News update
  • Fire breaks out at jacket factory in Chattogram     |     
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     
  • Imported fruit prices surge by up to Tk 100 per kg     |     
  • 35% of air pollution in BD originates from external sources: Experts     |     

পাঁচ বছর পর নরেন্দ্র মোদী-শি জিনপিং বৈঠক রাশিয়ার মাটিতে

বিবিসি বাংলা কুটনীতি 2024-10-24, 10:14am

rtytr546546-dac8d9c58b985c40d412b4082bc178d51729743298.jpg




ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ বছর পর এই প্রথম মুখোমুখি কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। তাদের দুজনের মধ্যেকার এই বৈঠক আজ (বুধবার) রাশিয়ার কাজান শহরে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে বা অবকাশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২০২০ সালের জুনে লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক একরকম তলানিতে ঠেকেছিল। তারপর এই প্রথম ভারত ও চীনের সর্বোচ্চ নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসলেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, দু’দেশের সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনাটাই যে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত – প্রধানমন্ত্রী মোদী বৈঠকে এই বিষয়টির ওপরেই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন।

অন্য দিকে প্রেসিডেন্ট শি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে চীন ও ভারত উভয়েরই কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব’ আছে।

নরেন্দ্র মোদী ও শি জিনপিং শেষবার নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেছিলেন ব্রাসিলিয়াতে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে। সেটাও ছিল একটি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন, যার আয়োজন করেছিল ব্রাজিল – এবং মোদী-শি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই সম্মেলনের অবকাশেই।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ের আলোচনায় একটি বড় ‘অগ্রগতি’ অর্জিত হওয়ার মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই দুই নেতার মধ্যে এই বৈঠকটি সম্পন্ন হল।

ওই সমঝোতায় স্থির হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যেকার প্রকৃত সীমান্তরেখা বা এলএসি-তে ২০২০ সালের মে মাসের আগে দু’পক্ষ যেভাবে সীমান্তে টহল দিত ঠিক সেই অবস্থাতেই আবার ফিরে যাওয়া হবে।

লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ২০২০ সালের জুন মাসে দু’দেশের সেনাদের মধ্যে এক রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর থেকে সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, দিল্লি ও বেজিং-এর সম্পর্কেও তৈরি হয় প্রবল তিক্ততা।

এরপর দুই দেশই সীমান্তে হাজার হাজার বাড়তি সেনা মোতায়েন করতে শুরু করে।

এরপর সীমান্তে ‘ডি-এসক্যালেশন’ বা উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে, কিন্তু তাতে সত্যিকারের অগ্রগতি বা ‘ব্রেক থ্রু’ অর্জিত হল মাত্র তিনদিন আগেই।

ঠিক এর পরই যেভাবে দুই দেশ সর্বোচ্চ নেতাদের মধ্যে বৈঠকের ব্যাপারে একমত হয়েছে, সেটাকে পর্যবেক্ষকরা দিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যেকার সম্পর্কে দারুণ উন্নতির লক্ষণ বলেই মনে করছেন।

বৈঠকের শুরুতে মোদী যা বলেছেন

চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার সূচনায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্যের অংশবিশেষ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।

সেখানে তিনি বলেছেন, “আমাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হচ্ছে পাঁচ বছর বাদে।”

“আমরা বিশ্বাস করি ভারত-চীন সম্পর্ক শুধু আমাদের দুই দেশের মানুষের জন্যই নয়, বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও প্রগতির জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

এরপর তিনি দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও কিছু মন্তব্য করেন।

নরেন্দ্র মোদী সেখানে বলেন, “সীমান্তে গত চার বছরে কিছু কিছু ইস্যু তৈরি হয়েছিল, সেগুলোর ব্যাপারে যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে আমরা তাকে স্বাগত জানাই।”

“সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখাটা আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”

“আর আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি হতে হবে পারস্পরিক আস্থা, পারস্পরিক মর্যাদা ও পারস্পরিক সংবেদনশীলতা।”

দু’পক্ষই বৈঠকে ‘খোলা মনে’ কথাবার্তা বলবে এবং সেখানে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী মোদী আশা প্রকাশ করেন।

শি জিনপিং-এর বক্তব্যে যা ছিল

চীনের প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, কাজানে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করতে পেরে আনন্দিত।

“পাঁচ বছর পরে আমরা নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসছি। শুধু আমাদের দুই দেশের মানুষরাই নন, আন্তর্জাতিক বিশ্বও আমাদের এই বৈঠকের দিকে সতর্ক নজর রাখছে।”

চীন ও ভারত, উভয়েই যে পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর অন্যতম সে কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট শি আরও বলেন, বিশ্বের দুটি প্রধান উন্নয়নশীল দেশ এবং ‘গ্লোবাল সাউথে’র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে উভয় দেশই তাদের আধুনিকায়নের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্ব অতিক্রম করছে।

এই পটভূমিতে দুই দেশ যদি তাদের ‘ইতিহাসের ধারা’ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ‘সঠিক দিশা’য় থাকতে পারে, তাহলে তা উভয় দেশ ও উভয় দেশের মানুষের মৌলিক স্বার্থকে সবচেয়ে ভালভাবে রক্ষা করতে পারবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

শি জিনপিং আরও বলেন, “আমাদের দুই দেশের মধ্যে যাতে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ে, আমরা যাতে নিজেদের মধ্যেকার মতবিরোধ ও মতানৈক্য ঠিকমতো সামলাতে পারি এবং আমাদের পরস্পরের ‘উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা’র বিকাশে সহায়তা করতে পারি সেটা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

ভারত ও চীন উভয়ের জন্যই তাদের ‘আন্তর্জাতিক দায়িত্ব’ পালন করাটাও যে খুব জরুরি, সে কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।

তার কথায়, “উন্নয়নশীল দেশগুলোর শক্তি ও ঐক্য বিকশিত করতে আমাদেরকে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিকতা (মাল্টিপোলারাইজেশন) ও গণতন্ত্রের প্রসারেও অবদান রাখতে হবে।”

সম্পর্কে উন্নতি সত্যিই হবে?

২০২০র গ্রীষ্মে গালওয়ান ভ্যালিতে সীমান্ত সংঘর্ষের পর দুই নেতার মধ্যে কয়েকবার ‘ব্রিফ ইন্টারঅ্যাকশন’ বা ‘সংক্ষিপ্ত মোলাকাত’ হয়েছে ঠিকই – তবে তার কোনওটাই সেই অর্থে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছিল না।

যেমন ২০২২ সালের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে নরেন্দ্র মোদী ও শি জিনপিং-এর দেখা হয়েছিল।

এরপর গত বছরের অগাস্টেও দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে তারা দু’জন নিজেদের মধ্যে সৌজন্য বিনিময় করেছিলেন।

কিন্তু এগুলোর কোনওটিতেই বাণিজ্য, অর্থনীতি বা অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি – যেটা অবশেষে আজ হল।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, আজ প্রায় চার বছর হল ভারত ও চীনের মধ্যে কোনও ‘ডাইরেক্ট ফ্লাইট’ অপারেট করে না – অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কোনও বিমান পরিষেবা নেই।

এমন কী চীন-সহ বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের কোম্পানিগুলোর ভারতে লগ্নির ক্ষেত্রেও বাড়তি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নিরাপত্তা ছাড়পত্রের শর্ত যোগ করা হয়েছে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এখন দুই দেশের এই সব বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও মানুষে-মানুষে সম্পর্ক যদি ‘স্বাভাবিক’ অবস্থায় ফেরার লক্ষণ দেখা যায়, তখনই বলা যাবে নরেন্দ্র মোদী ও শি জিনপিং-এর বৈঠক সফল হয়েছে।

তবে রাশিয়ার মাটিতে এই বহুপ্রতীক্ষিত বৈঠকটি যে অবশেষে হতে পারল, সেটাকেও অনেকে দুই দেশের সম্পর্কে বরফ গলার ইঙ্গিত বলেই ধারণা করছেন।