প্রচলিত আছে নরসুন্দা নদী ঘিরে গড়ে ওঠে কিশোরগঞ্জ শহর। এ নদী দিয়েই পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্ধুর থেকে করিমগঞ্জে জঙ্গলবাড়ির নৌবিহারে এসেছিলেন ঈশা খাঁ। একসময় অর্থনীতি ও বাণিজ্যিকভাবে নদীর গুরুত্ব থাকলেও কালের বিবর্তনে হারিয়েছে যশ। এখন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ১৯৮০ সালে হোসেনপুর উপজেলার কাওনা নামক স্থানে বাঁধ দেয়ার পর থেকেই মৃতপ্রায় নরসুন্দা। দূষণের কবলে পড়ে হারিয়েছে তার সৌন্দর্য।
সীমাহীন অযত্ন-অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় কিশোরগঞ্জ শহরের প্রাণ নরসুন্দা নদী এখন দখল-দূষণ ও ভরাটের মহোৎসবে বিপন্ন। এক শ্রেণির অপরিণামদর্শী লোকজনের দখল-ভরাটে যেন ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নদীটি। দ্রুত পূর্ণ খনন কাজের পাশাপাশি অবৈধ দখলমুক্ত করে নদীটিকে বাঁচিয়ে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার আকুতি স্থানীয়দের। হোসেনপুর ও ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত দেশের অন্যতম বৃহত্তম নদ ব্রহ্মপুত্র থেকে নরসুন্দা নদীর উৎপত্তি।
নদীটি হোসেনপুর থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের মাঝপথ দিয়ে করিমগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে ৯৭ কিলোমিটার পথ বহমান থেকে করিমগঞ্জে গিয়ে ধনু নদীতে গিয়ে পড়েছে। নদী রক্ষায় ২০১২ সালে তৎকালীন সরকার এগিয়ে আসলেও রয়েছে স্থানীয়দের নানা অভিযোগ। এক যুগ পার হলেও দৃশ্যমান হয়নি ১১০ কোটি টাকার প্রকল্পের কোনো কাজ। পানি প্রবাহে ৩৩ কিলোমিটার নদী খনন করা হলেও মেলেনি সুফল।
শিক্ষার্থীরা বলেন, যেই নরসুন্দার ইতিহাস পড়েছি, বাবা-দাদাদের মুখে শুনেছি নরসুন্দার বুকে মালবাহী নৌকা যেত সেই নরসুন্দাকে দেখতে চাই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তারা যেন আবার প্রথম থেকে নদীটিকে খনন করে নাব্যতার ধারা ফিরিয়ে আনে। ময়লা আবর্জনায় নদী ভরাট হয়ে গেছে। নরসুন্দা নদীকে উদ্ধার করা হোক। আমাদের প্রাণের নরসুন্দাকে ফিরে পেতে চাই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংগীত শিল্পী আবুল হাসেম বলেন, ছোট সময় এই নরসুন্দা নদীতে সাঁতার কেটেছি। নৌকা দিয়ে হাওর অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষজন সিনেমা, নাটক, দোলন, সার্কাস দেখতে এসেছে। এই নরসুন্দাকে ঘিরে একটা অন্যরকম আনন্দ ছিল। নরসুন্দা মৃত হওয়ার কারণে বাণিজ্যেও বিরাট স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নদী পথে ভৈরব ও অন্যান্য এলাকায় ক্রয় করতে যেত এখন সব বন্ধ। দ্রুত খনন করে আবারও নদীর সেই রুপ ও যৌবন ফিরিয়ে আনা হোক।
পরিবেশবাদীদের সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, হোসেনপুর উপজেলার মূল ব্রক্ষ্মপুত্রের সংযোগস্থলে কাওনার বাঁধ আছে। সেখানে বাঁধ দিয়ে নদীটিকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি নদীর পানি প্রবাহের যে পথ ছিল সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এ কারণে নদীটি আজকে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের দাবি সিএস মূলে মূল সীমানা নির্ধারিত করা হোক। নদীটিকে খননের মাধ্যমে তার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া হোক। দ্রুত পুনঃখনন কাজের পাশাপাশি অবৈধ দখলমুক্ত করে নদীটি বাঁচাতে না পারলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নরসুন্দা নদীটি পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে একটি সমীক্ষা প্রকল্প চলমান রয়েছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলের পরই কাজ শুরু হবে। আশা করছি জুনের মধ্যে আমাদের কাছে সমীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
আরটিভি