News update
  • Bangladesh criticises Rajnath remarks on Yunus     |     
  • ‘Very unhealthy’ air quality recorded in Dhaka Sunday morning     |     
  • Harassment, corruption shade Begum Rokeya University, Rangpur     |     
  • Sikaiana Islanders Face Rising Seas and Uncertain Future     |     
  • BD Election Commission to begin political dialogue this week     |     

চীন যেভাবে মেক্সিকোকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য প্রবেশ করাচ্ছে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2024-05-06, 8:12am

kjsfaosiop-6aa9d8a2db9b9cccfcc272c692dcd7251714961628.jpg




বিলাসবহুল ও আরামদায়ক সব চামড়ার সোফা, যেগুলো মন্টেরের ম্যান ওয়াহ ফার্নিচার ফ্যাক্টরি থেকে তৈরি হয় সেগুলো শতভাগই 'মেড ইন মেক্সিকো'। এখান থেকে তাদের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট ও কস্টকোর মত বড় বড় সব বিপণি।

কিন্তু এই কোম্পানিটি চীনের মালিকানাধীন এবং মেক্সিকোতে উৎপাদন কারখানাও তৈরি হয়েছে চীনা অর্থে।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মেক্সিকোর মধ্যকার এই ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক একটা নতুন শব্দে পরিচিত হয়ে উঠেছে মেক্সিকোতে; আর সেটা হল 'নিয়ারশোরিং' - অফশোরিংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে এমন নাম।

ম্যান ওয়াহ কয়েক ডজন চীনা কোম্পানির একটা, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর মেক্সিকোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এসে অবস্থান নিয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের কাছাকাছি এসে পণ্য উৎপাদন করা যায়।

এতে পরিবহন খরচ কমে যাওয়া ছাড়াও, চূড়ান্ত যে পণ্য প্রস্তুত হল বিক্রির জন্য সেটা পুরোপুরি মেক্সিকান, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে ওয়াশিংটন চীনা কোম্পানিগুলোর উপর যে নিষেধাজ্ঞা ও কর আরোপ করেছে সেটা এড়ানোও সম্ভব হয়।

বিশাল এই কারখানা ঘুরে দেখানোর সময় ম্যান ওয়াহর জেনারেল ম্যানেজার, ইয়ু কেন ওয়েই বলছিলেন, অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক্যাল দিক চিন্তা করেই তারা মেক্সিকোতে তাদের কোম্পানি সরিয়ে এনেছেন।

“আমরা এখানে আরও তিনগুণ, এমনকি চারগুণ উৎপাদনের আশা করছি,” পরিষ্কার স্প্যানিশ উচ্চারণে কথা বলেন তিনি।

“মেক্সিকোতে আমাদের আসার উদ্দেশ্য হল ভিয়েতনামে আমরা যে পরিমাণ উৎপাদন করি, সেই পরিমাণ পণ্য এখানে উৎপন্ন করা”, বলছিলেন তিনি।

জেনারেল ম্যানেজার আরও বলেন তাদের লক্ষ্য ১২০০-র উপর কর্মীকে কাজে লাগানো, যাতে আসছে বছরগুলোতে কয়েক ধাপের অপারেশন এখানে চালু করা যায়।

“মেক্সিকোর মানুষ খুবই পরিশ্রমী এবং দ্রুত শিখতে পারে”, বলেন তিনি।

“আমাদের খুবই ভালো সব অপারেটর আছে এবং তাদের উৎপাদন ক্ষমতাও অনেক বেশি। তাই শ্রমিকের দিক থেকে আমি মনে করি মেক্সিকো কৌশলগতভাবেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ”, জানান তিনি।

নিয়ারশোরিং মেক্সিকান অর্থনীতিতে দারুণ ভূমিকা রাখছে। গত বছরের জুন পর্যন্ত মেক্সিকোর মোট রফতানি আগের বছরের থেকে ৫.৮% বেড়ে যায়, যেটার অর্থমূল্য প্রায় ৫৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার।

আর এই ধারা কমার কোনও লক্ষণ নেই। এ বছরের প্রথম দুই মাসেই মেক্সিকোতে যে পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে তা ২০২০ সালের মোট বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেকের সমান।

ম্যান ওয়াহ ফ্যাক্টরির অবস্থান মন্টেরের বাইরে চাইনিজ-মেক্সিকান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হফুসানে। এখানে প্লটের চাহিদা আকাশ ছুঁয়েছে: অবিক্রীত আর কোনও জায়গা নেই এখানে।

শুধু তাই নয়, মেক্সিকোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক অ্যাসোসিয়েশন (এএমপিআইপি) জানাচ্ছে ২০২৭ সাল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেক্সিকোর সমস্ত সাইট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে।

অনেক মেক্সিকান অর্থনীতিবিদ যে ঘোষণা দিয়েছেন, মেক্সিকোতে চীনের এই আগ্রহ সাময়িক কোন বিষয় নয়, সেটাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

“যেসব কাঠামোগত কারণে মেক্সিকোতে বিনিয়োগ আসছে সেটা পরিবর্তন হবে না”, বলেন মেক্সিকোর সাবেক ফরেন ট্রেড ভাইস মিনিস্টার হুয়ান কার্লোস বাকের পিনেদা।

“আমি তো এরকম কোনও লক্ষণ দেখি না যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য সংঘাত খুব সহসা মিটে যাবে”, আরও জানান তিনি।

বাকের পিনেদা সেই মেক্সিকান গ্রুপে ছিলেন যারা নিউ নর্থ আমেরিকান ফ্রি টেড এগ্রিমেন্ট বা টি-মেক নিয়ে কাজ করেছিলেন।

“যদিও চীনা এসব বিনিয়োগ মেক্সিকোতে ঢোকা হয়তো কিছু দেশের পলিসির জন্য অস্বস্তিকর”, বলে মি পিনেদা যোগ করেন, “কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি অনুযায়ী এ সমস্ত পণ্য সব দিক দিয়েই পুরোপুরি মেক্সিকান।”

বস্তুত এই পরিস্থিতি মেক্সিকোকে দুই সুপারপাওয়ারের মধ্যে কৌশলগত ভূমিকা রাখার একটা সুযোগ করে দিয়েছে।

মেক্সিকো খুব সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জায়গায় চীনকে তাদের প্রধান বাণিজ্যিক পার্টনার বানিয়েছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও একটা প্রতীকী বদল বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে মেক্সিকোর কিছু অংশে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পেছনে দ্বিতীয় আরেকটা নিয়ারশোরিং আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর কারণ যুক্তরাষ্ট্রও মেক্সিকোতে কারখানা স্থাপন করছে, যার মধ্যে কিছু কিছু এশিয়া থেকে সরিয়ে আনছে তারা।

তবে সম্ভবত গত বছর সবচেয়ে বড় ঘোষণাটা ছিল এলন মাস্কের, যখন তিনি বলেন যে মন্টেরের বাইরে টেসলার একটা বিশাল ফ্যাক্টরি স্থাপন করবেন তিনি।

যদিও এখনও পর্যন্ত এই ১০ বিলিয়ন ইউএস ডলার প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ শুরু করেনি ইলেকট্রিক কার কোম্পানি টেসলা।

আর টেসলা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বললেও, পরিবর্তিত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও কোম্পানির সাম্প্রতিক ছাটাঁইয়ের কারণে তাদের পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত অনেক ধীরে এগুচ্ছে।

পরিণতি নিয়ে সংশয়

যেভাবে চীনা বিনিয়োগ আসছে তাতে অনেকেই মেক্সিকোকে সতর্ক হবার কথা বলছেন, কারণ ভূরাজনৈতিকভাবে এতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে যেতে পারে তারা।

“শহরের পুরনো ধনী যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা দেখা যাচ্ছে, শহরের নতুন ধনী চীনের সাথে,” উদাহরণ দিয়ে বলছিলেন ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর সেন্টার ফর চায়না-মেক্সিকো স্টাডিজের অধ্যাপক এনরিক দুসেল।

“কিন্তু মেক্সিকোর আগের সরকার বা বর্তমান সরকারেরও কোন কৌশল দেখা যাচ্ছে না এই নতুন ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের ব্যাপারে।”

আর যেহেতু এখন সীমান্তের দুই পাড়েই, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে সামনে নতুন রাজনৈতিক ইস্যুও আসতে পারে।

এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে যেই আসুন যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সম্পর্কে খুব একটা উন্নতি হবে বলে কেউ মনে করছেন না।

মি দুসেলের বিশ্বাস নিয়ারশোরিংকে বরং 'নিরাপত্তা অফশোরিং' বলা যায়, কারণ ওয়াশিংটন চীনের সাথে সম্পর্কে অন্য সব কিছুর উপরে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। তার যুক্তি মেক্সিকো এর মধ্যে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

মি দুসেল যোগ করেন, “এই উত্তেজনার মাঝে মেক্সিকো যেন চীনের জন্য একটা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে যে - ‘ওয়েলকাম টু মেক্সিকো!’ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর পরিণতিটা যে ভালো হবে না, তা বুঝতে আপনার ডক্টরেট করার দরকার নেই।”

অনেকে আশাও দেখছেন

“আমার মতে, প্রশ্ন এটা নয় যে কতদিন এই ধারা অব্যাহত থাকবে, বরং প্রশ্নটা এটা হওয়া উচিত যে এই ট্রেন্ড থেকে কতটা সুবিধা আমরা নিতে পারি”, মন্তব্য করেন মেক্সিকোর সাবেক ফরেন ট্রেড ভাইস মিনিস্টার হুয়ান কার্লোস বাকের পিনেদা।

“আমি নিশ্চিত যে কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম, কোস্টারিকাতেও একই ধরনের আলোচনা চলছে। আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে মেক্সিকোতে এখন যে পরিস্থিতি সেটা টেঁকসই করতে সরকারি ও কর্পোরেট সিদ্ধান্তগুলো এক সাথে, একইভাবে নিতে হবে যাতে দীর্ঘমেয়াদে এই ট্রেন্ডটা বজায় থাকে”, বলছিলেন তিনি।

এদিকে মন্টেরেতে, ম্যান ওয়াহ ফার্নিচার স্টোরের প্রতিভাবান মেক্সিকান কর্মীরা আরেকটি সোফা যেটা উত্তরে পরিবহনের জন্য তৈরি হচ্ছে, সেটা শেষ বারের মতো পরীক্ষা করে দেখছিল।

আর যখন বাড়ির পাশে ওয়ালমার্ট থেকে কোনও আমেরিকান পরিবার এটা কিনছে তাদের তখন এটা তৈরি হওয়া নিয়ে যে জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে, সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই থাকছে না।

কিন্তু দুই সুপারপাওয়ারের লড়াইয়ে নিয়ারশোরিং যতই চীনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার একটা চতুর পেছনের দরজা হোক না কেন, মেক্সিকোর জন্য এটা আসলে এই অস্থির বাণিজ্যিক সময়ে সুবিধা নেওয়ার একটা সুযোগ। বিবিসি বাংলা