News update
  • CA Yunus pays homage to Liberation War martyrs on Victory Day     |     
  • Bangladesh capital market extends losing streak for second day     |     
  • Bangladesh celebrates Victory Day Tuesday     |     
  • 'Different govts presented history based on their own ideologies': JU VC     |     

ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন নিয়ে আইনজীবীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক আদালত 2025-07-21, 10:04am

89c71185d9e01ed27c960584cc945b5717c6c6369eab7f2c-708b0d93e630eade80b369a156b7baf91753070688.png




ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও আইনজীবী মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বেশিরভাগ আইনজীবী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। তাদের দাবি, একক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একাধিক হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী এবং এটি ৮ম সংশোধনী মামলার রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে ভবিষ্যতে এই সিদ্ধান্ত আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে কিছু আইনজীবী মনে করছেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিচারসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে এবং মামলাজট কমবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাম্প্রতিক বৈঠকে ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে শুরু হয় আইনজীবীদের বিক্ষোভ। এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে স্মরণ করিয়ে দেয় সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আমলে গৃহীত ৮ম সংশোধনীর কথা। সেসময় জাতীয় ঐকমত্য ছাড়াই ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করতে সংবিধানে আনা হয় ৮ম সংশোধনী। ব্যাপক বিক্ষোভ-আন্দোলনের পর সেটি গড়ায় আইনি লড়াইয়ে, যেখানে অংশ নেন বর্তমান প্রধান বিচারপতির পিতা সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদও।

সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার রায়ে ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। সেই ঐতিহাসিক রায়ের তিন দশকেরও বেশি সময় পর আবারো এমন উদ্যোগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ঢাকার বেশিরভাগ আইনজীবী।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘এমন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে যা অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট একক। বর্তমান সংবিধানে সার্কিট বেঞ্চের ব্যবস্থা থাকলেও, যদি বিভিন্ন জায়গায় স্থায়ীভাবে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করা হয়, তবে তা একপ্রকারে এরশাদ আমলের ৮ম সংশোধনীর মতোই হবে। এতে আদালতে চ্যালেঞ্জ আসবে এবং তা বাস্তবায়নযোগ্য হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে রাজ্য ব্যবস্থা নেই, তাই একটাই সুপ্রিম কোর্ট থাকার কথা। ভারতীয় প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। সবচেয়ে বড় লিটিগেন্ট হচ্ছে সরকার। সরকার যদি মামলার পরিমাণ কমায়, তাহলে মামলাজট থাকবে না। গোড়ার সমস্যার সমাধান না করে শুধু ঢাকার বাইরে বেঞ্চ বসিয়ে কিছু হবে না। বিচার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে হবে, মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে হবে। তাহলে ৯০ শতাংশ মামলার উৎপত্তি বন্ধ হবে।’

তবে ভিন্নমতও রয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ বলেন, ‘যদি সব রাজনৈতিক দল এই বিষয়ে একমত হয়, তাহলে এটা অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ। এত বড় একটি দেশে সবাইকে ঢাকায় এসে বিচার নিতে হবে এটা যৌক্তিক নয়। ১৭ কোটি মানুষের দেশে পারমানেন্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ থাকা উচিত। যদি কোনও আইনি জটিলতা থাকে, তা সংবিধানের মৌল কাঠামোতে সংযোজনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসে, তাদের জন্য ঢাকায় এসে মামলা পরিচালনা করা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। এতে বিচার প্রার্থীদের কষ্ট বাড়ে। জনগণের দোরগোড়ায় বিচারসেবা পৌঁছাতে হলে হাইকোর্টের বেঞ্চ ঢাকার বাইরেও স্থাপন করতে হবে।’

এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা মনে করি, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এটি ৮ম সংশোধনী মামলার রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।’

আইনজীবীদের একাংশ মনে করেন, ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের মাধ্যমে বিচারকাজ সহজ ও সুলভ হবে। তবে বিরোধী অংশের মতো, এটি বাস্তবায়ন হলে তা হবে সাংবিধানিক রীতিনীতির লঙ্ঘন এবং দীর্ঘমেয়াদে আইনি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।

সংবিধানের আলোকে বিচার বিভাগের কাঠামো সংরক্ষণ এবং জনগণের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত—এই দুইয়ের ভারসাম্য কতটা রক্ষা করা যাবে, সেটিই এখন মূল প্রশ্ন। সংলাপ ও আইনি স্পষ্টতার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে, আবারও এই উদ্যোগ আইনি ও রাজনৈতিক বিতর্কে জর্জরিত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়।