News update
  • 248 arrested, illegal nets seized in 6-day drive: River Police     |     
  • Children in Gaza ‘going to bed starving’ amid blockade     |     
  • Plague of rats, insects latest challenge for war-torn Gazans     |     
  • Guterres tells UNSC two-State option near point of no return     |     
  • 14-year-old Suryavanshi smashes record-breaking T20 century     |     

কোরবানিতে ২৬ লাখ পশু অবিক্রীত রয়ে গেল কেন?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2024-06-18, 10:46pm

dfgddfg-7670cdfabf92b194770a7643e138dd481718729209.jpg




বাংলাদেশে ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে যেসব পশু লালন-পালন করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রায় ২৬ লাখ অবিক্রীত রয়ে গেছে। গতবারের চেয়ে এবার পশু কোরবানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাজারে সংকট তৈরি হয়নি।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। সরকার দাবি করছে, দেশের ভেতরের পশু উৎপাদন দিয়ে কোরবানির চাহিদা মিটে গেছে।

যদিও এই বক্তব্যের সাথে একমত নন মাংস ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, সীমান্ত পথে ভারত ও মিয়ানমার থেকে পশু দেশের ভেতরে আসার কারণে বাজারে সেটির ‘ইতিবাচক প্রভাব’ পড়েছে।

অন্যদিকে, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, অধিদপ্তরের হিসাবের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের চিত্রের মিল রয়েছে।

ঈদের আগে প্রাণি সম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান জানিয়েছিলেন, দেশে প্রায় এক কোটি ত্রিশ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে।

তিনি তখন ২৩ লাখ উদ্বৃত্ত অর্থাৎ, অবিক্রীত থাকার কথা বললেও ঈদের পর দেখা যাচ্ছে অবিক্রীত পশুর সংখ্যা আরো কয়েক লাখ বেশি।

এই গবাদি পশুগুলো অবিক্রীত রয়ে গেল কেন? বিক্রি না হওয়ার তালিকায় কোন ধরনের গরুর সংখ্যা বেশি?

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "এ বছর সারাদেশে মোট এক কোটি চার লাখ আট হাজার ৯১৮টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। গত বছর সারাদেশে কোরবানিকৃত গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ৪১ হাজার ৮১২ টি।"

অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় এবার সাড়ে তিন লাখ বাড়তি কোরবানি হয়েছে।

অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে।

মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য উদ্ধৃত করে জানানো হয়, ঢাকা বিভাগে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ১৮২ টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৫২০ টি কোরবানি হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালক মো. শাহিনুর আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, সংগৃহীত তথ্যের বাইরেও কিছু কোরবানির পশু বিক্রি হয়ে থাকবে।

"অনেকে নিজেরা লালন পালন করেন, নিজেরা কোরবানি দিয়ে থাকেন। তারা এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভূক্ত নন," বলেন তিনি।

সব মিলিয়ে, ঈদ-উল আজহাকে ঘিরে বাংলাদেশে প্রায় 'এক লাখ কোটি টাকার অর্থনীতি' দাঁড়িয়ে গেছে বলে দাবি মো. শাহিনুর আলমের।

'হাট থেকে পশু ফিরেছে কম'

প্রতি বছর হাটের শেষে বিক্রি না হওয়া গরু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় ব্যাপারিদের।

খামারিদের সংগঠন ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত দুইবার প্রচুর সংখ্য়ায় গরু ফেরত গেছে। ।

"একটি দুটি করে গরু ফিরিয়ে নেয়া ব্যয়বহুল। তাই এবার অনেক গৃহস্থ ঢাকায় গরু আনে নাই," যোগ করেন তিনি।

কারণ, "নির্ধারিত সময়ের পরও সেগুলো লালন-পালন করা ব্যয় সাপেক্ষ। তাতে লোকসানের শংকা বাড়ে। কারণ একটা সময়ের পর গরু আর বাড়ে না।"

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এবার মাসখানেক আগেই প্রায় ২৩ লাখ পশু অতিরিক্ত আছে জানানোর পর, ক্রেতারা একটু 'ব্যাকফুটে' চলে যান বলে জানাচ্ছেন মি. হোসেন।

সেই সঙ্গে সীমান্ত দিয়ে ভারত এবং মিয়ানমার থেকেও কিছু গরু আসার খবর পাওয়া যায়।

এতে অন্যান্য বার কোরবানির সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই অনেকে গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু কেনা শুরু করলেও এবার দাম কমার আশায় শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন বলে ধারণা ইমরান হোসেনের।

সরকারের দেয়া উদ্বৃত্তের হিসাব নিয়ে সংশয় আছে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলমের।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, যদি বাংলাদেশে ভারতীয় এবং মিয়ানমারের গরু না প্রবেশ করতো তাহলে সংকট দেখা দিতো। কারণ তার মতে, বাংলাদেশ এখনো গবাদিপশু উৎপাদনে "স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়"।

তবে যারা ঢাকা বা চট্টগ্রামে পশু নিয়ে আসেননি তারা স্থানীয় বাজারে নিয়ে গেছে। সেখানে বিক্রি না হলে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন বলে জানাচ্ছেন ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

তার দাবি, বড় শহর থেকে ফেরত না গেলেও স্থানীয় পর্যায় অবিক্রীত পশুর সংখ্যা কম নয়।রবিউলের আলমের দাবি, সীমান্ত দিয়ে এবার প্রায় ৩০ লাখ গরু বাংলাদেশে এসেছে।

সীমান্ত দিয়ে কত গরু এসেছে সেই পরিসংখ্যান হাতে নেই জানালেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক বলছেন, "মনে করি না খুব উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যায় এমন চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছে।"

বড় গরুর বিক্রি কম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো ঈদ-উল আজহার আগে বড়-সড় আকৃতির শৌখিন সব গরু নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়।

এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু, বিক্রি সেই অনুপাতে হয়নি বলে খামারিদের সংগঠনের তরফে জানা গেছে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই ধরনের গরুর মূল ক্রেতা বড় ব্যবসায়ী বা ধনাঢ্য ব্যক্তিরা।

"কিন্তু, এবার নানা কারণে তাদের অনেকে দেশে উপস্থিত না থাকায় এখানে কোরবানি দিতে পারেন নি। সেজন্য গত বছরের তুলনায় এবছর শৌখিন গরু একটু কম বিক্রি হইছে।"

এর পেছনে অন্য কোনো আর্থ সামাজিক কারণ নেই বলে দাবি তার।

প্রচুর আলোচনা হলেও বাজারের অংশীদারত্বে দিক থেকে বড় আকৃতির ও দামী গরুর উপস্থিতি সামান্য।

তিনটি ভাগের কথা উল্লেখ করে ইমরান হোসেন বলেন, ৯৮ শতাংশ গরুই দেড় লাখ টাকার নিচে বিক্রি হয়। আড়াই-তিন লাখ দামের কোঠায় থাকে দেড় শতাংশ।

"আর বাকি শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বাজার থাকে শৌখিন গরুর দখলে।"

তাই, মাঝারি ও ছোট আকৃতির গরুর বেচাবিক্রি বরাবরের মতো এবারো বেশি দেখা গেছে।

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহিনুর আলম জানালেন, আমরাও গরুকে অতিরিক্ত বড় না করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

"বাজারের ডিমান্ড বুঝেই আমাদের গরু লালন পালন করা উচিত," যোগ করেন তিনি।

তবে মাঝারি গরুর দাম নিয়ে বিপরীতমুখী মতামত পাওয়া গেল।

মি. হোসেন বলছেন, গতবারের তুলনায় এবার পাঁচ থেকে সাত শতাংশ কম দামে মাঝারি গরু বিক্রি হয়েছে।

কিন্তু, রবিউল আলমের মন্তব্য, এ বছর গরুর দাম বেড়েছে।

"গত বছর যে গরুটা ৫০ থেকে ৬০ বা ৭০ হাজার টাকা ছিল, এবার সেই গরুটা এক লাখ বা এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বেচা হইছে," বলেন তিনি।

উদ্বৃত্ত পশুর কী হবে?

ঈদের আগে বলা প্রাণি সম্পদ মন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট, পশুগুলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে কোরবানির জন্যই।

ফলে, কোরবানি পেরিয়ে যাবার পর এগুলোর লালন পালন প্রান্তিক খামারিদের জন্য বোঝা হয়ে উঠবে কি না?

এমন প্রশ্নে অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহিনুর আলম বলেন, ঈদের পর পর অনেক সামাজিক অনুষ্ঠান, আয়োজনের প্রবণতা দেখা যায়। যেখানে, গরু-ছাগলের দরকার পড়ে।

"দুশ্চিন্তার কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। বিয়েসহ অনেক অনুষ্ঠান থাকে। ফলে, যারা আমাদের হিসাবের বাইরেও যারা পশু উৎপাদন করেছেন তাদেরগুলোও কনজ্যুমড্ হয়ে যাবে।" বিবিসি বাংলা