News update
  • CA Yunus pays homage to Liberation War martyrs on Victory Day     |     
  • Bangladesh capital market extends losing streak for second day     |     
  • Bangladesh celebrates Victory Day Tuesday     |     
  • 'Different govts presented history based on their own ideologies': JU VC     |     

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2022-07-08, 4:03pm




মিয়ানমার সেনা ছাউনিতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট হামলার অজুহাত দেখিয়ে সে দেশের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা নিধন শুরু করে সেনাবাহিনী। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্বিচারে নারীদের ধর্ষণ, নির্যাতন, গুলিবর্ষণ ও আগুনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিলে অনেক রোহিঙ্গা প্রাণ হারায়। প্রাণ বাচাঁতে লাখ লাখ জাতিগত রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। সরকার হয়তো ভেবেছিল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রোঙ্গিারা নিজ দেশে ফেরত যাবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতাগোষ্ঠি বাংলাদেশ সরকারের এই মানবিকতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে। কিন্তু রোহিঙ্গারা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের গলার কাঁটা। কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ সামান্য অগ্রগতি হয়েছিল। যেহেতু ২০১৮ সালে দুই প্রতিবেশি দেশের গৃহীত উদ্যোগের আওতায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একজনকে ও ফেরত পাঠানো যায়নি। তাই বাংলাদেশ সরকার বার বার জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জোরালো সহায়তা চেয়েছে।

বাংলাদেশের সরকার বিশ্বাস করে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছায় এবং মিয়ানমারের রাখাইনে দীর্ঘ মেয়াদী প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। কারণ, রাখাইনে তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এবং এই রাজ্য তাদের আদিনিবাস। যদিও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা থেকে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে নিরাপদে পালিয়ে এসেছে। এ ছাড়া ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিক থেকে সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে এবং বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর মতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আগমনের পর ১ লাখ ২০ হাজার শিশুর জন্ম নেয়ায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

অবিলম্বে তাদের প্রত্যাবাসনের আগে সুরক্ষার দায়িত্বে বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি কার্যকর ও মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করার জন্য সচেতনতা বাড়াতে এবং তাদের দাবির জন্য চাপ সৃষ্টি করতে রোহিঙ্গারা সম্প্রতি কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে একটি ‘গো-হোম’ ক্যাম্পেইন শুরু করে। বিশ্ব শরণার্থী দিবসে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ ছিল ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে বড়। এর কারণ হচ্ছে ১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতা এবং নিরাপদে বাড়ি ফেরার দাবিতে পরিণত হয়েছিল।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতার জন্য মূলত মিয়ানমার সরকারই দায়ী। কারণ, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসনকে উৎসাহিত করার মতো পরিস্থিতি তৈরিতে মিয়ানমার সরকার অনীহা প্রকাশ করে।

মিয়ানমার সরকার রাখাইনে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দ্বিপাক্ষিক উদ্যেগকে ব্যর্থ করে দেয়। মিয়ানমার সরকারের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে একজন রোহিঙ্গাকে ও রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি। কারণ, তারা তাদের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের আশ্বাস ছাড়া ফিরবে না। বাংলাদেশ প্রায় ৮ লাখ ৭৬ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নিবন্ধন করেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার রোহিঙ্গার পরিচয় মিয়ানমার সরকার নিশ্চিত করেছে। অবশিষ্টদের মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের চট্রগ্রামের বাসিন্দা বলে দাবি করে। 

দ্বিপাক্ষিক উদ্যেগ ব্যর্থ হলেও, আঞ্চলিক, বৈশ্বিক এবং আন্তর্জাতিক ফোরামগুলো, যেমন- জাতিসংঘ এবং শরণার্থী সংস্থা রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ এবং নিরাপদে ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির অক্ষমতা প্রমাণ করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করেছে। কক্সবাজারের কুতুপালং এবং টেকনাফের ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা বাড়ি-ঘরে অভিযান শুরু করেছিল কারণ, তারা বিশ্বাস করেছিল যে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের নাগরিকত্ব প্রদান এবং প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে জোরালো কোন চাপ দেয়ার উদ্যেগ নেয়নি। বাংলাদেশ সরকারের মতো রোহিঙ্গারাও বিশ্বাস করে প্রত্যাবাসনই তাদের একমাত্র যন্ত্রণার অবসানের উপায়।

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্বের উচিত মিয়ানমারের ওপর চাপ জোরদার করা কারণ, বাংলাদেশ ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের চলমান বোঝা সামলাতে পারছে না। বাংলাদেশ একা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানও করতে পারবে না। তথ্য সূত্র বাসস।