খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে দুর্বার রাজশাহী এবার যা করেছে, তা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ইতিহাসেই বিরল। ম্যাচের দিন সকালে হোটেল পরিবর্তনসহ আরও অনেক অপেশাদার আচরণ করে এবারের বিপিএলে সবচেয়ে আলোচিত দল এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। টুর্নামেন্টের মধ্যে খেলোয়াড়দের অনুশীলন বর্জন এবং বিদেশিদের ম্যাচ বয়কটের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অসম্ভব ঘটনাও ঘটেছে এবারের রাজশাহী দলের ক্ষেত্রে।
তবে এসব জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে মাঠের লড়াইয়ে নিজেদের সেরাটা দিয়েছে রাজশাহী। জটিল পথ পাড়ি দিয়ে প্লে অফে এক পা দিয়ে রেখেছে দলটি। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাউন্ড রবিন লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে রাজশাহী।
এই জয়ে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠেছে রাজশাহী। অথচ কয়েক দিন আগেও রাজশাহীর প্লে অফ খেলা ছিল স্বপ্নের মতো ব্যাপার। পারিশ্রমিক জটিলতায় জর্জরিত দলটি নিজেদের প্রথম ৯ ম্যাচের মধ্যে জিতেছিল কেবল ৩টি। প্লে অফের আশা বাঁচাতে শেষ ৩টির সবগুলোই জিততে হতো তাদের। আর সেই ৩ ম্যাচের মধ্যে দুটিই ছিল টেবিল টপার রংপুরের বিপক্ষে। অসম্ভব সেই পথ পাড়ি দিয়েছে রাজশাহী। নিজেদের শেষ ৩ ম্যাচের সবগুলো জিতে প্লে অফ প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা।
প্লে অফের দৌড়ে রাজশাহীর বড় প্রতিপক্ষ এখন খুলনা টাইগার্স। ১০ ম্যাচে ৪টি জেতা দলটির পয়েন্ট এখন ৮। শেষ ২ ম্যাচের দুটিতে জিতলে এখনও রাজশাহীকে ছাড়িয়ে যেতে পারে তারা। তবে সেক্ষেত্রে রান রেটেও এগিয়ে থাকতে হবে তাদের। তাই সবকিছু মিলিয়ে খুলনার প্লে অফে ওঠা বেশ কঠিন।
চিটাগং কিংসেরও প্লে অফ নিশ্চিত হয়নি এখনও। তবে তাদের ৩ ম্যাচ বাকি। তাতে দুটো জিতলে কোনো সমীকরণ ছাড়া প্লে অফ নিশ্চিত। আর একটি জিতলে সমীকরণের মারপ্যাঁচে পড়তে পারে মোহাম্মদ মিথুনের দল। কোনো ম্যাচে না জিতেও অবশ্য প্লে অফ খেলার সুযোগ আছে মিথুনদের। তবে সেক্ষেত্রে খুলনাকে দুটো ম্যাচই হারতে হবে।
মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে আজ শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভার শেষে কেবল ১১৭ রানের সংগ্রহ পায় সিলেট। ছোট এই লক্ষ্যই অবশ্য রাজশাহীর কাছে অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায় ২২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর। তবে রায়ান বার্ল এবং আকবর আলীর ৭৫ রানের অনবদ্য জুটিতে শেষ পর্যন্ত ১৯ বল হাতে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রাজশাহী।
৩৮ বলে ৪৩ রান করে আহসান ভাট্টির বলে আউট হয়েছেন আকবর। বার্ল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ৩৪ বলে ৪৮ রান করেন। আর ওপেনিংয়ে নামা জিশান আলমের ব্যাট থেকে আসে ৬ বলে ১১ রান।
সিলেটের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন তানজিম সাকিব এবং জাগেসার। একটি উইকেট গেছে আহসান ভাট্টির ঝুলিতে।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় রাজশাহী। ১ রান যোগ হতেই আউট হন আরেক ওপেনার সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। দুই ওপেনারকেই ফিরিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। চারে নামা সাজ্জাদুল হককে ফেরান আফতাব আলম।
১৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে ৩৯ রানের জুটি গড়েন জাকের আলী এবং জাকির হাসান। কিন্তু মাত্র ১ রানের ব্যবধানে ফেরেন এই দুই ব্যাটারও। ২৫ বলে ২৪ রান করে জাকির। জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ১৭।
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটার কাদিম আলিনও পাননি রানের দেখা। ৫ বলে ১ রান করে ফেরেন তিনি। তানজিম সাকিব, জন রাস জাগেসাররাও রানের দেখা পাননি তেমন। ৭২ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর নবম উইকেটে ২০ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন এহসান ভাট্টি এবং সুমন খান।
২১ বলে ২৫ রান করে শেষ ওভারে আউট হন ভাট্টি। আর ১১ বলে ২০ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন সুমন।
সিলেটের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন এসএম মেহেরব। ৩ উইকেট পেয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। একটি করে উইকেট গেছে তাসকিন আহমেদ আর আফতাব আহমেদের ঝুলিতে।