News update
  • Musk Launches 'America Party' in Fresh Split with Trump     |     
  • Israel to send negotiators to Gaza talks     |     
  • Bangladesh bounce back to level series as Tanvir bags five     |     
  • UN Chief Condemns Russian Attacks, Warns of Nuclear Risks     |     
  • Dhaka Urges Clear Outcome from Upcoming Rohingya Talks     |     

সিলেট, সুনামগঞ্জে বারবার বন্যা হচ্ছে যে কারণে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2022-06-19, 9:49am

img_20220619_094921-d7bf8a3697af3c120aa7b973d4f5b40d1655610579.png




বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় হঠাৎ শুরু হওয়া বন্যার পেছনে অতিবৃষ্টির বাইরে আরও কয়েকটি কারণ দেখছেন গবেষকরা।

এই বছর এ নিয়ে তৃতীয় দফার বন্যার কবলে পড়েছে এসব জেলা।

সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা বলছেন, বহু বছরের মধ্যে তারা এতো মারাত্মক বন্যার মুখোমুখি হননি। সবমিলিয়ে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে বলে কর্তৃপক্ষ বলছে।

এর মধ্যেই সুনামগঞ্জের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। নেত্রকোনার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রেল যোগাযোগ।

এর পাশাপাশি রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ দেশের আরও অন্তত ১৭টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নদী গবেষকরা বলছেন, এবারের এইরকম আকস্মিক বন্যার পেছনে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি একটি বড় কারণ হলেও এর বাইরে আরও কিছু উপাদান কাজ করেছে।

মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ভারতের চেরাপুঞ্জি অঞ্চলে।

বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প মেঘালয়ের পাহাড়ের সাথে ধাক্কা লেগে ওপরে উঠে যায়। সেখানে ভারী হয়ে বৃষ্টি আকারে পড়তে শুরু করে।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে অতিবৃষ্টির কারণে এবারের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, গত তিনদিন চেরাপুঞ্জিতে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, ২৪৮৭ মিলিমিটার এবং এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। এরকম ধারাবাহিক বৃষ্টি হয়েছে ১৯৯৫ সালে একবার, তিনদিনে ২৭৯৮ মিলিমিটার আর ১৯৭৪ সালে ২৭৬০ মিলিমিটার। এরকম খুব কম দেখা গেছে, বলছেন মি. ইসলাম।

সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত থেকেই ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি এলাকার শুরু হয়েছে। ফলে সেখানকার পানি সরাসরি বাংলাদেশের হাওরে এসে মেশে। ভৈরব বা মেঘনা নদী হয়ে সাগরে চলে যায়।

কিন্তু অতীতের বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষাপট আর এখনকার নদীগুলোর অবস্থার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে বলে নদী গবেষকরা মনে করছেন।।

এই হঠাৎ বন্যার পেছনে চেরাপুঞ্জির এই প্রবল বৃষ্টিপাতকে প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

''বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া-জলবায়ু বা বৃষ্টির ধরন বদলে গেছে। এখন বৃষ্টি হলে অনেক বেশি গভীর বৃষ্টি হয়। প্যাসিফিকেও একটা লা নিনো আছে। সেটাও অতিবৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রেখেছে।''

''চেরাপুঞ্জিতে যখন বৃষ্টি হয়, সেটা ছয় থেকে আট ঘণ্টার ভেতরে তাহিরপুরে চলে আসে। কিন্তু সেখানে এসে পানি তো আর দ্রুত নামতে পারছে না। ফলে তখন সেটা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে বন্যার তৈরি করছে,'' তিনি বলছেন।

তিনি আশঙ্কা করছেন, চেরাপুঞ্জিতে আরও দুই তিনদিন বৃষ্টিপাত হলে বন্যার ধকল সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

অতিবৃষ্টির কারণে ভারতের আসামেও বন্যা এবং ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে।আসামে বরাক ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গুয়াহাটিসহ অনেক এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। আসাম, মেঘালয় মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিচ্ছে, আসামের বন্যায় অন্তত ১১ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নদীর পানি বহনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া

মেঘালয় বা আসাম থেকে আসা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নদী পথে হাওর থেকে বের হয়ে মেঘনা বা যমুনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে যায়।

কিন্তু এবারের বন্যার পেছনে হঠাৎ উজান থেকে আসা অতিরিক্ত পানি বের হতে না পারা প্রধান কারণ বলে বলছেন গবেষকরা।

আর এজন্য তারা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন।

নদী গবেষক মুমিনুল হক সরকার বিবিসি বাংলাকে বলছেন, প্রতি বছর উজান থেকে পানির সাথে পলি আর পাথর নেমে আসে। সেটা এসে বাংলাদেশের অংশে নদীর তলদেশ ভরে ফেলে। নদীর পানি বহনের ক্ষমতা কমে যায়। তখন এই নদীতে বেশি পানি আসলে সেটা উপচে আশেপাশের এলাকা ভাসিয়ে ফেলে।

নদীর নাব্যতা নষ্টের জন্য ভারত অংশে অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনকে দায়ী করছেন গবেষকরা।

অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছেন, বিশেষ করে ভারতের উজানে পাথর উত্তোলনের ফলে মাটি আলগা হয়ে নদীতে চলে আসে। ফলে নদীর তলদেশ ভরে যায়। সেখানে নাব্যতা সংকট তৈরি হচ্ছে। সেখানে গাছও কেটে ফেলা হচ্ছে।

এর পাশাপাশি নদীগুলো ঠিকমতো ড্রেজিং না হওয়া, ময়লা-আবর্জনায় নদীর তলদেশ ভরে যাওয়া, ঘরবাড়ি বা নগরায়নের ফলে জলাভূমি ভরাট হয়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন এই গবেষকরা।

এই কারণে মেঘালয় বা আসামে বেশি বৃষ্টিপাত হলেই সিলেট বা কুড়িগ্রাম এলাকায় বন্যার তৈরি হচ্ছে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

অপরিকল্পিত উন্নয়ন

অধ্যাপক ইসলাম বলছেন, এবারের হঠাৎ বন্যার পেছনে মানুষের নিজেদের তৈরি কতগুলো কারণ রয়েছে।

''সিলেট বা সুনামগঞ্জ এলাকায় আগে ভূমি যেরকম ছিল, নদীতে নাব্যতা ছিল, এতো রাস্তাঘাট ছিল না বা স্থাপনা তৈরি হয়নি। ফলে বন্যার পানি এখন নেমে যেতেও সময় লাগে। আগে হয়তো জলাভূমি, ডোবা থাকায় অনেক স্থানে বন্যার পানি থেকে যেতে পারতো। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না।''

''হাওরে বিভিন্ন জায়গায় পকেট পকেট আমরা রোড করে ফেলেছি। ফলে পানি প্রবাহে বাধার তৈরি হচ্ছে। শহর এলাকায় বাড়িঘর তৈরির ফলে পানি আর গ্রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। যার ফলে বন্যার তীব্রতা আমরা বেশি অনুভব করছি। এসব কারণে আগাম বন্যা হচ্ছে এবং অনেক তীব্র বন্যা হচ্ছে,'' বলছেন অধ্যাপক ইসলাম।

ইটনা, মিঠামইন সড়কের কি দায় আছে?

বাংলাদেশে গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকে সিলেটে অঞ্চলের বারবার বন্যার জন্য ইটনা-মিঠামইন সড়ককে দায়ী করছেন।

অধ্যাপক ইসলামও বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা তৈরির কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া বন্যার অন্যতম কারণ।

কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে ইটনা-মিঠামইন সড়কে এই বন্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে, সেভাবে দায়ী করতে রাজি নন অধ্যাপক ইসলাম।

''আমাদের দেশে উজান থেকে পানি নামে উত্তর থেকে দক্ষিণে। এই রাস্তাটিও কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণে তৈরি। ফলে এটা হয়তো হাওরের পানি প্রবাহের কিছুটা বাধার তৈরি করছে, কিন্তু বন্যার এটাই একমাত্র কারণ নয়"।

নদী গবেষক মমিনুল হক সরকার বলছেন, ''হাওরে যেসব রাস্তা পূর্ব-পশ্চিমে তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোই হাওরের পানি চলাচলে মূল বাধার তৈরি করছে। এরকম অনেক রাস্তা কোনরকম পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি করা হয়েছে"।

হাওরে যেসব সড়ক বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তা পরিকল্পিতভাবে হয়নি বলে বলছেন অধ্যাপক সাইফুর ইসলাম। সেটা না হওয়ার কারণেই বন্যা এরকম তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে।

গত জানুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন যাতে হাওরে এখন থেকে এলিভেটেড বা উড়াল সড়ক করা হয়।

কিন্তু শুধুমাত্র সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকায় যেসব সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই এখনো 'অল সিজন' বা 'সাবমার্সিবল' সড়ক।

বাঁধ না থাকা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ বা নেত্রকোনা হাওর এলাকায় বেশিরভাগ জনপদে শহর রক্ষা বাঁধ নেই। ফলে কোন কারণে হাওরে বা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করলে তার খুব দ্রুত শহরে বা আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ে।

বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছেন, ''হাওরে এসব এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়নি। সেটা করা না হলে বাড়িঘর উঁচু করে তৈরি করতে হবে, আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করতে হবে। সেটাও করা হয়নি। ফলে যখন এভাবে আকস্মিক বন্যা দেখা দিচ্ছে, সেটার ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হচ্ছে।''

চীনসহ অনেক দেশে স্পঞ্জ সিটি তৈরি করা হচ্ছে। এসব শহরে বন্যা হলে সেই পানি শহরের ভেতরেই জমিয়ে রেখে কাজে লাগানোর পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।

কিন্তু এবার বাংলাদেশে যেভাবে আকস্মিকভাবে বৃষ্টির বা পানি বৃদ্ধির রেকর্ড ভেঙ্গে বন্যার তৈরি হয়েছে, এরকম পরিস্থিতিতে বন্যা ঠেকানো খুব কঠিন বলে বলছেন এই বিশেষজ্ঞরা। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।