News update
  • IAEA Chief Calls for Renewed Commitment to Non-Proliferation     |     
  • UN Aid Chief Warns Humanitarian Work Faces Collapse     |     
  • Arab-Islamic Summit yields limited action over Israeli strike on Doha     |     
  • National Consensus Commission term extended till October 15     |     
  • EU Helping BD prepare for free, fair elections: Envoy Miller     |     

জাতিসংঘের আসন্ন অধিবেশনে বিভিন্ন স্বার্থের উপর আলোকপাত করা হবে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক কুটনীতি 2023-09-17, 8:03am

01000000-0aff-0242-41bb-08dbb6e68a38_cx0_cy10_cw0_w408_r1_s-2-7194f79c9c0120c609da1ac41778564b1694916222.jpg




আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যখন একত্রিত হবেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ সম্ভবত দ্বিতীয় বছরের মতো আলোচনার সবচেয়ে বড় বিষয় হতে পারে। তবে অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের জন্য উন্নয়ন, অর্থনীতি এবং জলবায়ুসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে আলোকপাত করার আশা করছে।

ইন্দোনেশিয়ায় আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন, ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন, কিউবায় জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশগুলির অনানুষ্ঠানিক জোট গ্রুপ অফ ৭৭ প্লাস-এ মিলিত হওয়ার পর, বিশ্ব নেতারা এই বছরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন উচ্চ মাপের নেতা যদিও নিউইয়র্ক এড়িয়ে যাচ্ছেন, তারপরও ১৪০ টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এতে অংশ নিচ্ছেন।

বিশ্বের নানা স্থান যেহেতু আক্ষরিকভাবে অগ্নিগর্ভ, সেখানে কথা বলার মতো অনেক কিছুই থাকবে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অধিবেশন শুরুর আগে সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা এমন এক সময়ে একত্রিত হব, যখন মানবতা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই জগাখিচুড়ি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পথের দিশা দেবেন, এমন আশায় সারা বিশ্বের লোকজন তাদের নেতাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।"

গুতেরেস বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ ভূ-রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির উপর মিডিয়ার মনোযোগসহ এই যুদ্ধটি সপ্তাহের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিষয় হিসাবে নিশ্চিতভাবে স্থান পাবে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তার দেশ আক্রমণ করার পর এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সশরীরে জেলেন্সকির যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদের বক্তৃতা দেয়া ছাড়াও, তিনি ইউক্রেন নিয়ে পরের দিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জেলেন্সকি এর আগের অধিবেশনে শুধুমাত্র দূরবর্তী অবস্থান থেকে কাউন্সিলকে ব্রিফ করেছেন। এছাড়া যদি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বৈঠকে তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং দুই নেতা একই কক্ষে মুখোমুখি হন তখন কিছু কূটনৈতিক নাটকেরও সম্ভাবনা আছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইউএন ডিরেক্টর রিচার্ড গোয়ান বলেছেন, জেলেন্সকি সম্ভবত মিডিয়ার অনেক মনোযোগ পেতে পারেন, তবে অন্যান্য নেতাদের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের অগ্রাধিকারগুলিকে ছাপিয়ে না দেওয়ার বিষয়ে তার সতর্ক হওয়া উচিত।

তিনি ভিওএ কে বলেন, "আমি মনে করি, ইউক্রেনের পরিস্থিতি সম্পর্কে বৃহত্তর বিশ্বের সাথে কথা বলার এবং যুদ্ধ সম্পর্কে রাশিয়ার কিছু বিরুদ্ধে সবার মনোযোগ সন্নিবেশনের এবং সেগুলোকে পিছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা জেলেন্সকির জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ। তবে, জেলেন্সকিকে সচেতন থাকতে হবে যে উন্নয়নশীল দেশগুলির অনেক নেতা আছেন যাদের নিজেদেরই সমস্যা রয়েছে - যেমন ঋণ এবং দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি - এবং তারা এই বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলতে চান, শুধু রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে নয়।"

উন্নয়নশীল দেশগুলির নেতারা যা আশা করছেন তা হল টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু প্রশমন এবং অভিযোজন ছাড়াও মহামারী প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ। অধিবেশন চলাকালীন সপ্তাহে ওই সব বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদা বৈঠক হবে।

গুতেরেস টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি নিয়ে দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে উচ্চ-পর্যায়ের সপ্তাহের সূচনা করবেন।

২০১৫ সালে, নেতারা ১৭টি লক্ষ্যে অগ্রগতির দিকে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যার প্রধান লক্ষ্য ছিল ক্ষুধা ও চরম দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো। এখন ২০৩০ এর সময়সীমার অর্ধেক সময়ে এসে, এসডিজির মাত্র ১৫% সঠিক পথে রয়েছে। বাকিগুলো হয় খুব কম অগ্রগতি করছে কিংবা ২০১৫-এর আগের স্তরে পিছিয়ে যাচ্ছে।

মহামারী শুরু হওয়ার সাথে সাথে একটি প্রজন্মের মধ্যে প্রথমবারের মতো চরম দারিদ্র্যের সাথে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘ বলেছে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, চলতি দশকের শেষ নাগাদ সাড়ে ৫৭ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত হবে এবং আরও ৬০ কোটি মানুষ ক্ষুধার সম্মুখীন হবে।

গুতেরেস সংবাদদাতাদের বলেছেন, আগামী সপ্তাহে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজিগুলিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনাই তার প্রধান লক্ষ্য। এর একটি বড় অংশ হল অর্থায়ন, এবং তিনি এসডিজিগুলিকে “পুনরুদ্ধার” করতে সাহায্য করার জন্য দেশগুলির কাছ থেকে বছরে ৫০ হাজার কোটি ডলারের একটি উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করার আশা করছেন।

নেতারা এই দশকের শেষ নাগাদ লক্ষ্য পূরণের জন্য "সাহসী, উচ্চাভিলাষী, ত্বরান্বিতকরণ, ন্যায্যতা এবং রূপান্তরমূলক পদক্ষেপের" প্রতিশ্রুতি দিয়ে, সোমবারের শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে একটি রাজনৈতিক ঘোষণা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

বুধবার, মহাসচিব একটি জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করছেন। এতে তিনি ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সরকারী নেতাদের একত্রিত করছেন। তিনি বারবার সতর্ক করেছেন যে জলবায়ু বিপর্যয় রোধে পদক্ষেপ নেয়ার সময় ফুরিয়ে আসছে।

স্বাস্থ্য খাত, বিশেষ করে মহামারী প্রতিরোধ, প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়া বিষয়ক বৈঠকে কোভিড-১৯ থেকে নেয়া অভিজ্ঞতা নিয়ে বুধবার নেতারা আলোচনা করবেন। বিশেষ করে টিকাদান কর্মসূচি এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে সমর্থন করার মতো উপাদানগুলির উপর আলোকপাত করার পাশাপাশি, বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, এমন দেশগুলির মধ্যে স্বাস্থ্য বৈষম্য এবং বৈষম্যগুলি বৈঠকে খতিয়ে দেখা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস আধানম ঘেব্রেইসাস, মহামারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে বলেছেন, "কোভিড-১৯ মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি বলতে চাই, স্বাস্থ্য খাত যখন ঝুঁকির মধ্যে থাকে, তখন সবকিছুই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।"

এছাড়া, সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি, শত শত পার্শ্ববৈঠকও হবে। নেতাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে – মহাসচিব গুতেরেস অন্তত শতাধিক বৈঠকে মিলিত হবেন। জরুরি ইস্যুগুলি নিয়েও ছোট ছোট কিছু বৈঠক হবে। যেমন সুদানের মানবিক পরিস্থিতি, হাইতির নিরাপত্তা সঙ্কট এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের কীভাবে সাহায্য করা যায়, সে বিষয় সমূহ ওইসব বৈঠকে আলোচিত হবে।

থেমে থাকা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার বিষয়ে কী করা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সৌদি আরব এবং আরব লীগ আয়োজিত একটি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে। তবে এতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের মধ্যে একমাত্র নেতা যিনি এই বছরের সাধারণ পরিষদে যোগ দিচ্ছেন। বাকীরা অর্থাৎ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং ফরাসি, রুশ ও চীনের প্রেসিডেন্টরা বিভিন্ন কারণে এবারের সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন না।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারগুলি তুলে ধরবেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড বৃহস্পতিবার সংবাদদাতাদের বলেন, "তিনি সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন, যেখানে তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকি মোকাবেলায়, মানবাধিকার রক্ষায় এবং বৈশ্বিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে আমাদের দেশের নেতৃত্ব পুনর্নিশ্চিত করবেন।"

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এসডিজি’র প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করবে এবং সেগুলি পূরণের জন্য তারা কীভাবে কাজ করছে, তা নিয়ে আলোচনা করবে।

অধিবেশন চলাকালীন পুরো সপ্তাহ জুড়ে বিশ্বের নাগরিকরা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে উন্নত করতে এবং ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব নেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তথ্য সূত্র ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।