News update
  • CA Yunus pays homage to Liberation War martyrs on Victory Day     |     
  • Bangladesh capital market extends losing streak for second day     |     
  • Bangladesh celebrates Victory Day Tuesday     |     
  • 'Different govts presented history based on their own ideologies': JU VC     |     

বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতে ভারতের 'পেয়াজ কূটনীতি'

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক কুটনীতি 2024-04-11, 11:02am

ksfafjao-1c88c409b503120ad701cf265b74f22c1712811779.jpg




ভারতে বেশ কিছুদিন ধরেই পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটানের মতো কয়েকটি দেশে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পেঁয়াজ পাঠানো হচ্ছে।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পেঁয়াজের দাম বাড়লেও ভারত থেকে ওই দেশগুলিতে কম দামে পেঁয়াজ রফতানিকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ ভারতের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

রফতানিকারকদের অভিযোগ, ভারতীয় কৃষকদের এক কেজি পেঁয়াজের জন্য ১২ থেকে ১৫ টাকা দেওয়া হয় কিন্তু সেই একই পেঁয়াজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছালে তার দাম কেজি প্রতি ১২০ টাকা হয়।

এখন প্রশ্ন হলো রফতানি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কেন ভারত সরকার নির্বাচিত দেশগুলোর কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করছে? পেঁয়াজ রফতানি কি তাহলে ভারতের কাছে কূটনীতির একটা অংশ হয়ে উঠেছে?

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রীতি একেবারে নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ভারত তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রে খাদ্যপণ্য, প্রয়োজনীয় সামগ্রী রফতানি করেছে এবং পরিষেবা দিয়েছে।

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পেঁয়াজ এবং তার দাম ভারতে বেশ সংবেদনশীল একটি বিষয়। বিভিন্ন সময়ে পেঁয়াজের দাম নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের নির্বাচনে পেঁয়াজের সবচেয়ে প্রত্যক্ষ প্রভাব সম্ভবত দেখা গিয়েছিল ১৯৯৮ সালে। মনে করা হয়, ওই বছর দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের জন্য দায়ী ছিল পেঁয়াজের চড়া দাম।

আবার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভাল থাকাটাও পাশের দেশের জন্য কল্যাণকর। সেই কারণেও বন্ধুত্বপূর্ণ আদানপ্রদান চলতে থাকে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, পেঁয়াজের ঘাটতির আশঙ্কায় ডিসেম্বর মাস থেকে রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। গত মাসে সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে।

তবে ভারত সরকার রাজনৈতিক চ্যানেল মারফত একথা একপ্রকার মেনে নিচ্ছে যে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।

এদিকে, পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর থেকেই কৃষকরা এর বিরোধিতা করে আসছেন। সরকারের তরফে ঘোষণার পর মহারাষ্ট্রেও বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। নাসিকের লাসলগাঁও, নন্দগাঁও, পিপলগাঁও এবং উমরানেতে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা প্রদর্শনও করেন। প্রসঙ্গত, এই অঞ্চলগুলি পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র।

নিষেধাজ্ঞার মাঝেই রফতানি

নিষেধাজ্ঞা চলার মধ্যেই ভারত থেকে একাধিক দেশে পেঁয়াজ রফতানি করা হয়েছে। সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে ভারত।

অন্যদিকে, পহেলা মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার এমনটাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। তবে পরিমাণের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হলেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, ত্রৈমাসিক ‘কোটা’ হিসাবে মাসে ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ রফতানি করা যাবে না।

গত মাসে ভারত থেকে তিন হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ত্রৈমাসিক বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত আরও ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, ভারতে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি ভুটানে ৫৫০ টন, বাহরাইনে ৩ হাজার টন এবং মরিশাসে ১২০০ টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববাজারে সাধারণত কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে থাকে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।

ভারত, পাকিস্তান ও মিশর পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করায় এই দাম বেড়েছে।

দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্রতি টন ৫০০ থেকে ৫৫০ ডলার দরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পেঁয়াজ পাঠানোর তথ্য পেয়েছেন রফতানিকারকরা। যদি আমরা ভারতীয় টাকার নিরিখে বলি তাহলে এই মূল্য কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ কিনে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছেন।

দশ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলে আমদানিকারকরা প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মুনাফা পাবেন।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ প্রতিম রঞ্জন বসু বিবিসিকে জানিয়েছেন, পেঁয়াজ কূটনৈতির অঙ্গ হয়ে ওঠার বিষয়টি নতুন নয়।

“মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে পেঁয়াজ পলিটিকালি সেন্সিটিভ বিষয়। এই যে এক দেশের সরকার অন্য দেশের সরকারকে পেঁয়াজ পাঠাচ্ছে, যাকে কূটনীতির অঙ্গ হিসেবে দেখা হচ্ছে, এই বিষয়টি কিন্তু নতুন নয়। এর আগে গম, চিনির ক্ষেত্রেও হয়েছে এবং এটা আগামী দিনেও বাড়বে,” বলেছেন তিনি।

মি. বসু বিষয়টা ব্যাখ্যা করে বলছেন, খাদ্যপণ্য এবং বিভিন্ন সামগ্রীর উৎপাদনের নিরিখে কোনও কোনও দেশ বিশ্বের বৃহত্তর সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়েছে। তাদের উপর অন্যান্য অনেক দেশ নির্ভর করে। উৎপাদনকারী দেশ চাইলে ইচ্ছে মতো রফতানি বন্ধ করতেই পারে, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ বিষয়টি স্বীকার করবে না।

“যেমন চীন মাঝে মাঝেই সেমিকন্ডাক্টর, অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিকাল ইনগ্রেডিয়েন্ট-এর রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। চীন মনে করলে এটা করতেই পারে কারণ সারা পৃথিবী এইরকম কয়েকটি বিষয়ের ক্ষেত্রে তাদের উপর নির্ভরশীল,” বলেছেন প্রতিম রঞ্জন বসু।

একইসঙ্গে তার মতে, “খাবার নিয়ে রাজনীতি হবেই। এটাকে এড়ানো যাবে না।” কারণ রাজনৈতিক দিক থেকে খাদ্যপণ্যের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।

তবে, বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য নিয়মের ব্যতিক্রম করাটাও নতুন ‘রীতি’ নয়। এক্ষেত্রে কুইড প্রো কুও বা সোজা বাংলায় বলতে গেলে ‘অনুগ্রহের পরিবর্তে অনুগ্রহ’-এর মতো বিষয়ও থাকবে।

মি. বসু বলেছেন, “কোনও দেশ মনে করতেই পারে যে কোনও বন্ধু রাষ্ট্রকে তাদের প্রয়োজন। সেই বন্ধু রাষ্ট্রকে তারা কিছু পাঠাতে পারে। কেন সেটা পাঠাবে তার কারণ হিসাবে কুইড প্রো ক্যুও-ও থাকবে।”

অভিযোগ

পেঁয়াজের এই রফতানি শুধুমাত্র ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এক্সপোর্টস লিমিটেডের (এনসিইএল) মাধ্যমে করা হচ্ছে। এনসিইএল সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা।

বেসরকারি সংস্থাগুলি পেঁয়াজ রফতানি করছে না। এক দেশের সরকার অন্য দেশের সরকারের কাছে পেঁয়াজ রফতানি করছে। এ প্রক্রিয়ায় যে সরকার পেঁয়াজের বরাত দিয়েছে তারা আমদানিকারকদের জন্য কোটা নির্ধারণ করে দেয়।

কৃষি বাজার পোর্টালে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে এই রফতানি হতে পারে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেলেও সরকারি সংস্থাগুলি দুরেই থেকেছে।

হর্টিকালচার প্রোডিউস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন পেঁয়াজ রফতানির প্রক্রিয়া এবং দাম নির্ধারণের বিষয়ে সরকারের কাছে স্পষ্টতা দাবি করেছে। এই বিষয়ে ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এক্সপোর্টস লিমিটেডকে পাঠানো একটি ই-মেল-এ তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক দামের চেয়ে কম দামে বিদেশে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

তবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এনসিইএল কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের বলেছেন যে, পেঁয়াজ রফতানি এবং এর দাম সম্পর্কিত প্রক্রিয়াটি তাদের এখতিয়ারের বাইরে, কারণ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি।

প্রসঙ্গত, খাবারে পেঁয়াজের ব্যবহার আজ থেকে নয়। চার হাজার বছর আগেও বিভিন্ন খাবারে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হতো।

এটি মেসোপটেমিয়ান যুগের একটি লেখা থেকে সে কথা জানা গিয়েছিল যা ১৯৮৫ সালে একজন ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রথম আবিষ্কার করেন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পেঁয়াজের চাষ হয়।

চীন ও ভারত মিলে বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ৪৫ শতাংশ (৭ কোটি টন) পেঁয়াজ উৎপাদন করে।

তবে খাওয়ার নিরিখে বিশ্বের শীর্ষ দেশের মধ্যে নেই এই দুটি দেশ।

২০১১ সালে জাতিসংঘের এক গবেষণায় দেখা গেছে, লিবিয়ার একজন মানুষ বছরে গড়ে ৩৩.৬ কেজি পেঁয়াজ খায়।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশের রান্নায় এর ব্যবহার প্রচলিত। এর কারণ পেঁয়াজের পুষ্টিগত গুণ এবং তার স্বাদ বলে মনে করা হয়। বিবিসি বাংলা