News update
  • Bangladesh Faces $1.25 Billion Export Loss from US Tariffs     |     
  • Israel Expands Gaza Assault as UN Warns of ‘Genocide’     |     
  • World Ozone Day Highlights Progress and Future Action     |     
  • DG Health Services gives 12 directives to treat dengue cases     |     
  • Stock market shows recovery as investors back: DSE chairman     |     

সাত মাসেই ৪৫ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয়, কোনদিকে বাজার?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক Economy 2025-08-01, 7:46pm

gold-bars-9d2b039f34c40c1afcc3280dc16bbaad1754199662.jpg

Gold bars



চলতি বছরের শুরু থেকেই অস্থির স্বর্ণের বাজার। যার প্রভাবে প্রথম সাত মাসেই দাম সমন্বয় হয়েছে মোট ৪৫ বার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বজায় থাকলে দেশে দাম সমন্বয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি হতে পারে। তবে অস্থিরতা কমলে স্বস্তি ফিরতে পারে মূল্যবান এই ধাতুর দামে।

বিশ্ব অর্থনীতি এখন এক অস্বস্তিকর সমীকরণে আটকে আছে। মূল্যস্ফীতির চাপ, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, ডলারের দামের ওঠানামা, ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ নিয়ে নাটকীয়তা- সব মিলিয়ে বাজারজুড়ে অনিশ্চয়তা। এই পটভূমিতে স্বর্ণ আবারও উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

এর প্রভাবে চলতি বছরের শুরু থেকেই অস্থির স্বর্ণের বিশ্ববাজার। বর্তমানে স্বর্ণের প্রতি আউন্স দাম ৩২৮০ থেকে ৩৩৫০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করলেও গত এপ্রিলে এটি ছুঁয়েছিল রেকর্ড ৩ হাজার ৫০০ ডলারের মাইলফলক। বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছরের শেষ দিকে স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৭০০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। একইসঙ্গে এই প্রতিষ্ঠান বলেছে, স্বর্ণ এখন শুধু নিরাপদ নয়, বরং লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় হয়েছে মোট ৪৫ বার। যার মধ্যে দাম বেড়েছে ২৯ বার, বিপরীতে কমেছে মাত্র ১৬ বার। আর গত বছরের একই সময়ে মোট দাম সমন্বয় হয়েছিল মাত্র ৩২ বার।

চলতি বছর দাম সমন্বয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল বৃদ্ধির মাধ্যমেই। গত ১৫ জানুয়ারি ভরিতে ১ হাজার ১৫৫ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকায়। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ৭ দফায় বাড়ানো হয় স্বর্ণের দাম। যার মধ্যে গত ১, ৬, ১০,  ১৭ ও ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিবারই রেকর্ড ভেঙে দাম গড়েছে নতুন ইতিহাস। ২০ ফেব্রুয়ারি স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় রেকর্ড ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকায়।

তবে এরপর ২৩ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ১ মার্চ টানা ৩ দফায় কমে স্বর্ণের দাম। ৪ মার্চ ফের স্বর্ণের দাম বাড়লে ৮ মার্চ আবার কমানো হয় দাম। এরপর ১৬, ১৮, ২৫ ও ২৮ মার্চ টানা ৪ দফায় দাম বাড়ানো হয়। দাম গিয়ে ঠেকে ১ লাখ ৫৭ হাজার  ৮৭২ টাকায়।

এপ্রিলজুড়ে দাম সমন্বয় করা হয় ৯বার। যার মধ্যে ৬বার বাড়লেও, কমেছে মাত্র ৩ বার। ৮এপ্রিল দাম কমলেও ১০ ও ১২ এপ্রিল বাড়ানো হয় দাম। ১৩ এপ্রিল কমানো হয় দাম। তবে এরপর ১৬, ১৯, ২১ ও ২২ এপ্রিল টানা ৪ দফায় বাড়ানো হয় দাম। প্রতিবারই রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়ে স্বর্ণের দাম। যার মধ্যে গত ২২ এপ্রিল স্বর্ণের দাম ঠেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা, যা এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। তবে পরদিনই দেশে বড় পতন দেখে স্বর্ণের বাজার। কমানো হয় ৫ হাজার ৩৪২ টাকা।

মে মাসে দাম সমন্বয় করা হয় মোট ১০ বার। যার মধ্যে বাড়ানো হয় ৫ বার, আর কমে ৫ বার। গত ৩, ৮, ১০, ১২ ও ১৫ মে কমানো হয় দাম, আর বাড়ে ৫, ৬, ১৩, ১৭ ও ২১ মে। মাস শেষে দাম ঠেকে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯২১ টাকায়। আর গত জুন মাসে স্বর্ণের দাম বাড়ে ২ বার, আর কমেছেও ২ বার। এর মধ্যে গত ৫ ও ১৪ জুন বাড়ানো হয়েছিল দাম। আর কমানো হয়েছিল গত ২৪ ও ২৮ জুন। মাস শেষে দাম ঠেকে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৩৬ টাকায়।

আর সবশেষ চলতি মাসে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে মোট ৫ বার, যার মধ্যে দাম বেড়েছে ৩ বার, কমেছে ২ বার। সবশেষ গত ২৪ জুলাই দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সেদিন ভরিতে ১ হাজার ৫৭৪ টাকা কমিয়য়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০১ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠানামা করে স্বর্ণের দাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও দাম সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুদিন ধরেই স্বর্ণ ‘নিরাপদ আশ্রয়’ হিসেবে পরিচিত, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটিকে অনেকে ‘স্মার্ট ইনভেস্টমেন্ট’ হিসেবেও দেখছেন। কারণ এর চাহিদা যেমন স্থিতিশীল, তেমনি মূল্যও দীর্ঘমেয়াদে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন-এই বাজারেও ঝুঁকি আছে। যদি হঠাৎ করে বিশ্ব রাজনীতির অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যায়, বা যুক্তরাষ্ট্র সুদের হার বাড়িয়ে দেয়, তাহলে স্বর্ণের দামে হঠাৎ পতন ঘটতেও পারে।

বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মধ্যেই স্বর্ণের দাম ছাড়িয়ে যেতে পারে প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ডলার। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চলতি বছর প্রতি প্রান্তিকে গড় স্বর্ণ চাহিদা থাকতে পারে প্রায় ৭১০ টন, যা দামের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রাখতে সহায়ক। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের গড় দাম হতে পারে ৩ হাজার ৬৭৫ ডলার। তবে বাজার পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে আরও আগেই।

আর বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী জন পলসন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে স্বর্ণের দাম প্রায় প্রতি আউন্স ৫ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয় এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে সম্ভব হতে পারে।