
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে নিজেদের ৮১৩ ম্যাচের ইতিহাসে প্রথমবার টাইয়ের সম্মুখীন হয়েছিল বাংলাদেশ। তবে নিজেদের প্রথম সুপার ওভারের লড়াইটা জয়ে রাঙাতে পারলো না লাল সবুজরা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সুপার ওভারে ১১ রানের লক্ষ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে ৯ রানে আটকে দিলো ক্যারিবীয়রা।
মিরপুরে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এক অবিশ্বাস্য ওয়ানডে ম্যাচের সাক্ষী হলো ক্রিকেট বিশ্ব। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২১৩ রান তাড়া করতে নেমে ক্যারিবীয়রাও থামে ২১৩ রানে। তাতে টাই হয় ম্যাচ। ফলাফল নির্ধারণে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
যেখানে মোস্তাফিজুর রহমানের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৬ বলে ১ উইকেট হারিয়ে ১০ রান তোলে উইন্ডিজ। অবশ্য মেহেদী হাসান মিরাজ ক্যাচ হাতছাড়া না করলে মাত্র ৩ রানেই থামতো ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১ রানের। আকিল হোসেনের বিপরীতে ব্যাট হাতে নামেন সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান। এখানে আবার হতাশ করেন সৌম্য। প্রথম বল ওয়াউড হওয়ার পর দ্বিতীয় বলে নো দিয়ে ফ্রি-হিট পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি কাজে লাগাতে পারেননি সৌম্য। তারপরও একটি বৈধ বলে ৫ রান পেয়েছিল লাল সবুজরা। কিন্তু পরের ৫ বলে ৬ রান তুলতে পারেনি তারা। পরের তিন বলে দুটি সিঙ্গেল নেয়ার পর বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন সৌম্য। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত নেমে কোনোরকম একটি রান নিয়ে দেন সাইফকে। এরপর আকিলের আবার ওয়াইড। তাতে শেষ বলে দরকার পড়ে ৩ রানের। ২ রান হলেও ম্যাচটি আবার সুপার ওভারে গড়াতো। কিন্তু ১ রানের বেশি আদায় করতে পারেননি সাইফ। তাতে ১ রানের হারে সিরিজ নিজেদের করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
এর আগে নির্ধারিত ৫০ ওভারের খেলায়ও ম্যাচ নিজেদের করে নেয়ার সুযোগ ছিল স্বাগতিকদের সামনে। ৩৪ ওভারে ১৩৩ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে ছিল উইন্ডিজ। তবে ত্রাণকর্তা হয়ে আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন হোপ। অপরাজিত ফিফটিতে দলকে নিয়ে যান একেবারে জয়ের কাছাকাছি। শেষ ওভারে রান লাগত মাত্র ৫। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বল তুলে দেন পার্ট টাইম সাইফের হাতে। আকিল হোসেন প্রথম দুই বল মিস করেন। এরপরের দুই বলে রান হয় এক রান করে। শেষ দুই বলে উইন্ডিজের রান লাগত ৩। ওভারের পঞ্চম বলে আকিল আউট হলে ১ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লাগত ৩ রান। শেষ বলে নতুন ব্যাটসম্যান খারি পিয়েরে ক্যাচ তুলে দিলে সেটা নিতে পারেননি নুরুল হাসান। দৌড়ে দুই রান নিয়ে ম্যাচ টাই করেন পিয়েরে। তাতে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। ৬৭ বলে ৪ চারের মারে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন হোপ। বাংলাদেশের পক্ষে ৪২ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। ২টি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ ও তানভীর ইসলাম।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান সংগ্রহ করেছিল। বাকি ব্যাটাররা যে উইকেটে রান করতে সংগ্রাম করেছেন, সেখানে রিশাদ প্রথম ম্যাচের মতোই ঝড় তুলেন। মাত্র ১৪ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় খেলা তার ৩৯ রানের ইনিংসেই দুইশ পেরোয় বাংলাদেশ। এছাড়া সৌম্য সরকার ৮৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৫ রান করেন। ৫৮ বলে ১ চারের মারে ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৪ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস উপহার দেন নুরুল হাসান সোহান। এদিন পুরো ৫০ ওভার স্পিন বল করে ইতিহাস গড়েছে উইন্ডিজ। ৫৪ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে এর আগে কোনো দল পুরো ইনিংস স্পিন ওভার করেনি। সর্বোচ্চ ৪৪ ওভার বল করেছিল শ্রীলঙ্কা। ক্যারিবীয়দের হয়ে ৬৫ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন গুদাকেশ মোতি।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ৭৪ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ শেষে দুদলের ১-১ সমতায়। আগামী বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুদল।