408 killed in 491 road accidents in May     |     
  • S Alam Power Plant shuts down due to coal shortage     |     
  • DGHS issues comprehensive instructions to prevent dengue outbreak     |     

ঝিনাইদহের কৃষক ইমদাদুলের উদ্ভাবিত সম্ভাবনাময় ধান জিয়া-৮৬

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি error 2022-05-14, 8:35am

jhenaidah-imdadul-haque-invented-new-varieties-rice-photo-74c78f868d54a957e82f2e59620e28661652495707.jpg




এক জাতের ধানের সাথে অন্য জাতের পরাগয়ানের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নয়ন করা হয়েছে নতুন জাতের ধান। এবারই প্রথম ইরি বোরো মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে এই ধান বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে। নতুন জাতের এ ধান ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে ৩৫ থেকে ৩৭ মন ফলনের আশা করা হচ্ছে। নতুন জাতের এ ধানের নাম রাখা হয়েছে জিয়া-৮৬। এ ধানের উদ্ভাবক ইমদাদুল হক ইন্তা নামের এক কৃষক। 

ইমদাদুল হক ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মেগুরখিদ্দা গ্রামের মৃত আবুল হোসেন মন্ডলের ছেলে। কৃষক ইমদাদুল হক এক সময় পেশায় সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী ছিলেন। বর্তমানে তিনি কৃষি কাজ করছেন। 

এর আগে কৃষক ইমদাদুল হক বিজাতীয় এক ধানের সাথে দেশি বাসমতি ধানের পরাগায়নের মাধ্যমে তোহামনি নামে নতুন জাতের এক ধানের উন্নয়ন ঘটান। সেই ধান ইরি ও আমন মৌসুমে চাষ করে আশাতিত ফলন পান। তার নতুন জাতের তোহামনি ধান এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের মধ্যে হৈচৈ ফেলে দেয়। 

ইমদাদুলের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি ইরি মৌসুমে ৭৫ শতক জমিতে নতুন জাতের জিয়া-৮৬ ধান চাষ করেছেন। জমির প্রতি গোছে ১৬ থেকে ২৫টি শীষ রয়েছে। প্রতি শীষে ৩০০ থেকে ৫০০ ধান রয়েছে। এরমধ্যে ৫০ থেকে ৬০ টি অপুষ্ট। যেখানে মাঠে চাষ হওয়া চাষ হওয়া অন্য জাতের ধানে অপুষ্টসহ ২২০ থেকে ৩০০টি ধান হয়ে থাকে। নতুন জাতের এ ধান গাছের উচ্চতা গড় ৩৬ ইি । ইরি মৌমুমে এই ধানের জীবনকাল ১৫০ এবং আমন মৌসুমে ১২৫ দিন। ইমদাদুলের ধানের আকার ছোট চিকন। 

প্রতিবেশি বাদশা নামে অপর এক কৃষক ১৬ শতক জমিতে নতুন জাতের এই ধান চাষ করেছেন। তার জমিতেও আশাতিত ফলন হবে বলে বলছেন কৃষকরা।

কিন্তু স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম না মেনে কৃষক পর্যায়ে পরাগয়ানের মাধ্যমে ধানের জাত পরিবর্তন একেবারেই অসম্ভব। ধানের জাত উন্নয়ন করতে হলে বৈজ্ঞানিক কিছু প্রক্রিয়া আছে যা ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হয়।

কৃষক ইমদাদুল হকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের কথা। আমার নিজের প্রচেষ্টায় নির্বাচিত নতুন জাতের ধান তোহামনির সাথে বাসমতির পরাগায়নের মাধ্যমে নতুন এই জাতের উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। প্রথম বছর চার গোন্ডা জমিতে তোহামনি ও দেশিয় বাসমতি ধানের পরাগায়ন করে বীজ সংগ্রহ করি। ২০১৯ ও ২০২০ সালে একই পদ্ধতিতে পরাগায়ন করা হয়। এরপর ২০২১ সালে আমন মৌসুমে পাঁচ শতক জমিতে পরীক্ষামুলক রোপন করা হয়। সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে চলতি ইরি মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে চাষ করা হয়েছে। আশানুরুপ ফলনও হয়েছে। যে ফলন হয়েছে ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে ৩৫ থেকে ৩৭ মন ধান পাওয়া যাবে। মাঠে চাষ হওয়া অন্য ধানের থেকে আমার ধানের শীষ বড় এবং ধানও বেশি। 

গ্রমের প্রতিবেশি কৃষক সুজা উদ্দীন মাহমুদ পিয়াল জানান, কয়েক বছর ধরে ইমদাদুল হক নিজ প্রচেষ্টায় ধানের জাত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। এলাকার অনেকে তাকে ধান গবেষক বলে রহস্য করেন, কেউ আবার পাগলও বলে। কিন্তু গেল ইরি ও আমন মৌসুমে তার উদ্ভাবিত তোহামনি ধান দেখে সবাই অবাক। এবার আরো একটি নতুন জাতের ধান জিয়া-৮৬ চাষ করেছে। গাছে যে ধান রয়েছে, তাতে আশাতিত ফলন হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন সবাই তার জমিতে ধান দেখতে আসছে। ধান বীজ নেওয়া জন্য সবাই এখন  হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস অফিসার শিকদার মোঃ মোহায়মেন আক্তার জানান, আমি তার নির্বাচিত নতুন ধানের বিষয়টি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধমে জেনেছি। কৃষক ইমদাদ যদি বীজ দেয় তাহলে আমরা বিভিন্ন এলাকার মাটিতে চাষ করে দেখতে পারি ফলন কেমন হয়। তার পর সেটা কৃষক পর্যায়ে চাষের জন্য বলা যেতে পারে। তবে তার নির্বাচিত নতুন জাতের এই ধানের জমিতে নিয়ম মেনে চারা রোপন বা সার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা জানি না। তারপরও তার ধান চাষ সন্তোষজনক। কিন্তু জাত উন্নয়নের দাবি নিয়ে কিছু বলতে পারবো না। বাংলাদেশ কৃষি ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা আছেন, নিয়ম মেনে চাষ করলে তারা পরবর্তি মৌসুমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলতে পারবেন জাত উন্নয়ন হয়েছে কিনা বা আদৌ জাত উন্নয়ন সম্ভব কি না। তবে তার চাষে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব সময় খোজখবর রাখা হচ্ছে এবং আর্থিক ও প্রযুক্তিসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হয় বলে যোগ করেন কৃষি অফিসার শিকদার মোঃ মোহায়মেন আক্তার।