দেশের বাজারে লঞ্চ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সব জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রে আইকনিক ব্র্যান্ড রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল। গ্রাহক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মোটরসাইকেল বাজারে আসায় কমতে পারে অন্যান্য ব্রান্ডের মোটরসাইকেলের দাম।
বাংলাদেশে রয়্যাল এনফিল্ডের একমাত্র প্রস্তুতকারক ও পরিবেশক ইফাদ মোটরস লিমিটেড। দেশের বাজারের জন্য ৩৫০ সিসির হান্টার, ক্লাসিক, বুলেট ও মিটিয়র- এই চারটি মডেলের মোটরসাইকেল লঞ্চ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দেশের বাজারে হান্টার মডেলের দাম শুরু হবে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে, ক্লাসিক মডেলের দাম শুরু হবে চার লাখ ৫ হাজার টাকা থেকে, বুলেট মডেলের দাম শুরু হবে চার লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে এবং মিটিয়র মডেলের দাম শুরু হবে চার লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে। তবে মোটরসাইকেলগুলো সবার সামনে আনা হলেও কিনতে হলে প্রি-বুকিং বাধ্যতামূলক। ক্রেতারা এটি ওয়েবসাইট ও শো-রুম থেকে ক্রয় করতে পারবেন।
রীতিমতো লাইন ধরে মোটরসাইকেলগুলো দেখার জন্য শো-রুমের বাইরে ভিড় জমাচ্ছে মানুষ। তারা বলছেন, রয়্যাল এনফিল্ড অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। তাই বাইকগুলো একনজর দেখতে ও স্পর্শ করতে ছুটে এসেছেন। তারাও আশা করছেন, এই মোটরসাইকেল বাজারে আসায় এখন দাম কমতে শুরু করবে অন্যান্য ব্রান্ডের মোটরসাইকেলের।
শুভ নামে এক মোটরসাইকেল চালক জানান, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে প্রি-বুকিং দিয়েছেন। বাইক হাতে পেতে পেতে অন্তত ৯০ দিন লাগবে। তবে কিনতে পেরেই তিনি আনন্দিত।
তার ভাষায়, ‘এখন অন্য ব্রান্ডের মোটরসাইকেল চালাই। রয়্যাল এনফিল্ড আমার কাছে স্বপ্নের মতো। মুভিতে দেখতাম আর ভাবতাম, কবে কিনব। আজ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
রয়্যাল এনফিল্ড বাজারে আসায় এখন অন্যান্য ব্রান্ডের মোটরসাইকেলের দাম কমতে শুরু করবে বলে ধারনা তার। তিনি বলেন, এতদিন সবাই ইয়ামাহা, সুজুকির পিছনে ছুটেছে। সেগুলোর দামও ছিল বেশ চড়া। তবে এবার দেশের বাজারে এসেছে রয়্যাল এনফিল্ড, দামও তুলনামূলক কম। তাই দেশের দামি বাইকগুলোর দাম নাগালে আসতে পারে।’
এ বিষয়ে ইফাদ মোটরস লিমিটেডের এরিয়া সার্ভিসের সহকারী ম্যানেজার উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস সময় সংবাদকে বলেন, ‘অনলাইনে প্রি-বুকিং চলছে। আবার অনেকে শো-রুমে এসে নগদ টাকায় প্রি-বুকিং দিচ্ছেন। গ্রাহকদের চরম উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে। নগদ ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে মোটরসাইকেলগুলো প্রি-বুকিং দেয়া যাচ্ছে।’
রয়্যাল এনফিল্ড বাজারে আসায় অন্যান্য বাইকের দামে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই সরাসরি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে গ্রাহকদের যে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে, তাতে কিছুটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে। কেননা এখন পর্যন্ত ৪৫ ও ৬০ দিন পর ডেলিভারি পাওয়ার প্রি-বুকিংয়ের স্লট শেষ। এখন ৯০ দিন পরের প্রি-বুকিংয়ের স্লট চলছে।’
বাজার পরিস্থিতি সব বলে দেবে উল্লেখ করে উজ্জ্বল কুমার জানান, ‘দেশে বিদ্যমান অন্যান্য ব্রান্ডের মোটরসাইকেলগুলোর তুলনায় রয়্যাল এনফিল্ডগুলোর দাম অনেক কম রাখা হয়েছে। এর প্রভাব তো অবশ্যই বাজারে পড়বে। রয়্যাল এনফিল্ড ভালো করলে বাজার ধরতে অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে অন্য ব্রান্ডগুলো। তবে সেটি সময় বলে দেবে।’
এদিকে, দাম কমার বিষয়ে এখনই পরিস্কার করে কিছু বলতে চায় না অন্যান্য ব্রান্ডগুলো। তারা জানান, সব ব্রান্ডেরই আলাদা আলাদা মডেল আছে। মানুষের চাহিদাও আলাদা। রয়্যাল এনফিল্ড মাত্র প্রি-বুকিং চলছে। রাস্তায় নামেনি। তাই কেমন প্রভাব পড়বে এখনই বলা যাচ্ছে না। বাজার বুঝতে দেরি হবে।
রয়্যাল এনফিল্ড বাজারে আসায় অন্যান্য বাইকের দামে প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে এসিআই মোটরসের ব্রান্ড ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। বাজার পরিস্থিতি কথা বলবে।’
দেশের মোটরসাইকেলের বাজার সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘মাত্র দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলো। তাছাড়া সব জিনিস-পত্রের দাম বেশি। মানুষের মাঝে শৌখিন পণ্য কেনার প্রবণতা আপাতত কম। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজার পরিস্থিতি বোঝা যাবে।’