
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে এই তিনদিন সব ক্লাস-পরীক্ষাও ব্ন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আজ (মঙ্গলবার), বুধবার ও বৃহস্পতিবার শোক পালন করা হবে। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
এছাড়া শোক পালনের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়া হবে। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মকে উপজীব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক সেমিনারসহ অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ সব হল, হোস্টেল ও আবাসিক এলাকার মসজিদে খালেদা জিয়ার মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি, দোয়া ও মোনাজাত করা হবে। অন্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
এ ছাড়া বুধবার বাদ জোহর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় উপাচার্য বলেন, খালেদা জিয়া দেশ-জাতির কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন। গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর নিরলস সংগ্রাম ও সাধনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুগ যুগ ধরে দিক নির্দেশনা দেবে।
এর আগে, ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল ৬টায় খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বেগম জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া সাত দিন শোক পালনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন খালেদা জিয়া, কারাভোগ করেছেন। চিকিৎসার সুযোগও দেওয়া হয়নি। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেগম জিয়া। এরপর করোনার কারণে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিলেও গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় বন্দি রাখা হয়।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে চিকিৎসা না পাওয়ায় ধীরে ধীরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয় খালেদা জিয়ার।
এরমধ্যে ২০২৪ সালের জুলাইতে কোটা সংস্কার আন্দোলন দাবিতে দেশজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন, যা শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে গড়ায়। টানা ৩৫ দিনের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে পর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। তার স্বাস্থ্যের অনেকটা উন্নতি হয়েছিল। তবে নানা রোগে জটিলতা ও শরীর–মনে ধকল সহ্য করে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। বয়সও ছিল প্রতিকূল। প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তেন। হাসপাতালে ভর্তি করানো হতো।
সবশেষে গত ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এক মাসের কিছু বেশি সময় তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।