News update
  • Five Shariah Banks to Merge Into State-run Sammilito Islami Bank     |     
  • Dhaka’s air ‘unhealthy for sensitive groups’ Wednesday morning     |     
  • US proposes that the UN authorize a Gaza stabilization force for 2 years     |     
  • Democrat Zohran Mamdani is elected New York City mayor     |     
  • Martyr Mugdha's brother Snigdha steps into politics with BNP     |     

রেমিট্যান্সে সুবাতাস

গ্রীণওয়াচ ডেক্স অর্থনীতি 2024-01-03, 12:38pm

6-2312251752-549aea04e4ec5a065e5cee9241666a9e1704263900.jpg




একদিনে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দুই সূচকে সুখবর এসেছে। সূচক দুটি হচ্ছে—বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে একই মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৫৩০ কোটি ৮১ লাখ (৫.৩১ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। একক মাসের হিসাবে এই আয় এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি; আর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ (৬.৩৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার সকালে রেমিট্যান্সের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। বিকেলে রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি।

আর এই দুই সূচকে ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ আরও খানিকটা বেড়েছে। মঙ্গলবার দিন শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২৭ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক রিজার্ভের এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘রিজার্ভ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় ডলারের জোগান বেড়েছে; সংকট কেটে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ডলারের দর ১ টাকা কমেছে।’ সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসছে বলে মনে করেন মেজবাউল হক।

রেমিট্যান্স

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১৯৮ কোটি ৯৯ লাখ (প্রায় ২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের জুনে ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বরে আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।

ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

গত সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়।

কমতে শুরু করে রেমিট্যান্স। সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিট্যান্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে। এর পর থেকে অবশ্য রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।

দুই বছর পর গত বছরের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স—সব পর্যায়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা করে কমানোর ঘোষণা দেয় বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। ২৩ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

২৯ নভেম্বর আরও ২৫ পয়সা কমানো হয়। দুই সপ্তাহ পর ১৩ ডিসেম্বর আরও ২৫ পয়সা কমানোর ঘোষণা দেয় বাফেদা ও এবিবি। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর ১ টাকা কমানো হয়।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনছে ব্যাংকগুলো। আর আমদানি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ১১০ টাকা দরে বিক্রি করছে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সরকার রেমিট্যান্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি (১.৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নামে; আসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

রপ্তানি আয়

নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। অনেক দিন পর এক মাসে ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। বিদায়ী ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৫৩১ কোটি (৫.৩১ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। একক মাসের হিসাবে এই আয় এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি; আর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ (৬.৩৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল একক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ। ডিসেম্বর মাসে আগের মাস নভেম্বরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। নভেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৭৮ কোটি ৪৮ লাখ (৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল।

তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ১ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ কম আয় দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি কমার কারণ ওই বছরের ডিসেম্বরে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি (২৭.৫৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। মোট আয়ের ৮৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘নানা বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এখনও লেগে আছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন খাবারের পেছনে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে।’

‘এ অবস্থায় ডিসেম্বরে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আমাদের আশান্বিত করেছে। প্রতি বছরই ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় বাড়ে। এবারও তার ব্যতয় হয়নি। তবে আগামী দিনগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে কি না—চিন্তায় আছি আমরা।’

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর মধ্যে ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ (৫২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) তৈরি পোশাক থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে সব মিলিয়ে ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৭ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক থেকে। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।