EP dialogue
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের সুপার হাইওয়েতে রয়েছে। এটা সাসটেনবল করার জন্য নিজস্ব সম্পদ, জনশক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দেশে জ্বালানিসহ সকল খাতে দক্ষ জনবলের সংকট চরমে। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই ঘাটতি পূরণে বড় অবদান রাখতে পারে। তবে নীতিমালার আওতায় প্রবাসীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
আবার বেসরকারি খাতকে প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে খোলা মনে নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবে দেশে কাজের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের মনোভাবও বদলাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, চীন ও ভারতের কারিগরি উৎকর্ষতায় তাদের প্রবাসী জনবলের ভূমিকা অপরিসীম। ‘এনার্জি সেক্টর ইউম্যান রিসোর্স ডেভলপমেন্ট: ক্যান এনআরবি এক্সপার্ট সাপোর্ট?’ শীর্ষক ইপি টকসে তাঁরা এমন মতামত তুলে ধরেন।
শনিবার এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়োজিত এই ওয়েবনার সঞ্চালনা করেন পাক্ষিকটির সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
এতে প্রধান অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর এম তামিম, গেস্ট অব অনার হিসাবে যুক্ত ছিলেন এফবিসিসিআই এর পরিচালক ও ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জি গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর।
আলোচক হিসাবে যুক্ত ছিলেন ইউনিভারসিটি অব কুইনল্যান্ডে প্রফেসর ড. তপন সাহা, পাওয়ার সেলের মহাব ̈বস্থাপক ইঞ্জি মোহাম্মদ হোসেন, আরএমআইটির প্রফেসর ড. ফিরোজ আলম ও আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইঞ্জি খন্দকার আবদুল সালেক।
প্রফেসর এম তামিম বলেন, কেবল জ্বালানি খাতে নয়, সকল খাতেই দেশ দক্ষ জনবল সংকটের মধ্যে আছে। তিনি বলেন দক্ষ জনবল চাহিদা নিরূপণ ও গড়ে তোলার জন ̈ একটি বিভাগ বা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা জরুরি। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজারের চাহিদার নিরিখে শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনছে। বুয়েটও তার শিক্ষাক্রমে আগামী ২ বছরের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, শুরুতে শিল্পের সাথে বিশেষ করে পেটেধাবাংলার সাথে গবেষণার কাজে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ এমনকি বিনে পয়সায় কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েও সাড়া না পাওয়ায় বিদেশি তথ্যউপাত্তের উপর ভিত্তি করে ছাত্রদের গবেষণা করিয়েছেন।
তিনি বলেন, কেবল বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই হবে না অংশীদারিত্বের জন্য শিল্পকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে তিনি মনে করেন, দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বস্ত্র ও গার্মেন্ট খাতের জন্য মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থপক তৈরিতে ব্যার্থ হয়েছে, কেননা এটার জন ̈ দক্ষ ফ্যাকাল্টির অভাব আছে, আবার ছাত্ররাও স্বাধীন ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসছে না।
প্রফেসর তামিম মনে করেন, এনআরবি বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হলে কোথায় কী ধরনের কাজের সুযোগ আছে তার ম্যাপিং করে অংশ নেওয়ার জন্য নীতি প্রণয়ন করতে হবে। অন্যদিকে দেশের জন্য জরুরি কাজগুলো করার মতো প্রবাসী জনবল কোথায় কী আছে তারও নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। এককভাবে সরকার নয়, বেসরকারি খাতকে এখানে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এখনো কর্পোরেট কালচার চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রবাসীরা অনেকে আগ্রহী হয়েও ফিরে গেছেন। আর সরকারের ক্ষেত্রে যেখানে নিজস্ব প্রবাসী জনবল আছে তাতে অর্থায়নের শর্ত না থাকলে তাদের ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।
গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নে মহাসড়কে। বিশেষ করে জ্বালানি অবকাঠামোর উন্নয়ন অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে। কিন্তু এটাকে সাসটেনবল করতে চাইলে নিজস্ব সম্পদ, প্রতিষ্ঠান ও জনবলকে কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরাও আমাদের এক বড় সম্পদ। আমাদের শিক্ষা এখনো তত্ত্বনির্ভর, শিল্পের সাথে তার যোগাযোগ কম। ফলে দক্ষ জনবল ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের উন্নয়ন কাজে যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। একই সাথে শিক্ষাকে কার্যমুখী করতে শিল্পকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে এগিয়ে আসতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর দেশে ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেন, যে সকল সরকারি ভোকেশনাল চলছে না তা পরিচালনার জন্য বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তিনি এই ধরনের ২০টি বা তার চেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে দক্ষ জনবল তৈরিতে কাজ করতে চান। তিনি ৩০০ প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বাংলাদেশে সম্মেলন আয়োজনের কথা স্মরণ করে বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে প্রবাসীরা কাজ করছে। অন্যদের উপর প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানো দরকার। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন প্রকল্পে বাধ্যবাধকতা না থাকলে বিদেশির বদলে প্রবাসী বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া উচিত। তাতে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে।
প্রফেসর ড. তপন সাহা বলেন, আমরা অস্ট্রেলিয়ায় ছাত্রদের নিয়ে শিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে শিল্পের সাথে যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। আর বাংলাদেশে এটা শুরু হলে প্রবাসীরা এখানে কাজ করার সুযোগ পাবে।
কোথা থেকে কোন প্রবাসী বিশেষজ্ঞ কীভাবে বাংলাদেশে সহায়তা করতে পারবে তার এতটি ডাটা বেইজ তৈরি করে তাদের পরিকল্পিতভাবে কাজ লাগানো সম্ভব হলে টেকসই উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।
ইঞ্জি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বিশেষজ্ঞ প্রবাসীরা যাতে দেশে বিশেষ করে জ্বালানি খাতে ভূমিকা রাখতে পারে তার জন্য প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে। সকল খাতে প্রবাসীরা কীভাবে অবদান রাখতে পারে তারজন ̈ আইইবি তাদের বিদেশি চ্যাপ্টারের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে পাওয়ার এন্ড এনার্জি রিসার্স কাউন্সিল পরিচালনায় ৫০ শতাংশ বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃপক্ষে তাদের কাজে লাগাতে হলে নীতি নির্ধারকদের ভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে, প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের মনোভাবও বদলাতে হবে।
ইঞ্জি হোসেন আরও বলেন, ইতিমধ্যে অনেক প্রবাসী বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সহায়তা করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই সহায়তা পাওয়ার জন ̈ সরকারের নীতিতে তা যুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ̧লোকে শিল্পের সাথে যুক্ত করার জন্য উভয়পক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জ্বালানি খাতের আজকের অর্জনকে আরো স্মার্ট ও দক্ষ করার জন্য দেশি-প্রবাসী বিশেষজ্ঞ সেতুবন্ধন তৈরির মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে সমৃদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
প্রফেসর ড. ফিরোজ আলম মনে করেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রসর পর্যায়ে আছে। এটাকে টেকসই ও স্থায়ী করার জন্য নিজস্ব বিশেষজ্ঞ তৈরির কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের সাথে ব্যক্তিক, প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তি-সরকার এবং প্রতিষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান যোগযোগ স্থাপন করে নিজ ̄স্ব বিশেষজ্ঞ জনবল তৈরি নিশ্চিত করা সম্ভব। চীন ও ভারত কারিগরি বিষয়ে উৎকর্ষতা অর্জনে তাদের প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশকেও ঐ পথে যেতে হবে।
ইঞ্জি খন্দকার আবদুস সালেক বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশদ্ভোত বিশেষজ্ঞ বিশ্বে কোথায় কে আছে তার একটি নেটওয়ার্কিং করে কীভাবে তাদের দক্ষতা কাজে লাগানো যায় তার পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশিদের বদলে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাজে লাগাতে পারলে সাসটেনেবল উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে।