ধেয়ে আসছে শক্তিশালী মৌসুমি বৃষ্টি বলয় ‘প্রবাহ’।, এই বৃষ্টি বলয়টি দেশের পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে ও দক্ষিণ অঞ্চলে বেশি সক্রিয় হতে পারে। এই সময় উজানে ভারী বর্ষণ এর ফলে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নদ-নদীর পানি বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ দল (BWOT)
তারা জানান, এটি একটি প্রায় পূর্নাঙ্গ বৃষ্টি বলয়, মানে এই বৃষ্টি বলয় সারাদেশে বিশেষ সক্রিয় না হলেও অধিকাংশ এলাকায় বেশ সক্রিয় হতে পারে। তবে দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যথেষ্ট বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এবং এই বৃষ্টি বলয় টি দেশের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ এলাকায় বেশ ভারীবৃষ্টি ঘটাতে পারে। এটি চলতি বছরের ১৩ তম বৃষ্টি বলয় ও ৯ তম মৌসূমী বৃষ্টি বলয়।
সর্বাধিক সক্রিয়: রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ
বেশ সক্রিয় : ঢাকা বিভাগ
মাঝারি সক্রিয়: সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ
নাম : শক্তিশালী মৌসুমী বৃষ্টি বলয় ‘প্রবাহ’।
টাইপ : প্রায় পূর্নাঙ্গ বৃষ্টি বলয়। [৮০% এলাকায়]
ক্যাটেগরি : ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি বলয়
কাভারেজ : দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা।
ধরন : মৌসূমী বৃষ্টি বলয়
সময়কাল : ৩০শে সেপ্টেম্বর রাত হতে ৫ই অক্টোবর ২০২৫। [পর্যায়ক্রমে, একসাথে সারাদেশে নয়]
সর্বাধিক সক্রিয়: ২ টু ৪ ই অক্টোবর। [পর্যায়ক্রমে, একসাথে সারাদেশে নয়]
কালবৈশাখী : নেই
বজ্রপাত : প্রথম দিকে প্রায় তীব্র, অধিকাংশ এলাকায়। পরে হালকা থেকে মাঝারি।
বন্যা : রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষণের কারণে নদ নদী সমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে নদনদীর নিকটবর্তী নিম্ন অঞ্চল সাময়িক প্লাবিত হতে পারে। এছাড়াও বেশ কিছু এলাকায় নিম্ন অঞ্চলে সাময়িক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
একটানা বর্ষণ : আছে বেশি সক্রিয় এলাকায়
সিস্টেম : একটি নিম্নচাপ থাকতে পারে।
ঝড় : এই বৃষ্টি বলয়ে দেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে ঘন্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে।
সাগর : বেশিরভাগ সময়েই সাগর বেশ উত্তাল থাকতে পারে। তাই সাগরে এসময় নিরাপদ নয়।
পাহাড় ধসঃ কক্সবাজার রাঙ্গামাটি বান্দরবান ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের ঝুঁকি থেকে যায়।
নোট : বৃষ্টিবলয় ‘প্রবাহ’ চলাকালীন সময়ে দেশের আকাশ অধিকাংশ এলাকায় মূলত মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। ও অধিক সক্রিয় এলাকায় প্রায় সবসময়ই মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে।
বৃষ্টি বলয় ‘প্রবাহ’ তে বেশি সক্রিয় এলাকায় অধিকাংশ বৃষ্টিপাত হতেপারে একটানা ও দীর্ঘস্থায়ী।
*এই বৃষ্টি বলয় চলাকালীন সময়ে দেশের প্রায় ৬০-৭০% এলাকায় পানি সেচের চাহিদা পুরন হতে পারে।
আর জানানো হয়, এই বৃষ্টি বলয় টি ৩০শে সেপ্টেম্বর দেশের পূর্ব অঞ্চল দিয়ে দেশে প্রবেশ করতে পারে ও আগামি ৬ই অক্টোবর রংপুর বিভাগ হয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে। বৃষ্টিবলয় প্রবাহ চলাকালীন সময়ে দেশের আবহাওয়া অধিকাংশ এলাকায় আরামদায়ক থাকতে পারে। এবং টানা বৃষ্টি চলা এলাকায় বেশ ঠান্ডা অনুভূতি হতে পারে।
বৃষ্টি বলয় প্রবাহ এর বৈশিষ্ট্য : এটি দেশের এক প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে অন্য প্রান্তের দিকে প্রবাহিত হতে পারে। অর্থাৎ শুরুতে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল দিয়ে শুরু হলেও শেষ পর্যায়ে এটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যেয়ে শেষ হতে পারে।
নোট : প্রবাহ যেহেতু প্রায় পূর্নাঙ্গ বৃষ্টি বলয় [পুরোপুরি পূর্নাঙ্গ নয়], সুতরাং প্রবাহ চলাকালীন সময়ে দেশের কিছু এলাকায় খুবই কম বৃষ্টিপাত বা বৃষ্টি একেবারে না ও হতে পারে।
নোট: বৃষ্টি বলয় চালু হওয়া মানে একসাথে সকল এলাকায় বৃষ্টিপাত নয়। মূলত এই সময়সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ সক্রিয় এলাকায় পর্যায়ক্রমে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং কম সক্রিয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হলেও তা পর্যায়ক্রমে ও কম হতে পারে।
মেঘের অভিমুখ: অধিকাংশ সময় দক্ষিণ হতে উত্তর দিকে, তবে মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকায় গতিপথ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
আসুন একনজরে দেখেনেই বৃষ্টি বলয় "প্রবাহ" চলাকালীন সময়ে দেশের কোন বিভাগে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড়ে কত মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ও বৃষ্টি বলয়ের ৬ দিনে কোন বিভাগে গড়ে কত দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
ঢাকা ১২০-১৭০ মিলিমিটার, গড়ে ৪দিন
খুলনা ১৬০-২১০ মিলিমিটার গড়ে ৪ দিন
বরিশাল ১৫০-১৭০ মিলিমিটার গড়ে ৪ দিন
সিলেট ৮০-১৩০ মিলিমিটার গড়ে ৩ দিন
ময়মনসিংহ ১৪০-২০০ মিলিমিটার গড়ে ৪ দিন
রাজশাহী ১৭৫-২৫০ মিলিমিটার গড়ে ৫ দিন
রংপুর ২৮০-৩৮৫ মিলিমিটার গড়ে ৫ দিন
চট্টগ্রাম ৮০-২০০ মিলিমিটার গড়ে ৩ দিন।
আসুন একনজরে দেখে নেই, বৃষ্টি বলয় প্রবাহ এ চলাকালীন সময়ে আপনার জেলায় গড়ে কত মিলিমিটার বৃষ্টি হতেপরে
বরিশাল বিভাগ
বরিশাল – 150 মিমি
ভোলা উত্তর – 150 মিমি
ভোলা দক্ষিণ – 160 মিমি
বরগুনা – 160 মিমি
ঝালকাঠি – 165 মিমি
পটুয়াখালী উত্তর – 150 মিমি
পটুয়াখালী দক্ষিণ – 150 মিমি
পিরোজপুর উত্তর – 150 মিমি
পিরোজপুর দক্ষিণ – 160 মিমি
চট্টগ্রাম বিভাগ
বান্দরবান উত্তর – 120 মিমি
বান্দরবান দক্ষিণ – 150 মিমি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া – 75 মিমি
চাঁদপুর – 120 মিমি
চট্টগ্রাম উত্তর – 100 মিমি
চট্টগ্রাম দক্ষিণ – 120 মিমি
কুমিল্লা উত্তর – 85 মিমি
কুমিল্লা দক্ষিণ – 100 মিমি
কক্সবাজার উত্তর – 180 মিমি
কক্সবাজার দক্ষিণ – 220 মিমি
সন্দ্বীপ – 150 মিমি
ফেনী – 100 মিমি
খাগড়াছড়ি উত্তর – 75 মিমি
খাগড়াছড়ি দক্ষিণ – 85 মিমি
লক্ষ্মীপুর – 140 মিমি
নোয়াখালী উত্তর – 130 মিমি
নোয়াখালী দক্ষিণ – 150 মিমি
রাঙামাটি উত্তর – 100 মিমি
রাঙামাটি দক্ষিণ – 120 মিমি
ঢাকা বিভাগ
ঢাকা – 135 মিমি
ফরিদপুর – 150 মিমি
গাজীপুর – 140 মিমি
গোপালগঞ্জ – 150 মিমি
কিশোরগঞ্জ – 110 মিমি
মাদারীপুর – 130 মিমি
মানিকগঞ্জ – 140 মিমি
মুন্সিগঞ্জ – 130 মিমি
নারায়ণগঞ্জ – 120 মিমি
নরসিংদী – 110 মিমি
রাজবাড়ী – 160 মিমি
শরীয়তপুর – 130 মিমি
টাঙ্গাইল – 175 মিমি
ময়মনসিংহ বিভাগ
জামালপুর – 200 মিমি
ময়মনসিংহ উত্তর – 160 মিমি
ময়মনসিংহ দক্ষিণ – 140 মিমি
নেত্রকোনা – 150 মিমি
শেরপুর – 200 মিমি
খুলনা বিভাগ
বাগেরহাট উত্তর – 160 মিমি
বাগেরহাট দক্ষিণ – 160 মিমি
চুয়াডাঙ্গা – 200 মিমি
যশোর – 180 মিমি
ঝিনাইদহ – 190 মিমি
খুলনা উত্তর – 170 মিমি
খুলনা দক্ষিণ – 170 মিমি
কুষ্টিয়া – 200 মিমি
মাগুরা – 180 মিমি
মেহেরপুর – 210 মিমি
নড়াইল – 155 মিমি
সাতক্ষীরা উত্তর – 180 মিমি
সাতক্ষীরা দক্ষিণ – 170 মিমি
রাজশাহী বিভাগ
বগুড়া – 200 মিমি
জয়পুরহাট – 240 মিমি
নওগাঁ – 250 মিমি
নাটোর – 185 মিমি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ – 250 মিমি
পাবনা – 175 মিমি
রাজশাহী – 220 মিমি
সিরাজগঞ্জ – 175 মিমি
রংপুর বিভাগ
দিনাজপুর – 280 মিমি
গাইবান্ধা – 260 মিমি
কুড়িগ্রাম – 280 মিমি
লালমনিরহাট – 300 মিমি
নীলফামারী – 350 মিমি
পঞ্চগড় – 385 মিমি
রংপুর – 280 মিমি
ঠাকুরগাঁও – 300 মিমি
সিলেট বিভাগ
হবিগঞ্জ – 80 মিমি
মৌলভীবাজার – 80 মিমি
সুনামগঞ্জ – 130 মিমি
সিলেট – 100 মিমি
পশ্চিমবঙ্গ (ভারত)
উত্তর ২৪ পরগনা – 200 মিমি
দক্ষিণ ২৪ পরগনা – 250 মিমি
দক্ষিণ মধ্য বঙ্গ – 250 মিমি
কলকাতা – 280 মিমি
দীঘা – 140 মিমি
মেদিনীপুর – 160 মিমি
বাঁকুড়া – 160 মিমি
পুরুলিয়া – 140 মিমি
বর্ধমান – 270 মিমি
আসানসোল – 210 মিমি
বেহরামপুর – 250 মিমি
মালদা – 250 মিমি
রায়গঞ্জ – 300 মিমি
ইসলামপুর – 380 মিমি
শিলিগুড়ি – 400 মিমি
দার্জিলিং – 400 মিমি
জলপাইগুড়ি – 380 মিমি
কোচবিহার – 300 মিমি
উড়িষ্যা (ভারত)
উত্তর উড়িষ্যা – 80 মিমি
পূর্ব উপকূল (উড়িষ্যা) – 150 মিমি
ঝাড়খণ্ড (ভারত)
উত্তর ঝাড়খণ্ড – 120 মিমি
দক্ষিণ ঝাড়খণ্ড – 80 মিমি
জামশেদপুর – 100 মিমি
রাঁচি – 100 মিমি
দুমকা – 210 মিমি
বিহার (ভারত)
দক্ষিণ বিহার – 160 মিমি
পূর্ব বিহার – 300 মিমি
উত্তর বিহার – 280 মিমি
নেপাল
উত্তর নেপাল – 200 মিমি
দক্ষিণ-পূর্ব নেপাল – 400 মিমি
ভুটান
পশ্চিম ভুটান – 200 মিমি
মধ্য ভুটান – 150 মিমি
পূর্ব ভুটান – 120 মিমি
আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারত
পশ্চিম আসাম – 280 মিমি
মধ্য আসাম – 75 মিমি
পূর্ব আসাম – 80 মিমি
দক্ষিণ আসাম – 80 মিমি
চেরাপুঞ্জি – 180 মিমি
ত্রিপুরা – 75 মিমি
মণিপুর – 65 মিমি
নাগাল্যান্ড – 75 মিমি
উত্তর মিজোরাম – 85 মিমি
দক্ষিণ মিজোরাম – 100 মিমি
মায়ানমার
উত্তর রাখাইন – 250 মিমি
বৃষ্টি বলয় এর পূর্বাভাসে যা বিবেচনায় রাখতে হবে:
এখানে দেওয়া বৃষ্টির পরিমান একটা গড় ধারনা মাত্র, স্থানভেদে এর পরিমান কিছুটা হেরফের হতেপারে। ও দেশের কোন কোন ক্ষুদ্র এলাকায় কিছুটা বেশি বৃষ্টি হতে পারে ও কোন ক্ষুদ্র স্থানে বৃষ্টি অনেক কম হতে পারে।
নোট : প্রাকৃতিক কারনে বৃষ্টি বলয় ‘প্রবাহ’ এর সময়সূচি কিছুটা পরিবর্তন ও এর শক্তি কিছুটা হ্রাস, বৃদ্ধি বা বিলুপ্ত হতে পারে।আরটিভি