বিশ্বের মহাসাগরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতিসংঘ সম্মেলন আজ শুক্রবার (১৩ জুন) শেষ হচ্ছে। পাঁচ দিনের এই আয়োজনে গভীর সমুদ্র খনন নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জলসীমায় সংরক্ষণ উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। তবে ছোট দ্বীপ-রাষ্ট্রগুলোর জন্য বড় আর্থিক প্রতিশ্রুতি না দেওয়া ও এজেন্ডা থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসঙ্গ বাদ পড়ায় অনেক প্রতিনিধি হতাশা প্রকাশ করেছেন। খবর এএফপির।
স্বাগতিক ফ্রান্সের নিস শহরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, হাজার হাজার বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও সামুদ্রিক সংরক্ষণকর্মীরা অংশ নেন। এটি জাতিসংঘের আওতায় তৃতীয়বারের মতো মহাসাগর বিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন ও এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় আয়োজন।
সংরক্ষণ উদ্যোগ ও ‘উচ্চ সাগর চুক্তি’
সম্মেলনে কোলোম্বিয়া, গ্রিস ও সামোয়ার মতো বেশ কিছু দেশ নতুন সামুদ্রিক উদ্যান ও সংরক্ষিত এলাকা তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। কেউ কেউ বটম ট্রলিং পদ্ধতির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যেটি ডেভিড অ্যাটেনবরোর একটি ভাইরাল প্রামাণ্যচিত্রে ভয়াবহ রূপে উপস্থাপিত হয়েছিল। পরিবেশবাদীরা আন্তর্জাতিক জলসীমার ৬০ শতাংশ অংশে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটি ঐতিহাসিক চুক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টার জন্য সম্মেলনকে সাধুবাদ জানিয়েছে
ফ্রান্স এই সম্মেলনে ‘উচ্চ সাগর চুক্তি’ কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০টি অনুসমর্থন পাওয়ার আশায় ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ৫১টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করেছে, যা হাই সিজ অ্যালায়েন্সের রেবেকা হাবার্ডের মতে সমুদ্র রক্ষায় একটি বড় অগ্রগতি। তিনি এই অসাধারণ অগ্রগতিকে উদযাপন করার পাশাপাশি বাকি দেশগুলোকে অবিলম্বে অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্লাস্টিক দূষণ ও গভীর সমুদ্র খনন বিতর্ক
সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন বিশ্ব প্লাস্টিক দূষণ এবং সাগর তলদেশে খনিজ অনুসন্ধান বিষয়ে বৈশ্বিক নিয়মনীতি নির্ধারণে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। নিসে ৯০টির বেশি দেশের মন্ত্রীরা এক প্রতীকী বিবৃতিতে আগামী আগস্টে আবার শুরু হতে যাওয়া আলোচনায় একটি শক্তিশালী প্লাস্টিক চুক্তির পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
সম্মেলনে বিজ্ঞান ও নীতিনির্ভর ব্যবস্থাপনার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়, বিশেষ করে অজানা সাগরতলের সম্পদ ব্যবস্থাপনায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন একতরফাভাবে গভীর সমুদ্র খনন দ্রুত শুরুর চেষ্টা চালাচ্ছেন, তখন নেতারা এমন অন্ধ দৌড় প্রতিহত করতে বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আন্তর্জাতিক সিবেড অথরিটি আগামী জুলাইয়ে বৈঠক করবে।
গ্রিনপিসের ফ্রাঁসোয়া শার্তিয়ে এএফপিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পর নেতৃত্বদের বক্তব্যে কঠোরতা এসেছে। তবে সম্মেলনে খুব কম দেশই সাগরতলে খনিজ অনুসন্ধানে বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা বা বিরতির আহ্বানে নাম লেখায়, যা শার্তিয়েকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করতে বাধ্য করেছে।
আর্থিক প্রতিশ্রুতি ও জীবাশ্ম জ্বালানির অনুপস্থিতি
জলবায়ু পরিবর্তন, অতিমাছ ধরা ও সামুদ্রিক দূষণের সম্মুখীন ছোট দ্বীপ-রাষ্ট্রগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও ধনী দেশগুলোর তরফ থেকে নতুন আর্থিক প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।
সম্মেলন শেষে আজ শুক্রবার একটি যৌথ রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়া হবে, যেটিকে সমালোচকেরা দুর্বল বলে মনে করছেন, কারণ এতে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসঙ্গ নেই—অথচ এটিই সমুদ্র উষ্ণতার মূল কারণ। সামুদ্রিক সংরক্ষণ সংস্থা ওশানকেয়ার বলেছে, এই সম্মেলন ‘আরেকটি সদিচ্ছাসম্পন্ন কিন্তু ফাঁপা ঘোষণায়’ শেষ হওয়া উচিত নয়। তারা বলেছে, ‘বিজ্ঞান স্পষ্ট। পথও স্পষ্ট। অনুপস্থিত শুধু প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাস্তবায়ন।’