Samuel Huq, general secretary, Biplane Workers Party addressing a press conference at the Solidarity Auditorium of the Party on Tuesday.
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তীতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১ দিনের কর্মসূচী ঘোষণা।
আজ সকালে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আহুত সংবাদ সম্মেলনে পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা সাইফুল হক বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন যত বিলম্বিত হলে দেশের বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ঝুঁকিও তত বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তাহীনতা নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দেশজুড়ে মব সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়া নতুন উৎকন্ঠার জন্ম দিয়েছে। সরকারের
অকার্যকারীতায় সামাজিক নৈরাজ্য দ্রুত রাজনৈতিক নৈরাজ্যের পথে বাঁক নিচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচনকে ঝুলিয়ে দিতে নানা অপতৎপরতা চলছে।পরিকল্পিত ভাবে এসব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বোঝাপড়ার সংবাদে রাজনৈতিক দলসহ জনগণের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি দেখা গেছে। সরকারের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর মনস্তাত্ত্বিক দূরত্বও খানিকটা কমেছে বলে ধারণা করা যায়।কিন্তু সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বৈঠকের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের সম্ভাব্য তফসিল নিয়ে কোন কথা বলতে পারেননি। এই পরিস্থিতি কাংখিত নয়।নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তফসিল মোটামুটি নির্বাচনের ৬০ দিন আগে ঘোষণা করার বিধান থাকলেও নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা দরকার ছিল। আশা করি নির্বাচন কমিশন এই সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে কথা বলবেন।
তিনি বলেন, গত একমাসে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আবার উদ্বেগ তৈরী হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিটাই অবান্তর। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বও নয়।গত ষোল বছর দেশের মানুষ নিশ্চয় স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেনি।
সাইফুল হক বলেন,বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনৈতিক দলসমূহে এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এখনও পি আর কখন পদ্ধতিতে ভোটের জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি।এ কারণে এবার কেবল আমরা সংসদের উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছি।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদী জমানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়া জোরদার করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে।নির্বাচনের আগে বিচারের উদ্যোগকে দেশবাসী দৃশ্যমান দেখতে চায়। আর সাংবিধানিক সংস্কার ছাড়া মতৈক্যের ভিত্তিতে বাকি সংস্কার সরকার নির্বাহী আদেশে এখুনি সম্পন্ন করতে পারে।তবে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সংসদের প্রয়োজন হবে, যাতে জনসম্মতির ভিত্তিতে তা সংবিধানে যুক্ত হতে পারে। আশা করি এই জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এই লক্ষ্যে জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করতে পারব।
তিনি এই পরিস্থিতি উত্তরণে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আস্থায় নিতে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জুলাই - আগস্ট ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ -অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তীতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১ দিনের কর্মসূচীও ঘোষণা করেন।কর্মসূচী নিম্নরুপ-
১। ১৬ জুলাই ২০২৫ শহীদ আবু সাঈদ, পার্টির দুই শহীদ বদিউজ্জামাল ও আবদুল লতিফসহ গণ- অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রংপুরে তিন শহীদের কবরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনসহ সারাদেশে শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সমাবেশ।
২। ১৮ জুলাই ২০২৫ ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ -অভ্যুত্থানের আকাংখ্যা বাস্তবায়নে শহীদ পরিবারসমূহ ও আহতদের নিয়ে ঢাকার আশুলিয়ায় শ্রমিক গণসমাবেশ।
৩। ২৫ জুলাই ২০২৫ নারায়নগঞ্জে গণ- অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারসহ গণ সমাবেশ।
৪। ২ আগস্ট ২০২৫ সকাল ১০ টায় সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে " গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তী - গণআকাংখ্যা বাস্তবায়নের পথ" শীর্ষক আলোচনা সভা।
৫। ৫ আগস্ট ২০২৫ গণ -অভ্যুত্থানের আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ অন্যান্য কর্মসূচী।
৬।এছাড়া গণ - অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তীতে পার্টির পোস্টার ও "ডাক দিয়ে যাই" শীর্ষক স্মরণিকা প্রকাশিত হবে।
এইসাথে তিনি গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারসমূহের পুনর্বাসন, আহতদের উপযুক্ত চিকিৎসা এবং তাদের পরিবারসমূহকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের জন্যেও দাবি জানান।
সেগুনবাগিচায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সংহতি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, সাইফুল ইসলাম, ফিরোজ আলী, কেন্দ্রীয় সংগঠক বাবর চৌধুরী, জামিরুল রহমান ডালিম প্রমুখ।