News update
  • OIC Welcomes Independent Review Panel’s Report on UNRWA     |     
  • Train catches fire due to intense heat     |     
  • BNP expels 73 leaders for contesting first phase of UZ polls     |     
  • Chuadanga witnesses season’s highest temperature at 42.7°C     |     
  • Dhaka, Bangkok to work together to deal with Rohingya issue: FM     |     

হজে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির দায়ে মেহেরপুরের মন্টু গ্রেপ্তার

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ইন্টারভিউ 2022-06-29, 9:44am

img_20220629_094349-6ceca3fd59f411b6900f95a002cfb7491656474274.jpg




মেহেরপুরের মতিয়ার রহমান মন্টু এক সময় ‘দুর্ধর্ষ ডাকাত' ছিলেন৷ ‘বোমায়' দুই হাত হারানোর পর ‘আন্তর্জাতিক ভিক্ষুক' বনে যান৷ মন্টুকে এবার হজের সময় ভিক্ষাবৃত্তির দায়ে গ্রেপ্তার করেছে মদিনার পুলিশ৷

গাংনি উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের মানুষ জানে, ৫৮ বছর বয়সি মন্টু ভিক্ষা করতে বহুবার সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারতে গেছেন৷ আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, গ্রামে কিছু না করলেও বিঘা-বিঘা সম্পত্তির মালিক তিনি৷  

মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে ভাটাপাড়ায় মন্টুর সংসার৷ স্ত্রী স্বীকার করেছেন, তার স্বামী একাধিকবার ভারত ও সৌদি আরবে গেছেন৷ করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর তিনি যেতে পারেননি৷ তবে সৌদি আরব গিয়ে তার স্বামী কী করেন তা বলতে পারেননি তিনি৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, ‘‘বছর বিশেক আগেও মন্টু ডাকাতি করতেন৷ বোমার আঘাতে তার দুই হাতের কব্জি উড়ে যায়৷ 

গ্রামে মন্টু কিছুই করেন না৷ অথচ প্রতিবছর পাঁচ-সাত লাখ টাকা ব্যয় করে হজ ভিসায় সৌদি আরবে যান৷ সেখানে ভিক্ষা করে অনেক টাকা আয় করেন৷’’ 

সোহেল আহমেদ আরও বলেন, ‘‘হাত হারানোর পর তিনি বিদেশে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ প্রতিবার গ্রামে ফিরে প্রথমে জমি কেনেন৷ এভাবে ৩৫-৪০ বিঘা জমি তিনি কিনেছেন৷”

ভিক্ষাবৃত্তির দায়ে ২২ জুন মদিনায় গ্রেপ্তার হওয়া মতিয়ারকে বাংলাদেশ হজ মিশনের কর্মীরা থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন৷  মতিয়ার সৌদি আরবে যান ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে৷ গত ২৫ জুন ওই এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়৷

মন্ত্রণালয়েরর উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠি স্থানীয় উপজেলার প্রশাসনকেও পাঠানো হয়েছে৷ প্রশাসনের মাধ্যমে সেই চিঠি গেছে ইউনিয়ন পরিষদের কাছে৷ উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এরই মধ্যে এ ব্যাপারে ইমিগ্রেশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ দেশে ফিরলেই তাকে যেন গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাকে যে এজেন্সি পাঠিয়েছে তাদের নিবন্ধনও বাতিল করা হবে৷”

ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, ‘‘ইউএনওর মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে পুরো বিষয়টি আমি জানতে পারি৷ হজের নামে মদিনা শরীফে ভিক্ষার ঘটনা দেশের জন্য এবং আমাদের জন্য খুবই লজ্জার৷ তার পাসপোর্ট অনুসন্ধান করলে প্রমাণিত হবে তিনি আন্তজার্তিক ভিক্ষুক৷ তিনি আইনপ্রযোগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে ভিক্ষা করতে বিভিন্ন মুসলিম দেশে ঘুরে বেড়ান৷’’ 

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী খানমও মনে করেন, মতিয়ার রহমান মন্টু দেশের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন'৷ এ ঘটনায় বাংলাদেশের সরকারকে বিব্রত হতে হয়েছে৷

তিনি বলেন, ‘‘মন্টু সম্পর্কে তদন্ত শুরু করেছি৷ যেহেতু হজ ভিসায় গেছে, তাই হজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব না৷ তবে দেশে এলে তার বিরুদ্ধে আইনগত সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ ”

সিন্দুরকোটা গ্রামের কেউ কেউ মতিয়ার রহমানকে ‘বোমা মন্টু' বলেন৷ কয়েকজন মন্টুর গবাদিপশুর ব্যবসা থাকার কথা জানালেন৷ 

মটমুড়ার ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, ‘‘মন্টু অনেকবার হজ ভিসায় সৌদি আরব গেছে৷ তবে গ্রামে কখনও তাকে নামাজ পড়তে দেখিনি৷’’ 

গ্রামের চা দোকানদার হোসেন খন্দকারের দাবি, মন্টু হজে গেছেন ‘১২/১৪ বার'৷ তিনিও বললেন, সৌদিতে ভিক্ষা করে ‘বিপুল অর্থ এনে সম্পদ গড়েছেন' ওই ব্যক্তি৷ 

দুই হাত না থাকলেও মন্টু নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারেন বলে জানালেন তার স্ত্রী মমতাজ পারভীন৷ সর্বশেষ ২১ জুন স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে তার৷

‘‘তখন তিনি বলেছেন, ‘ভালো আছি, হজ শেষে চলে আসব'৷ ওইদিনের পর থেকে উনার মোবাইল বন্ধ৷ আর যোগাযোগ করা যায়নি৷ ’’

মমতাজ বলেন, ‘‘ভারতে উনি প্রায়ই যান৷ অনেকবার সৌদি আরবে গেছেন হজে৷ বিদেশে গিয়ে উনি কী করেন তা আমি জানি না৷ ’’

মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল জেলা হাজি সমিতিরও সভাপতি৷ তিনি বলেন, ‘‘হজের নামে সেখানে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করা হাজিদের জন্য খুবই লজ্জার ও নিন্দার৷ এমন দু-একজনের অপকর্মের কারণে ভবিষ্যতে হজ ভিসা প্রাপ্তি জটিল হয়ে গেলে সেটাও দুঃখজনক হবে৷ তাই হাবকে এই বিষয়ে আরও সর্তক হতে হবে৷’’  তথ্য সূত্র ডয়চে ভেলে বাংলা।