News update
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     
  • Sudan war becomes more deadly: Ethnically motivated attacks up     |     
  • Dhaka's RMG exports reach $38.48 bn in 2024: New markets up     |     

বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে যত বিতর্ক

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ক্রিকেট 2024-06-22, 5:52pm

img_20240622_175238-5da947208078c637ec6aaedd79f232dd1719057176.jpg




গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অজিদের কাছে শিরোপা খুইয়েছিল ভারত। এই জয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা যতটা খুশি হয়েছিলেন তার থেকে দ্বিগুণ খুশি হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষ। যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন ভারতীয়রা। তবে প্রশ্ন বাঙালিদের মনে এতো ক্ষোভ বা রাগ সৃষ্টির জন্য দায়ী কারা।

অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, গত এক দশকে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ যতটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছে, ততটা অন্য দলগুলোর ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। অথচ একসময় প্রতিবেশী দুই দলের ম্যাচকে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বড় ভাইয়ের বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হিসেবে দেখা হতো, যে লড়াইয়ে ভারতেরই একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে দৃশ্যপট। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ দল ভারতকে দারুণ চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করেছে, চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সাহস দেখিয়ে যাচ্ছে।

যার ফলে, ভারতের বিপক্ষে দুটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয় এবং বেশ কয়েকটি ম্যাচে ভারতীয়দের কঠিন পরীক্ষায় ফেলা। কিছু ম্যাচ তো ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের চেয়েও বেশি রোমাঞ্চকর ও বারুদে ঠাসা ছিল। হয়তো এটাই ভারতের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাই বড় দলের কাছে হেরে গেলে ভারতীয়দের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার মনে হলেও, বাংলাদেশের কাছে হারলে তাদের অহংবোধে চরম আঘাত লাগে। এই জন্য বাংলাদেশকে আর আগের মতো বন্ধু বা প্রতিবেশির চোখে দেখেন না ভারতীয়রা। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে বিশ্বমঞ্চে ভারতকে প্রথমবার আঘাত করেছিল বাংলাদেশ।

১৭ বছর আগে ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে শচীন টেন্ডুলকার-সৌরভ গাঙ্গুলীদের বিপক্ষে মাশরাফী-আশরাফুলদের জয়টা শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থানের আগমনী বার্তাই দেয়নি, ভারতকেও ওই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পথ দেখিয়ে দিয়েছিল। যা আইসিসির ব্যবসায় রীতিমতো ‘লাল বাতি’ জ্বালিয়ে দিয়েছিল।

এরপর থেকে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে একটু হলেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে ভারত। অনেকের ধারণা, ভারতের প্রভাবের কারণে আম্পায়ারদের বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়, যা বিতর্কের জন্ম দেয়।

এই সমর্থকদের মনে ভারতকে নিয়ে এতটাই অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে তারা ভেবে থাকেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত ১১ জন নিয়ে নয়, ১৩ জন (মাঠে দুই আম্পায়ারসহ) নিয়ে নামবে!

২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম সাক্ষাতেই বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে দেওয়ার পর দুই দল সব ধরনের বিশ্বকাপে (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) আরও আটবার মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিবারই জয়ী দলটার নাম ভারত। তবে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত ভারতের পক্ষে না গেলে বাংলাদেশ আরও একটি-দুটি ম্যাচ জিততে পারত, সেই দাবি করাই যায়।

তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে যত বিতর্ক তৈরি হয়েছে:

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল

ভেন্যু: মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, মেলবোর্ন

বাংলাদেশের দর্শকরা এই ম্যাচের পর থেকেই ভারতের প্রতি আইসিসির দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ দল আরও বড় কিছুর প্রত্যাশায় ছিল।

প্রথমবার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন বুনছিল টাইগাররা। কিন্তু মাঠের দুই আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গুল্ডের একাধিক সিদ্ধান্ত ভারতের পক্ষে গেলে শেষ আট থেকে বাদ পড়তে হয় বাংলাদেশকে।

প্রথম বিতর্কিত সিদ্ধান্তটা রোহিত শর্মাকে ঘিরে। ব্যক্তিগত ৯০ রানে থাকতে রুবেল হোসেনের ফুলটস বলে মিড উইকেটে ইমরুল কায়েসের হাতে ধরা পড়েন রোহিত। ভারতীয় ওপেনার নিজেও জানতেন তিনি আউট হয়েছেন। তাই মাঠ ছাড়ছিলেন।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে যত বিতর্ক

ঠিক এমন সময় লেগ আম্পায়ার আলিম দারের কল; এটা নো বল! বোলিং প্রান্তে থাকা আম্পায়ার ইয়ান গুল্ডও নো বলের ডাক দেন। কিসের নো বল? রুবেলের ফুলটসটা নাকি রোহিতের কোমরের ওপরে ছিল! সেই রোহিত ‘জীবন’ পেয়ে শেষ পর্যন্ত ১৩৭ রান করেন। ভারত পেয়ে যায় ৩০২ রানের বড় সংগ্রহ।

ম্যাচের দ্বিতীয় বিতর্ক বাংলাদেশের লক্ষ্য তাড়ার সময়। দ্রুত তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিল আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ। সৌম্য সরকারকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ দলকে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন।

কিন্তু দলীয় ৭৩ রানে থাকতে মোহাম্মদ শামির শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে লং লেগে শিখর ধাওয়ানের হাতে ধরা পড়েন। ধাওয়ান বাউন্ডারি লাইনের কাছে ছিলেন বলে তৃতীয় আম্পায়ার স্টিভ ডেভিসের ওপর সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেন মাঠের দুই আম্পায়ার দার ও গুল্ড।

টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, ক্যাচ নেওয়ার সময় ধাওয়ানের পা বাউন্ডারির সঙ্গে লেগে ছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাহমুদউল্লাহকে আউট দেন ডেভিস। এরপর বাংলাদেশ আর বেশি দূর এগোতে পারেনি। ১০৯ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেন পর্ব

ভেন্যু: এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, বেঙ্গালুরু

সুপার টেনের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বাংলাদেশের বিদায় এক রকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে ভারতকে এই ম্যাচ জিততেই হতো। ভারত ম্যাচটা জিতেও যায়; বাংলাদেশের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে। মাশরাফীর দলের হারের ব্যবধানটা ছিল যে মাত্র ১ রানের!

এই হারে বাংলাদেশ অবশ্য নিজেদেরই দুষে আসছে। জেতা ম্যাচটা যে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন! ১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশের শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১১ রান। হার্দিক পান্ডিয়ার প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহ সিঙ্গেল নিয়ে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে মুশফিক বাউন্ডারি মেরে সমীকরণটা ৩ বলে ২ রানে নামিয়ে আনেন। শেষ পর্যন্ত ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে যত বিতর্ক

টানটান উত্তেজনার এ ম্যাচেও রয়েছে একটি বিতর্ক। সেটা সাব্বির রহমানের স্টাম্পড আউট নিয়ে। লেগ স্টাম্পের বাইরে করা সুরেশ রায়নার বলে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সাব্বির। ধোনি স্টাম্পিং করার আগমুহূর্ত পর্যন্ত সাব্বিরের পা ক্রিজের ভেতর ছিল। তবে যে মুহূর্তে বেল ফেলে দেন, তখন পা ওপরে ছিল বলে মনে হয়েছে টিভি আম্পায়ার ইয়ান গুল্ডের। হ্যাঁ, এখানেও সেই গুল্ড!

সাধারণত ‘বেনিফিট অব ডাউট’ ব্যাটসম্যানের পক্ষে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গেছে সাব্বিরের বিপক্ষে। গুল্ড আউটের বোতামে চাপ দেন। ম্যাচ শেষে প্রশ্ন ওঠে, ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের সাব্বির না হয়ে যদি ভারতের কেউ হতেন, তাহলে গুল্ড কি তাঁকে আউট দিতেন? বাংলাদেশের বিপক্ষে সেদিন জিতলেও ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ভারত।

সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়। তবে ‘বেঙ্গালুরুর ভূত’ তখনো তাড়া করে বেড়াচ্ছিল মুশফিককে। ভারত বাদ পড়তেই মুশফিক টুইটারে (বর্তমানে এক্স) লেখেন, ‘ভারতকে হারতে দেখে কী আনন্দই না হচ্ছে! এটাই তো চেয়েছিলাম।’ পরে মুশফিক ক্ষমা চেয়ে নিলেও তার মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের রেশ অনেক দিন থেকে যায়।

২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্ব

ভেন্যু: অ্যাডিলেড ওভাল, অ্যাডিলেড

বিরাট কোহলি আর লোকেশ রাহুলের ফিফটিতে বাংলাদেশকে ১৮৫ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিয়েছিল ভারত। এত বড় লক্ষ্য তাড়া করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয়ের ইতিহাস নেই। তবে লিটন দাস দলকে যে শুরু এনে দেন, তাতে নতুন ইতিহাস গড়ার আশা দেখছিলেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা।

৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৬ রান তুলে ফেলেছিলেন নাজমুল হোসেন ও লিটন। এর মধ্যে লিটনেরই রান ৫৯! এমন সময় অ্যাডিলেডের আকাশ বেয়ে নামে অঝোর বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি বাংলাদেশের জন্য আনন্দের বার্তাও বয়ে আনে। কারণ, ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ তখন ১৭ রানে এগিয়ে ছিল।

প্রায় ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস ও ক্রিস ব্রাউন এবং ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন যখন সাকিব আল হাসানের দলের জন্য নতুন লক্ষ্য ঠিক করে দিলেন, তখনও মাঠ ভেজা ও পিচ্ছিল ছিল।

সাকিব পরে দাবি করেন, তিনি ভেজা মাঠে খেলতে চাননি। এরপরও খেলানো হয়েছে। বৃষ্টি থামার পর বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ১৬ ওভারে ১৫১ রান। কিন্তু বাংলাদেশ করতে পারে ১৪৫। ভেজা মাঠে পিছলে পড়ে গিয়ে রানআউট হন লিটন।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে যত বিতর্ক

ম্যাচ শেষে হারের কারণ জানাতে গিয়ে ভারতের ‘ফেক ফিল্ডিংয়ে’ ৫ রান না পাওয়ারও অভিযোগ আনেন বাংলাদেশের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান। নুরুলের সেই অভিযোগ যে ঠিক ছিল, তা বোঝা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও থেকে।

ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশের ইনিংসের সপ্তম ওভারের খেলা চলার সময় অক্ষর প্যাটেলের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের দিকে খেলেছিলেন লিটন। সেখানে ফিল্ডার ছিলেন আর্শদীপ সিং। অর্শদীপের থ্রো ভারতের উইকেটকিপার দিনেশ কার্তিকের কাছে পৌঁছানোর আগেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা কোহলি থ্রোয়ের মতো অঙ্গভঙ্গি করেন, যা ‘ফেক ফিল্ডিং’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা।

ক্রিকেট আইনের ৪১.৫.১ ধারায় বলা হয়েছে, আম্পায়ারদের যদি মনে হয় কোনো ফিল্ডারের হাতে বল না থাকা সত্ত্বেও তিনি ফিল্ডিংয়ের ভান করে ব্যাটসম্যানের মনোযোগ সরানো বা ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাহলে সেই বল ডেড ঘোষণা করে প্রতিপক্ষকে ৫ রান উপহার দেওয়া হবে। কিন্তু বাংলাদেশের স্কোরে সেদিন এই ৫ রান যোগ হয়নি। সাকিব-লিটনদের হারের ব্যবধানও ৫ রান! তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।