News update
  • Extra SIMs beyond 10 being deactivated from Saturday     |     
  • China's Xi promises to protect free trade at APEC as Trump snubs summit     |     
  • UN Probes Iran Crackdown, Alarms Over Spike in Executions     |     
  • UN Aid Push Continues Across Gaza Despite Airstrike Threats     |     
  • Hurricane Melissa displaces thousands across Caribbean     |     

বিপজ্জনক নতুন যুগের ইঙ্গিত দিচ্ছেন ট্রাম্প ও পুতিন

পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক কুটনীতি 2025-11-01, 12:06pm

rfewrwqrwq-aec867c436734fa11c77b52f8b5686111761977173.jpg




পারমাণবিক শক্তি নিয়ে ক্রেমলিনের অব্যাহত দম্ভ অবশেষে হোয়াইট হাউসে সম্ভবত আলোড়ন তুলেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরুর নির্দেশ দেওয়ার মধ্য দিয়ে যা স্পষ্ট হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের চিফ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রতিবেদক ম্যাথিউ চান্সের এ নিয়ে বিশ্লেষণের অনুবাদ তুলে ধরা হলো।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘অন্যান্য দেশগুলো পরীক্ষামূলক কর্মসূচি চালানোর কারণে, আমি সমতার ভিত্তিতে যুদ্ধ বিভাগকে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরুর নির্দেশ দিয়েছি।’

ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছিলেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের কিছুক্ষণ আগে এমন ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, চীন তার এই সিদ্ধান্তে কোনো প্ররোচনা দেয়নি। বৃহস্পতিবার একজন প্রতিবেদককে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোর একটি সামরিক হাসপাতাল পরিদর্শন করে তাদের সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার তথ্য দেন। পুতিন দাবি করেন, আরেকটি ‘অজেয়’ রাশিয়ার অস্ত্রের সফল পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরুর নির্দেশ দেন।

রাশিয়ার নতুন পারমাণবিক অস্ত্রটি হলো পসেইডন, যা পরীক্ষামূলক পারমাণবিক শক্তিচালিত পানির নিচের টর্পেডো। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটারেরও বেশি পাল্লার হতে পারে। পুতিন জানান, এটি এখন প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, পসেইডনের ক্ষমতা আমাদের সবচেয়ে উন্নত আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এটি বিশ্বে অনন্য। এই পারমাণবিক অস্ত্রটি আটকানো ‘অসম্ভব’।

এ ছাড়া ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ও বিশাল আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘শয়তান ২’ শীঘ্রই মোতায়েন করা হবে। পুতিনের এই মন্তব্য বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর একটি সাধারণ ঘোষণা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয়বার, যখন পুতিন রাশিয়ার শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্রাগারে যোগ দিতে প্রস্তুত গণবিধ্বংসী নতুন অস্ত্র নিয়ে দম্ভ প্রকাশ করেন।

২০১১ সালে কার্যকর হওয়া ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার সীমিত করতে সম্মত হয়। এ চুক্তির আওতায় উভয় দেশকে তাদের মোতায়েন করা আন্তমহাদেশীয়-পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা নির্ধারিত সীমায় আনতে সাত বছর সময় দেওয়া হয়। চুক্তিটির মেয়াদ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

পসেইডন নিয়ে ঘোষণার মাত্র কয়েকদিন আগে পুতিন জানান, রাশিয়া সফলভাবে একটি পারমাণবিক শক্তি চালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বুরেভেস্টনিক বা স্টর্ম পেট্রেল পরীক্ষা করেছে। রুশ সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, এটি পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহার করে সাবসনিক (শব্দের তুলনায় কম) গতিতে অফুরন্ত সময় ও সীমাহীন দূরত্ব পর্যন্ত উড়তে সক্ষম।  

পারমাণবিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল এই অস্ত্রগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে অবশ্য গুরুতর প্রযুক্তিগত সন্দেহ রয়েছে। যদি এগুলোর মোতায়েনের ঘটনা ঘটে, তবে এজন্য অনেক দূর যেতে হবে।

ক্রেমলিন তার পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারকে সরাসরি সামরিক হুমকি হিসেবে কম বরং কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বেশি দেখে—যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের নজরে আসার জন্য একটি সাশ্রয়ী ও তাৎক্ষণিক উপায়। এর উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনে মস্কো যা চায় তা দ্রুত আদায় করা এবং প্রত্যাখ্যাত ও উসকানি পাওয়া রাশিয়া যে অস্তিত্বগত হুমকির সৃষ্টি করতে পারে, তার দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের মনোনিবেশ করানো।

ইউক্রেন যুদ্ধে ক্রেমলিনের ভাবনায় নতুন করে দুটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। একটি হলো ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হবে কিনা তা নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক রাশিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার দিকে উসকে দিয়েছে। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার বৃহত্তম শহর মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের আশপাশের লক্ষ্যবস্তুগুলোকে হুমকির মুখে ফেলবে। এ ছাড়া ওয়াশিংটনের চাপে মস্কোর সর্বোচ্চ শর্ত মেনে নিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় সমর্থকরা রাজি না হওয়াও রাশিয়ার এই সাম্প্রতিক পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার দিকে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।

নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার কূটনৈতিক অগ্রগতি স্থবির হওয়ার পরই এই পারমাণবিক হুমকির বিষয়গুলো সামনে এলো। কিন্তু ক্রেমলিনের জন্য হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়াও অপ্রত্যাশিত। 

ইউক্রেনে যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করতে ক্রেমলিন ক্রমাগত অস্বীকৃতি জানানোয় হতাশ ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত বুদাপেস্ট শীর্ষ সম্মেলন বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর আগে ট্রাম্প রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ‘পরিকল্পিত’ পারমাণবিক মহড়া তদারকি করতে দেখা গেছে, যেখানে স্থল, সমুদ্র ও আকাশ থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হয়েছিল। এটি ছিল ক্রেমলিনের পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শনের এক  নাটক, কিন্তু এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। 

এর কয়েকদিন পরে পুতিন সামরিক পোশাক পরে কিছুটা অস্বাভাবিকভাবে বুরেভেস্টনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দেন। কিন্তু হোয়াইট হাউস এতে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় এটিও ভেস্তে যায়।

সোমবার এশিয়ার তিন দেশ সফরে আসার পথে ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, আর আমি মনে করি না, পুতিনেরও এটা বলা ঠিক হবে। তার উচিত যুদ্ধ শেষ করা। যে যুদ্ধ এক সপ্তাহ ধরে চলা উচিত ছিল, এখন তা চতুর্থ বছরে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা না করে তার এটাই করা উচিত।

এরপর পুতিন সেই পরামর্শ উপেক্ষা করে এবং তাৎক্ষণিক পারমাণবিক শক্তিচালিত পসেইডন টর্পেডোর পরীক্ষার ঘোষণা দেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে তেজস্ক্রিয় ধ্বংস ডেকে আনতে সক্ষম। এতে বলা যায়, ক্রেমলিন হয়তো অসাবধানতাবশত হোয়াইট হাউসকে নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা আবারও শুরু করার সিদ্ধান্তে টেনে এনেছে।

পারমাণবিক অস্ত্রের সঙ্গে আলোচনা মেশানোর ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান অস্থির বিশ্বের বিপদ সম্পর্কে এটি একটি শিক্ষা হতে পারে। আর ইউক্রেন নিয়ে নিজেদের যুক্তি জোরদারের জন্য ক্রেমলিন যা করতে চেয়েছে, তা সম্ভবত আমাদের সবাইকে নতুন, বিপজ্জনক ও অপ্রত্যাশিত যুগে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।