News update
  • Climate Crisis Fuels Hunger, Migration, and Global Instability     |     
  • Trump, Putin to Meet in Budapest After ‘Productive’ Call     |     
  • Dhaka stocks end week flat; Chattogram extends losses     |     
  • Torch rallies in 5 northern dists for Teesta Master Plan execution     |     
  • Go live together Friday, we stand united: Prof Yunus urges media      |     

রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমছে, মনোযোগ হারাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2023-01-21, 10:17am

773340a0-98ba-11ed-861a-ef8ebe97cf9e-0acba6c1a405be20f6488727298f71e41674274645.jpg




বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমে আসছে। এই সংকটের শুরুর দিকে বিভিন্ন দেশ এবং দাতা সংস্থা সাহায্য নিয়ে যেভাবে এগিয়ে এসেছিল সেটি ক্রমাগত কমছে গত কয়েক বছর ধরেই।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিওর কর্মকর্তারা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই সহায়তা আরো কমে যাবার ইঙ্গিত মিলছে।

কারণ, পশ্চিমা দেশগুলোর মনোযোগ এখন সেদিকেই নিবিষ্ট।

পর্যাপ্ত অর্থ না আসার জন্য কিছু বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি কমিয়ে আনতে শুরু করেছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য বৈদেশিক সাহায্যের বিষয়টি যারা সমন্বয় করে জয়েন্ট রেসপন্স প্লান বা জেআরপির।

তাদের হিসেবে ২০২২ সালে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বা ইউএনএইচসিআর ৮৮১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চাইলেও অগাস্ট পর্যন্ত এসেছিল মাত্র ২৮৫ মিলিয়ন ডলার। শেষ পর্যন্ত গত বছর মোট কত অর্থ এসেছে তা নিয়ে হিসেব নিকেশ এখনো চলছে।

দুই হাজার সতের সালের অগাস্ট থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া শুরু করে। বারবার চেষ্টা করেও বাংলাদেশ সরকার তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে পারেনি।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হিসেবে ভাসানচর সহ কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে প্রায় দু লাখ পরিবারে নয় লাখ আটত্রিশ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাস করছে। যদিও বাংলাদেশের হিসেবে রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা বার লাখেরও বেশি।

মূলত ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, জ্বালানি ও চিকিৎসার মতো বিষয়গুলোতে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা, জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। আর শিক্ষার বিষয়টির দেখভাল করে ইউনিসেফ।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তারা মূলত অর্থ ব্যয় করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১৫০টি সংস্থা রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য নিয়ে কাজ করে আসছে।

তবে সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কিছু সংস্থা যথেষ্ট ফান্ড পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাদের কিছু কর্মসূচি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় থাকা সরকারি সংস্থা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন যে গত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রত্যাশা অনুযায়ী আসছে না, যা এখন আরও কম আসছে।

মনোযোগ কমছে ২০১৯ সাল থেকেই

দুই হাজার উনিশ সালের অগাস্টে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আবদুল মোমেন বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন যে রোহিঙ্গাদের জন্য একদিকে বৈদেশিক সাহায্য কমছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে নিজেদের তহবিল থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা শরণার্থীদের জন্য খরচ করেছে।

মূলত দেশে কর্মরত প্রায় সবগুলো আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার অফিস রয়েছে এই শহরে এবং একই সাথে কাজ করছিলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও।

অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বিবিসি বাংলাকে বলছেন রোহিঙ্গাদের জন্য কখনোই যে অর্থ প্রত্যাশা করা হয়েছিলো সে অনুযায়ী অর্থ পাওয়া যায়নি।

সহায়তা কতটা চাওয়া হচ্ছে আর আসছে কতটা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক সহায়তার জন্য সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) তথ্য অনুযায়ী মূলত ২০১৯ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সহায়তা।

দুই হাজার উনিশ সালে ৯২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়ে পাওয়া গিয়েছিলো ৬৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে ১০৫৮ মিলিয়ন ডলার চেয়ে পাওয়া গেছে ৬৮৪ মিলিয়ন ডলার।

আর দুই হাজার একুশ সালে ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়ে পাওয়া গেছে ৬৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

দুই হাজার বাইশ সালে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ কতো তা নিয়ে এখনো হিসেব নিকেশ করছে আইএসসিজি।

তবে সেটি আগের বছরের চেয়ে কম হবে বলেই মনে করছেন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা।

আর চলতি বছরের শুরু থেকেই কিছু বেসরকারি সংস্থা মানবিক কিছু কর্মসূচি বন্ধ করার বিষয়টি নিজ নিজ কর্মীদের জানিয়েছে।

“মূলত ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিলো। কিছু প্রকল্পের জন্য দাতাদের অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই বন্ধ হচ্ছে কিছু কর্মসূচি,” বলছিলেন একটি বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মকর্তা। তবে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

“আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব হারাচ্ছে এটি ঠিক, যা অত্যন্ত দু:খজনক। গত কয়েক বছর ধরেই এটা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ক্যাম্পগুলোতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন তহবিল এভাবে কমতে থাকলে রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয়দের সাথে সংকট তৈরির আশঙ্কার বিষয়টিও সেখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দাতা দেশ ও গোষ্ঠীকে আগেই অবহিত করা হয়েছে।

এসব কর্মকর্তাদের মতে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি কমে গেলে সেটি ত্রাণ কাজকে বাধাগ্রস্ত করবে। এ ধরণের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে। যার প্রভাব পড়বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর।

ফারাহ কবির বলছেন এ সংকটকে এড়িয়ে না গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বরং রোহিঙ্গাদের পাশে আরও শক্তভাবে দাঁড়ানো উচিত।

ওদিকে পাঁচ বছর পার হলেও রোহিঙ্গারা কবে মিয়ানমারে ফিরে যাবে সে কথা কেউই বলতে পারছে না। এনিয়ে যে আলোচনা চলছিল তারও কোনো গতি নেই।

ফলে নিজ দেশে ফেরা অনিশ্চিত জেনেই অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশেই নিজেদের ভাগ্য অন্বেষণে ব্যস্ত। বৈধভাবে কাজের সুযোগ না থাকলেও জীবনের তাগিদেই তারা জীবিকা খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।