News update
  • BNP Opposes Reforms to Constitution’s Core Principles      |     
  • Time to Repair Bangladesh–Pakistan Ties     |     
  • Dhaka’s air quality recorded ‘unhealthy’ Friday morning     |     
  • Dr Yunus proved impact of innovative economics: Peking Varsity Prof     |     
  • Alongside conflict, an info war is still happening in Gaza     |     

তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য আমেরিকার ‘বিকল্প’ বাজার খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2024-02-16, 6:23pm

kehruieyr-8bc3e6df012c8dd25d8e4f3b362d060b1708086331.jpg




বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের মূল উৎস তৈরি পোশাক খাত, যেখান থেকে বিজিএমইএ’র হিসেবে গেলো বছর এসেছে ৪৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এরমধ্যে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে আমেরিকা থেকে ৭.২৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও এই আয় আগের বছরের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। তবে আমেরিকায় ২৫ শতাংশ রপ্তানি কমে গেলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেনি বরং বেড়েছে।

কিন্তু সেটা কীভাবে ঘটলো অর্থাৎ বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা মার্কিন ঘাটতি কীভাবে পুষিয়ে নিলো?

আমেরিকায় রপ্তানি কত কমেছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোন দেশ কোন পণ্য কত রপ্তানি করছে ডলারের হিসেবে সেটা প্রকাশ করে দেশটির বাণিজ্য দপ্তরের ‘অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলস’ (অটেক্সা)।

সংস্থাটির হিসেবে দেখা যাচ্ছে ২০২২ সালে দেশটিতে বাংলাদেশে থেকে তৈরি পোশাক গেছে ৯.৭২ বিলিয়ন ডলার। যা এর আগের বছর অথাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। তবে এটা ঠিক কোভিড ১৯ পরবর্তী ২০২১ সালে রপ্তানি কম ছিল।

কিন্তু ২০২২ সালে ৯.৭২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হলেও ২০২৩ সালে সেটা না বেড়ে উল্টো কমেছে। ২০২৩ সালে রপ্তানি হয়েছে ৭.২৯ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং একবছরে রপ্তানি কমেছে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার বা ২৫ শতাংশ।

কিন্তু আমেরিকার মতো বড় বাজারে রপ্তানি কমে যাওয়ার পরও সেটা বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানিকে নেতিবাচক করতে পারেনি, বরং ইতিবাচক হয়েছে।

মার্কিন ঘাটতি যেভাবে পুষিয়ে নিয়েছে তৈরি পোশাক খাত

এখানে মূল ভূমিকা রেখেছে ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে বিকল্প বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি।নারায়ণগঞ্জের অদূরে ঊর্মি গার্মেন্টসের কথাই ধরা যাক। কারখানাটিতে যেসব পোশাক তৈরি হয় তার একটা গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য ইউরোপ-আমেরিকা।

তবে এর বাইরেও প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইটেম রপ্তানি করে ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে বিভিন্ন দেশে। এরমধ্যে আছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এমনকি ভারতের মতো দেশও। বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে যেটা নন-ট্রাডিশনাল মার্কেট হিসেবে পরিচিত।

ঊর্মি গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ জানাচ্ছেন, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে নন-ট্রাডিশনাল মার্কেটে তার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশে গেলো বছর ঊর্মি গার্মেন্টসের মতো আরো অনেক তৈরি পোশাক কারাখানা নন-ট্রাডিশনাল মার্কেটে রপ্তানি করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে যার অবদান দাঁড়াচ্ছে ১৮.৭২ শতাংশ।

ফলে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নন-ট্রাডিশনাল মার্কেটের আয় একক দেশ হিসেবে আমেরিকা থেকে আসা আয়কে ছাপিয়ে গেলো। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয়ে আমেরিকা থেকে আসে ১৭ শতাংশের কিছু বেশি।

বাংলাদেশে বিকল্প মার্কেট থেকে আয় বৃদ্ধি করতে পারাতেই মূলত মার্কিন ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া গেছে।

বিকল্প বাজারে প্রবৃদ্ধি কেমন? এটা কি আমেরিকার ‘বিকল্প’?

বাংলাদেশে একদশক আগেও ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে অন্যদেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি ছিল মোট রপ্তানি আয়ের মাত্র ১৪.৭৯ শতাংশ।

পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালে সেটা বেড়ে হয় ১৬.৬৭ শতাংশ।

আর সর্বশেষ ২০২৩ সালে সেটা হয় মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮.৭২ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেটা কোথায় হচ্ছে?

এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডলারের অংকে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে জাপান থেকে। বিজিএমইএ’র হিসেবে ২০০৯ সালে সেখান থেকে আয় ছিল একশো এগারো মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২৩ সালে সেটা বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছেছে অর্থাৎ ১.৬৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, তুরস্ক, সৌদি আরব, রাশিয়ার এমনকি ভারতের মতো দেশগুলোতেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।

উর্মি গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র ডিরেক্টর আসিফ আশরাফ বলছেন, এই বাজার আরো বাড়ানো সম্ভব।

তিনি বলেন, “এটা বৃদ্ধি সম্ভব। কিন্তু কিছু কাজ করতে হবে। যেমন জাপানে ওরা যেকোনো প্রডাক্ট ধরে ধরে প্রতিটা পিস চেক করে কোয়ালিটি নিশ্চিত করে। তার মানে এখানে আমাদের ওয়েস্টেজ বেড়ে যেতে পারে। সেটা মাথায় নিয়ে কোয়ালিটির দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”

“একইভাবে অস্ট্রেলিয়াও কোয়ালিটিতে জোর দেয়। তবে সেখানে তারা আলাদাভাবে জোর দেয় তাদের নিজস্ব সুতার উপর। এছাড়া এসব দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষায় কী করছি সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।”

বাংলাদেশের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিকল্প বাজারে গুরুত্ব পাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, সৌদি আরবসহ বেশ ক’টি দেশ।

কিন্তু এসব দেশ কি আমেরিকার ‘বিকল্প বাজার’ হতে পারে? পোশাক মালিকরা অবশ্য সেটা এখনই বলছেন না। কারণে একক দেশ হিসেবে আমেরিকা এখনও বিশাল এবং সম্ভাবনাময়।

অন্যদিকে বাজার হিসেবে ইউরোপ এবং আমেরিকার তুলনায় নন-ট্রাডিশনাল বাজারে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, একেক দেশে একেক রকম চাহিদা এবং পছন্দ।

দেশভেদে মানুষের আকার, সংস্কৃতিও ভিন্ন। এছাড়া ইউরোপ বা আমেরিকায় একই ধরনের পোশাকের অর্ডার বড় সংখ্যায় হলেও বিকল্প বাজারের দেশগুলোতে সেটা হয় তুলনামূলক ছোট সংখ্যায়।

ফলে এসব বিষয় মাথায় রেখে কর্মপরিকল্পনা নেয়ার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, পোশাক মালিকদের এখন পণ্যে বৈচিত্র আনার উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে এক কারখানায় বিভিন্ন আইটেম তৈরির উপরও গুরুত্ব দিতে হবে যেন ক্রেতারা একই কারখানা থেকে একাধিক আইটেম অর্ডার করতে পারেন।

তার মতে, অন্তত আগামী দশ বছর একক দেশ হিসেবে আমেরিকার বাজার বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্ধনশীল হিসেবেই থাকবে।

আমেরিকায় কেন রপ্তানি কমলো?

বাংলাদেশে ২০২৩ সাল জুড়েই নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে একধরনের টানাপোড়েন স্পষ্ট ছিল।

বিশেষত শ্রম অধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরব হওয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কাও ছিল কারো কারো মধ্যে।

এমন অবস্থায় ২০২৩ সালে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়া নিয়ে নানারকম উদ্বেগ তৈরি হলেও বিজিএমইএ বলছে, এই কমে যাওয়ার সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

বিজিএমইএ’র ডিরেক্টর ফয়সাল সামাদ বলছেন, “আমেরিকায় রপ্তানি কমার কারণ ব্যবসায়িক। সেদেশে মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হারের কারণে ভোগ কমেছে। কিন্তু শেষ দিকে এসে আবারও ব্যবসাটা বেড়েছে। ক্রিসমাস উপলক্ষে অর্ডার কিন্তু বেড়েছে।”

বিজিএমইএ বলছে, একক দেশ হিসেবে আমেরিকা এখনো পোশাক মালিকদের অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে। ফলে এটা ধরে রেখেই তারা নজর দিচ্ছেন বিকল্প মার্কেটে। একইসঙ্গে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে একই কারখানায় বিভিন্ন আইটেমের পোশাক বানানো থেকে শুরু করে পণ্যে বৈচিত্র আনার উপর।

তবে এখানে আরেকটা চ্যালেঞ্জ আছে। সেটা হচ্ছে, শুল্ক। দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চহারে শুল্ক থাকায় বাংলাদেশের পক্ষে সেসব দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ কঠিন হয়ে পড়বে বলেই মনে করেন তৈরি পোশাক মালিকরা। এক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে সেসব দেশের সঙ্গে আলোচনা দরকার বলে মত তাদের।

অবশ্য এক্ষেত্রে সরকার ইতিবাচক বলেই জানাচ্ছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এই প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান জানাচ্ছেন, এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “এখানে শুল্ক দূর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে টার্গেটকৃত দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া। এটা হতে পারে কোনো নির্দিষ্ট দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। অথবা একাধিক দেশ হলে সেখানে যদি ঐ অঞ্চলে কোনো রিজিওনাল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট থাকে, আমরা সেখানে যুক্ত হতে পারি।”

“এটার ক্ষেত্রে সুবিধা হলো একসঙ্গে একাধিক দেশের সঙ্গে শুল্ক এবং বাণিজ্য নিয়ে যুক্ত হওয়া সম্ভব। নতুন করে চুক্তির মাধ্যমেই শুল্ক কমানো নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কাজ হচ্ছে”, যোগ করেন মি. আহসান।

বাংলাদেশ এখন বিকল্প মার্কেটে যে পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে, সেটা ইউরোপ-আমেরিকার নির্ভরতা কাটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তবে ভিন্ন ভিন্ন দেশে রপ্তানি বৃদ্ধি দেশটির জন্য একটা বড় সুযোগ।

কিন্তু এক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে উৎপাদক এবং সরকারি পর্যায়ে কীভাবে সেটি নিরসন করা হয় তার উপরই নির্ভর করছে অনেককিছু। বিবিসি বাংলা