News update
  • Guterres Urges Leaders to Act as UNGA Week Begins     |     
  • BNP to go door to door for hearts and votes     |     
  • Chittagong port tariffs increased up to 50 per cent     |     
  • Rising Heat Cost Bangladesh $1.8 Billion in 2024     |     
  • Stocks extend gains; turnover drops in Dhaka, rises in Ctg     |     

বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল নিয়ে দিশেহারা মানুষ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2023-02-02, 6:53pm

images-59b514174bffe4ae402b3d63aad79fe01675342419.jpeg




দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের মানুষ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন গ্যাস ও বিদ্যুতের অতিরিক্ত দাম নিয়ে সংসারের হিসাব সমন্বয় করতে তারা গলদঘর্ম হচ্ছেন।

গত একবছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বহু পরিবারে শুধু বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল বাবদ খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ।

শহর ও গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, জিনিসপত্রের এরকম মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে।

নতুন চাপ বিদ্যুতের দাম

জানুয়ারি মাসে এক দফা বাড়ানোর পর ফেব্রুয়ারির এক তারিখ থেকেই আরেক দফা বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। ফলে শুধু আবাসিক বিদ্যুৎ বাবদ মাসিক খরচ ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে।

এর আগে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল ২০২০ সালের শুরুতে।

এখন সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হতে পারে।

ঢাকার বাসিন্দা শাহনাজ চৌধুরীর বলছেন, ‘’হিসাব করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, তাও মাসে বিল আসে দেড়- হাজার, দুই হাজার টাকা। টিভি, ফ্রিজ তো বন্ধ করেও রাখতে পারি না। এখন সরকার বিল আরও বাড়িয়েছি, কারেন্টের বিল তো আমার বাজেট ছাড়িয়ে যাবে।’’

ঢাকার কলাবাগানের এই বাসিন্দা বলছেন, নানারকম কাটছাঁট করার পরেও গত এক বছরে তার সাংসারিক খরচ দেড়গুণ বেড়ে গেছে। কারণ বাজারের প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে।

‘’এক বছর আগেও যে দামে আটা-চিনি কিনতাম, এখন তার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। চাল, ডাল, তেল- প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়েছে। আমাদের আয় তো সেই হিসাবে বাড়েনি। সংসারে আর কোন আইটেমটা বাদ দেবো? এদিকে ছেলেমেয়ের স্কুলের পড়ার খরচ বেড়েছে, যাতায়াত খরচ বেড়েছে, বাড়িভাড়া বেড়েছে,’’ তিনি বলছিলেন।

বাংলাদেশের সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, ভর্তুকি কমাতে এখন থেকে প্রতি মাসেই বিদ্যুৎ খরচ সমন্বয় করা হতে পারে।

শাহনাজ চৌধুরীর মতো অনেকের আশঙ্কা, বিদ্যুৎ চার্জ বাড়ার কারণে হয়তো এখন পানিসহ অন্যান্য খরচও বেড়ে যাবে।

শাহনাজ চৌধুরীর মতো বরগুনার বাসিন্দা লায়লা আঞ্জুমানের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে গ্যাসের সিলিন্ডার।

রাতারাতি বেড়ে গেছে গ্যাসের দাম

মাত্র এক সপ্তাহ আগেও ১২ কেজির যে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার তিনি ১৩০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন, দুইদিন আগে সেটাই তাকে কিনতে হয়েছে ১৭০০ টাকা দরে।

‘’কোন কারণ বুঝতে পারছি না। সরকারের নির্ধারিত দাম আছে তেরশোর নিচে, তাও সেটা দিতাম। এখন দোকানদাররা বলছে, ১৭০০ টাকার নিচে সিলিন্ডার নেই,’’ বলছিলেন লায়লা আঞ্জুমান।

এমনকি লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপি গ্যাসের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও বরাবরই অভিযোগ ওঠে যে, বাজারে এর চেয়ে অনেক বেশি দাম নেয়া হচ্ছে।

কিন্তু এখন এলপিজি গ্যাসের দাম যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে।

‘’সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। গ্যাসেরও দাম এমন বেড়েছে যে, এখন চাইলেই যে আলু সিদ্ধ করে খাবো, তারও উপায় নেই,’’ অনেকটা রসিকতা করেই তিনি বলছিলেন।

একটি এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আবু জাফর বলছেন, ‘’মার্কেটে সিলিন্ডারের সাপ্লাই কম আছে। কোম্পানি থেকে নাকি মাল আসছে না। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে বিক্রিও করতে হয় বেশি।‘’

শাহনাজ চৌধুরীর বাসায় প্রতিমাসে ১২ কেজির একটি এলপিজি সিলিন্ডারে ২০ থেকে ২২ দিন চলে। অর্থাৎ মাসে তাকে দেড়টা করে গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে হয়।

‘’মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে সিলিন্ডারের দাম চার/পাঁচশো টাকা বেড়ে গেছে। দেখার কেউ নাই। এখন আমাদের তো না কিনেও উপায় নেই, তাহলে রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে যাবে। এখন সংসারের আরেক খরচের কাটছাঁট করতে হবে,’’ তিনি বলছেন।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এর আগেই তিনি সংসারের বেশ কিছু খরচ বাদ দিয়েছেন।

‘’গত কয়েকমাসে শখের কোন জিনিসপত্র কিনিনি,তাহলেই বোঝেন কিভাবে সংসার চালাচ্ছি, ‘’ তিনি বলছেন।

তবে বাজারে এলপিজি গ্যাসের কোন সংকট নেই বলে বলেছেন বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সচিব ব্যারিস্টার মোঃ খলিলুর রহমান খান একটি পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমাদের কাছে গ্যাসের সংকটের কোন তথ্য নেই। বরং দেশে যথেষ্ট পরিমাণে এলপিজি মজুত আছে।

যদিও এলপিজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে আরও অনেক খাতের মতো ঋণপত্র খোলা নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন এলপিজি অপারেটরগুলো। বিশেষ করে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি সংকটে পড়েছে। এই কারণে সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা গিয়েছে। এই কারণে আগেভাগেই দাম বাড়াতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

'মানুষের কষ্ট বাড়ে'

বাংলাদেশে গত বছর রেকর্ড পরিমাণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর খাদ্যদ্রব্য, পরিবহন থেকে শুরু করে সব জিনিসপত্রের দাম একদফা বেড়েছে।

তার ওপর ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি নির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশে প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে, যার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সীমিত বা নিম্ন আয়ের আয়ের সাধারণ মানুষ।

মনোয়ারা বেগম তিনটা বাসায় কাজ করেন। এক বছর আগেও সেই আয়ে তার চলে যেতো। কিন্তু এখন আর তার পক্ষে কোনমতেই সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

‘’ডেইলি জিনিসের দাম বাড়ে, আমাদের বেতন তো ডেইলি বাড়ে না। মাছ, মাংস বাদ দিলাম, সবজি খাওয়াও তো কঠিন এখন। এই যে গ্যাসের দাম বাড়াইছে, বিদ্যুতের দাম বাড়াইছে, এখন তো আমাগো বাড়িঅলা ভাড়াও বাড়াবে। কয়দিন শহরে থাকতে পারবো জানি না’’ বলছিলেন মনোয়ারা বেগম।

তিন বাসায় কাজের ফাঁকে এখন তিনি টিসিবির গাড়ি থেকে পণ্য কেনার জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ রাখেন। বিকল্প হিসাবে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথাও ভাবছেন।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বেশি। তার সাথে সাথে যদি বিদ্যুতের, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়,তাহলে মানুষের কষ্ট বাড়ে এবং তাদের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।‘’

তিনি বলছেন, বিশেষ করে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সাথে অনেক কিছুর সম্পর্ক আছে। ফলে এসব জিনিসের যখন দাম বাড়ে, তখন অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়ে যায়।

‘’গত বছরের মূল্যস্ফীতির যে রিপোর্ট, তাতে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে, গত বছর যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হল, তখন থেকেই দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করেছে। জিনিসপত্রের দাম এমনভাবে বাড়ছে যে, মানুষ পাল্লা দিয়েও খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না।‘’ তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।