বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বার্ধক্যজনিত ও নানা রোগে ৯৩ বছর বয়সে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সনজীদা খাতুনের পরিবারের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের মেয়ে সনজীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল।
তিনি কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে ১৯৭৮ সালে সেখান থেকেই তিনি পিএইচডি করেন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে তিনি অবসর নেন।
সনজীদা খাতুনের লেখার এক বড় অংশ জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্যাপক পরিসরে জনমানসে কবিগুরুকে পৌঁছে দেওয়ার কাজে ঐতিহাসিক ভূমিকায় ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট’ গড়ে তোলার অনন্য কারিগরও তিনি।
শুদ্ধ সংগীতের চর্চার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন সনজীদা খাতুন, তখন ‘মিনু আপা’ নামে সহযোদ্ধাদের কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি।
সনজীদা খাতুন রচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’, ‘রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে’, ‘রবীন্দ্রনাথ: তার আকাশ ভরা কোলে’, ‘রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান’, ‘তোমারি ঝরনাতলার নির্জনে’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য’, ‘রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত: মননে লালনে’, ‘রবীন্দ্র-বিশ্বাসে মানব-অভ্যুদয়’। রবীন্দ্র বিষয়ক তাঁর সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে আছে ‘রইল তাহার বাণী: রইল ভরা সুরে’, ‘গীতবিতান: তথ্য ও ভাবসন্ধান’, ‘সার্ধশততম জন্মবর্ষে রবীন্দ্রনাথ’।
একাধারে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ এবং শিক্ষক সনজীদা খাতুন রবীন্দ্র চর্চা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রসারে অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত।
এশিয়াটিক সোসাইটির সাম্মানিক ফেলো সনজীদা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার, বিশ্বভারতী প্রবর্তিত দেশিকোত্তম সম্মাননায় ভূষিত হন।
তাছাড়া ২০২৩ সালে ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত হন তিনি।আরটিভি/