গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ থেকে তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য আলাদা। এই স্বাতন্ত্র্যের মূল কারণগুলো হলো ক্যাম্পাসের অরাজনৈতিক পরিবেশ এবং প্রচলিত প্যানেল প্রথার অনুপস্থিতি, যা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।
দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন রাজনৈতিক প্যানেল বা ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে পরিচালিত হয়। এর ফলে অনেক সময় যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় বেশি প্রাধান্য পায়। কিন্তু গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীরা কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে নয়, বরং নিজেদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এতে একজন শিক্ষার্থী কেবল তার নেতৃত্বগুণ, প্রজ্ঞা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি তার অঙ্গীকার দিয়েই ভোট প্রার্থনা করতে পারেন। এই অরাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে যে, নেতৃত্ব কেবল রাজনৈতিক প্রভাবশালীর হাতে নয়, বরং প্রকৃত মেধাবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তির হাতে থাকবে।
গকসু নির্বাচনের আরেকটি বিশেষত্ব হলো এখানে কোনো প্যানেল ব্যবস্থা নেই। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের অধীনে সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে প্রার্থীরা দলবদ্ধভাবে প্রচার চালান, সেখানে গকসুতে প্রতিটি প্রার্থীকে এককভাবে নিজেদের জন্য লড়তে হয়। একজন প্রার্থীকে আলাদাভাবে তার নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করতে হয়, শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে নিজের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা তুলে ধরতে হয় এবং ব্যক্তিগতভাবে তাদের আস্থা অর্জন করতে হয়। এই স্বতন্ত্র লড়াইয়ের কারণে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর প্রভাব থাকে না, এবং শিক্ষার্থীরা প্রার্থীর ব্যক্তিগত গুণাবলী ও প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে তাদের ভোট দিতে পারেন।
প্যানেল প্রথার অনুপস্থিতি নির্বাচনী প্রচারণার ধরনও বদলে দিয়েছে। এখানে কোনো বড় প্যানেলের ব্যানার, পোস্টার বা প্রচারপত্র দিয়ে ক্যাম্পাস ছেয়ে ফেলা হয় না। বরং, প্রার্থীরা ছোট ছোট দল গঠন করে শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি মতবিনিময় করেন। তারা ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে গিয়ে নিজেদের ভাবনা, পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই জানতে পারে তাদের পছন্দের প্রার্থী আসলে কী চায় এবং কীভাবে তাদের জন্য কাজ করতে চায়। এই সরাসরি মিথস্ক্রিয়া প্রার্থীর সাথে শিক্ষার্থীর একটি বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক তৈরি করে, যা অন্য কোনো প্যানেলভিত্তিক নির্বাচনে বিরল।
গকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া তাই কেবল একটি নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যম নয়, এটি একটি সুস্থ, গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থার প্রতীক। এটি শিক্ষার্থীদের এমন একটি প্ল্যাটফর্ম দেয়, যেখানে তারা রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়ে নিজেদের যোগ্য ও সৎ প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। এই প্রক্রিয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সুস্থ বিতর্কের পরিবেশ তৈরি করে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার ও মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এর ফলস্বরূপ, গকসু দেশের ছাত্র সংসদগুলোর মধ্যে এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আরটিভি