শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে পরিচালিত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর দাবি উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাস যেতে না যেতেই ছাত্র রাজনীতিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৮ই ফেব্রুয়ারি) রাতে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- কুয়েট ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক সময়ের বড় সংঘর্ষগুলোর একটি ঘটেছে।
ক্যাম্পাসে ফরম বিতরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় রামদা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবদল নেতার ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। ১৯শে ফেব্রুয়ারি তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।
এর আগে, এরকম বড় আকারের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে ছাত্রদলের সংঘর্ষ হয় সেখানে।
এই দুই ঘটনার আগে-পরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
এসব সহিংসতা-সংঘর্ষের ঘটনায় ঘুরে ফিরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথা এলেও, ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে যে এই সবকিছুর মূলে রয়েছে আসলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
কুয়েটে কী হয়েছিলো?
কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মূলত, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে এই দুই সংগঠনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে এবং তাতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে।
এরপর ওইদিন রাতেই সংবাদ সম্মেলন করে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।
এই ঘটনার সূত্রপাত বিষয়ে গতকাল খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আহসান হাবিব বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, "ছাত্রদল সদস্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করছিল। এ সময় যারা ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে চায় তাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হয়। এটাকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।"
এক পর্যায়ে সেখানে "বাইরের লোকজনও সেখানে যুক্ত হয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।"
এই ঘটনার রেশ দেশের অন্যান্য ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে "কুয়েটের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে" উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় বিক্ষোভ মিছিল ডাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
কিন্তু ছাত্রদল এই হামলার দায় স্বীকার করছে না। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "সাধারণ সদস্য ফরম বিতরণ সারা দেশব্যাপী চলছে। তারই অংশ হিসাবে কুয়েটেও, ক্যাম্পাস থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি জায়গায় ফরম বিতরণ হয়েছে।"
কুয়েটের কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীও বেশকিছু ফরম নিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন যে এই ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করেই "বৈষম্যবিরোধী ব্যানারকে ব্যবহার করে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা" মানববন্ধনের আয়োজন ও মিছিল করে বলে তিনি দাবি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও গতকাল রাতে শিবিরিকে "গুপ্ত সংগঠন" উল্লেখ একই কথা বলা হয় এবং তারাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় রাত আটটায় একটি বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়।
মঙ্গলবার রাতে শিবিরও পাল্টা বক্তব্য দেয়। এক বিবৃতিতে তারা বলে, "একটি ছাত্রসংগঠন নিজেরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে বরাবর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের স্টাইলে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপানোর হীন চেষ্টা করে যাচ্ছে।"
ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "কুয়েট ক্যাম্পাসে গত পাঁচই অগাস্টের পর থেকে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের কারণে সেখানে ছাত্র শিবিরের কোনও কমিটি চালু করা হয়নি। ছাত্রদল সেখানে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে।"
শিবিরের নাম কেন আসছে?
ছাত্রদল থেকে দাবি করা হচ্ছে, গতকাল যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, তার সূত্রপাত ঘটিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরতরা, সেখানে শিবির কর্মীও ছিল।
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, "বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে চলা মিছিলের পাশ দিয়ে ছাত্রদলের কর্মীরা হেঁটে গেলে বিনা কারণে 'ধর ধর' বলে তাদের ওপর হামলা চালায়।"
ওই মিছিলের সামনের সারিতে অবস্থানরতরা "ছাত্রশিবির" এমন সন্দেহের কথা প্রকাশ করেন তিনি।
"এটিই সূত্রপাত। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরকে আহত করা হয়। জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। ব্যাপক মারধর করে, তাও অনেকে মিলে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কখনোই এই ধরনের হিংস্র আচরণ করতে পারে না। যাদের ওপর প্রথমে হামলা করা হলো, তারাও ওই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী।"
"শিবির গুপ্ত রাজনীতি করে। বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে লুকায়িত রয়েছে," যোগ করেন তিনি।
শিবিরের প্রতি এই সন্দেহের কারণ কী? জানতে চাইলে তিনি ব্যাখ্যা করেন, "ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চলবে না আন্দোলনে যারা নেতৃত্বে থাকে..পরবর্তীতে শিবিরের কমিটি দেওয়া হলে দেখা গেছে... তারাই শিবিরের কমিটির শীর্ষ পদ লাভ করেছে।"
কথা প্রসঙ্গে এই ছাত্রদল নেতা আরও বলেন যে "শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে রাজনীতি থাকবে না। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের যদি বলে থাকবে না, আমরা সেটিকে সম্মান জানাই। ছাত্রদল তাহলে সেই ধরনের রাজনীতিই করবে।"
"কিন্তু অন্য সকল ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে নির্বিঘ্নে মতাদর্শ প্রচারের জন্য গোপনীয়ভাবে কাজ করা, এটি কোনোভাবেই দেশের জন্য কল্যাণকর না," যোগ করেন তিনি।
শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম যদিও বলেন, এতদিন তারা প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি বলে তা করতে পারেনি।
"এখন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে কাজ করার অনুমতি রয়েছে, সবগুলোতেই শিবিরের কমিটি রয়েছে। আনুমানিক ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছে এখন," বলছিলেন মি. সাদ্দাম।
কুয়েটের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গতকাল সেখানে যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথেই ছিল।
"ইসলামী ছাত্রশিবিরের যেখানে কমিটি-ই নাই, সেখানে ইসলামী ছাত্রশিবির কীভাবে কী করবে?" এমন প্রশ্ন তুলে মি. সাদ্দাম বলেন, "যাচাই-বাছাই করা ছাড়াই তারা হঠাৎ করে দোষারোপ করলো। আবার যুবদলের যে নেতা, তাকে তারা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বহিষ্কার করলো। "
তিনি বলেন, "ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের দাবি ভঙ্গ করে লিফলেট-সদস্য ফরম বিতরণ করছিলো। এখন কেউ যদি নর্মস ভঙ্গ করে ও সাধারণ ছাত্ররা তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়... তাহলে যদি বলে যে সেই জিনিসটা ইসলামী ছাত্রশিবির করছে, এই ব্লেইমিং বা ট্যাগিং তো অনাকাঙ্ক্ষিত।"
"সাধারণ ছাত্রকে এই ধরনের ট্যাগিং দিয়ে মারধোর, নির্যাতন, অত্যাচারের সংস্কৃতি থেকে বের না হয়ে আসলে এদের জন্য খুব ভালো পরিণতি অপেক্ষা করছে না," যোগ করেন তিনি।
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থেকে অভিযোগ উঠছে যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মূলত ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে তাদের কার্যক্রম চালায় যদিও এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন মনে করে প্ল্যাটফরমটি।
কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বিবিসি বাংলাকে বলেন, "শিবিরের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবুও তৃণমূল পর্যায়ে যদি কিছু ঘটে, আমাদেরকে কেউ জানালে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।"
"বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনুপ্রবেশের মাধ্যমে নিজেদের পলিসি থেকে সরে অন্য কোনও কাজ করাটা মানবে না। তবে আমার মনে হয়, এটা বড় আকারে ঘটছে না," যোগ করেন তিনি।
আর গতকালের হামলাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য তিনি "ফুটেজ বিশ্লেষণ করা থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তদন্ত" করার পরামর্শ দেন।
ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে দ্বন্দ্ব কেন?
আওয়ামী লীগ ও এর সাথে সম্পর্কিত সংগঠনগুলো ছাড়া প্রায় সকল ছাত্র সংগঠন একযোগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শামিল হয়েছিলো।
কিন্তু সরকার পতনের কয়েক মাস যেতে না যেতেই বিদ্যমান ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে কোন্দল বেড়েছে এবং বাড়তে বাড়তে সেটি সংঘর্ষেও রূপ নিতে দেখা যাচ্ছে।
বর্তমান সময়ে সক্রিয় প্রধান তিনটি ছাত্র সংগঠনের সাথে কথা বলা যা জানা গেছে, তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে ছাত্রদলের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের দূরত্ব তৈরি হয়েছে এবং তা বিরোধে রূপ নিয়েছে।
কিন্তু এই বিরোধ কেন? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরিফ সোহেল বলেন, "আমাদের সাথে দূরত্ব ক্ষেত্রবিশেষে শিবিরেরও হয়েছে। এটা যে কারও সাথেই হতে পারে। কারণ আমরা বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনীতি চাই।"
এদিকে, ছাত্রদলের সাথে বিরোধ না থাকলেও মতানৈক্য আছে উল্লেখ করে ছাত্রশিবিরের নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, "আমরা সহনশীলতার সাথে তাদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করছে।"
তিনি বলেন, "ক্ষমতা বা গঠনমূলক কাজের জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্রদের আকর্ষণ যখন আমাদের দিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই বিষয়গুলো তারা ভালোভাবে নিতে পারছে না।"
"আমরা দোকান দখলের, স্ট্যান্ড দখলের, তাদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলছি। তাই হয়তো আমাদের বিষয়ে তাদের আপত্তি তৈরি হচ্ছে, ঈর্ষান্বিত হয়ে এগুলো করছে," যোগ করেন তিনি।
এই একই অভিযোগ এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকেও।
সংগঠনের সদস্য সচিব মি. সোহেল বলেন, "ছাত্রদল ছাত্রলীগের মতো হলে রাজনীতি করতে চায়। যারা হলের শিক্ষার্থী, তারা আতঙ্কিত। তারা আশঙ্কা করছে যে স্বাধীনতা তারা রক্তের মাধ্যমে অর্জন করেছে, সেটা পুনরায় আগের ব্যবস্থায় ফিরে যাবে কি না।"
তবে এ সকল অভিযোগই নাকচ করছেন ছাত্রদল সভাপতি।
'সবই ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি'
বিশ্লেষকদের মতে, এখন যা যা হচ্ছে, এর সবই ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ছাত্র রাজনীতির যে কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা এতদিন ধরে চলে আসছে, এগুলো তারই পুনঃউৎপাদন।"
"এক্ষেত্রে চরিত্রগত, বৈশিষ্ট্যগত ও চর্চাগত খুব বেশি পার্থক্য আমরা দেখছি না," বলেন তিনি।
"এতদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন সংগঠন তাদের দলীয় পরিচয় গোপন রেখেছিলো। কিন্তু যখনই একটি দল তৈরি করার ঘোষণা আসছে, তখন থেকেই ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে বড় দ্বন্দ্ব চলছে। পাশাপাশি, সংঘাত ও সহিংসতা ঘটছে।"
এখানে "কর্তৃত্বপরায়ণতা, নিয়ন্ত্রণ এবং অন্য দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার চিন্তা আছে।"
"ক্যাম্পাসভিত্তিক কর্তৃত্বের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতির গতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা এবং পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতেও এর একটা প্রভাব দেখানোই এসবের মূল কারণ বলে মনে করেন তিনি।
এই বিশ্লেষক মনে করেন, "জাতীয় রাজনীতিতে যে দলগুলো সরকারের আস্কারা পাচ্ছে, সেটির একটা প্রভাব ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর পড়ছে। এর মধ্যে সহিংসতা ফিরে আসছে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মারুফুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, "শিক্ষাঙ্গনে কোনও ধরনের সন্ত্রাস গ্রহণযোগ্য না, সেটি ছাত্রদলের নামে হোক, বা শিবিরের নামে হোক বা বৈষম্যবিরোধীর নামে হোক...কোনও শিক্ষাঙ্গণে সংঘর্ষ চলতে দেওয়া যায় না। হ্যাঁ, ক্যাম্পাসে এক ধরনের শূন্যতা আছে।"
কিন্তু "সেটি এই অর্থে যে ক্যাম্পাসে যে সনাতনী রাজনৈতিক কাঠামো, মানে যে সংগঠনগুলোর আধিপত্য ছিল... সেগুলোর আধিপত্যের ধরন বদলে গেছে।"
এই শূন্যতায় নতুন বা পুরাতন সংগঠনগুলো আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করলেও তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী অস্বাভাবিক ব্যাপার না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
"জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা ছিল শান্তিপূর্ণ-উন্মুক্ত শিক্ষাঙ্গন। এই সংঘর্ষ নিরাপদ, উন্মুক্ত, স্বাধীন শিক্ষাঙ্গনের সম্পূর্ণরকম বিরোধী," যোগ করেন তিনি।