জলবায়ু সংকট নিয়ে এক বার্তা ছড়িয়ে দিতে লাইফসাইজ কার্ডবোর্ড প্রাণীরা মধ্য আফ্রিকা থেকে উত্তর ইউরোপ যাত্রা করেছে। লাইফসাইজের কিছু পুতুল সতর্কবার্তা দিচ্ছে। জলবায়ু সংকট এবং তার প্রভাব নিয়ে আমাদের সতর্ক করতে তারা বিশ হাজার কিলোমিটারের এক লম্বা যাত্রা করছেদ্য হার্ডস নামের এই শিল্প প্রকল্প।
দ্য হার্ডস-এর শৈল্পিক পরিচালক আমির নিজার জুয়াবি বলেন, আমি মনে করি না, আমাদের সচেতনতা দরকার। সবাই জানে কী হচ্ছে। আমি মনে করি, আমাদের যত্ন দরকার। আমরা যে বিশ্বে বসবাস করি, সেই বিশ্ব, প্রকৃতি যা আমরা হারাতে চলেছি, সেসবের প্রতি মানুষকে আরো যত্নশীল করার চেষ্টা করছি। আমরা যে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে আছি তার জন্য আমাদের চড়া মূল্য চুকাতে হবে।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো থেকে দ্য হার্ডস-এর যাত্রা শুরু হয়। এটি আফ্রিকা এবং ইউরোপ পেরিয়ে আগস্টে আর্কটিক সার্কেলে পৌঁছায়। লন্ডনে হার্ডস এক বিস্ময়কর প্রদর্শনী উপহার দেয়। যাত্রাপথে সেগুলো কিং চার্লসেরও দেখা পায়। এগুলোর মূল নকশাকারকেরা দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের উকোয়ান্ডা পাপেটস এবং ডিজাইন আর্টস কালেক্টিভ-এর। যাত্রা পথে তারা রাখালের ভূমিকায় ছিলেন।
নকশাকার এবং পুতুলনাচের কারিগর সিফোকাজি এমপোফু বলেন, আমি এই প্রকল্প নিয়ে বলতে গেলে মাঝে মাঝে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। কারণ আমরা জানতাম না যে, একদিন উকোয়ান্ডা এই পুতুলগুলোর নকশা করবে, যেগুলো বিশ্বের জন্য উল্লেখযোগ্য হবে। এবং এখন সবাই আমাদের কথা বলছে। শুধু পুতুল কথাই নয়, আমরা যে সমস্যা মোকাবেলা করছি ঠিক সেই সমস্যা সম্পর্কেও। এমনকি যদি লন্ডনেও ২০ জন মানুষ কিছু একটা করবেন, যাতে তারা আমরা কী করছি সেই বার্তা পান।
যতটা সম্ভব বাস্তবটির আদলে তৈরি এসব পুতুল নকশা করতে কয়েকমাস লেগেছে। পুনর্ব্যবহৃত কার্ডবোর্ড এবং প্লাইউড দিয়ে এসব তৈরি করা হয়েছে। প্রাণীগুলোর মতো, এসব উপাদানের প্রতিও তারা অসহায়। যাত্রাপথে পড়া প্রত্যেক শহরে একদল নতুন পুতুলনাচের খেলোয়াড়কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আর এটা করতে অল্প কয়েকদিন পাওয়া যায়। পুতুলনাচের জাদুর জন্য একটি বিশেষ দক্ষতা থাকতে হবে।
সিফোকাজি এমপোফু বলেন, প্রাণীদের শ্বাস নিতে হয়। আর আপনি সেটা সহজেই মানুষকে দেখাতে পারেন না বা এই প্রাণী খেতে পারে। শ্বাসপ্রশ্বাস হচ্ছে পুতুলনাচের ভাষা। সুতরাং একেবারে শুরুতে যারা যা করতে পারে, তা হচ্ছে শ্বাস নেয়া... শ্বাস নেয়ার ব্যাপারটা আমার কাছ থেকে আসে... আমিই সে, যে জীবন দিচ্ছি।
এক হিসেবে অনুযায়ী, সবচেয়ে ভয়াবহ যা ঘটতে পারে তা হচ্ছে ২০৫০ সাল নাগাদ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন জলবায়ু শরণার্থী তৈরি হবে। দ্য হার্ডস প্রচারণা এই ভয়াবহতা এড়াতে উদ্যোগ নিতে বলছে।
শৈল্পিক পরিচালক আমির নিজার জুয়াবি বলেন, আমি জলবায়ু সংকট থামাবো না। আমি সরকার বদলাতে যাচ্ছি না। আমি অনেক কঠিন পৃষ্ঠে এক কণা জল মাত্র৷ কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমাদের এটা করতে হবে...। আমি আশা করি এটা কিছু একটার পুঞ্জীভূত আন্দোলন গড়ে তুলবে। আর এই কিছু একটা হচ্ছে যত্ন। দ্য হার্ডস মানুষকে বিস্মিত এবং উৎসাহিত করতে চায় যাতে তারা আসন্ন সংকট কাটাতে যতটা সম্ভব উদ্যোগী হয়।