News update
  • Woman, son among four die as lightning strikes in Narsingdi     |     
  • BD, Indian, Pakistani students under attack by mobs in Kyrgyzstan     |     
  • Journalists don’t need to enter BB, every info on website: Quader     |     
  • Leverage national consensus to sign basin-based water treaties     |     
  • Parts of northern India scorched by extreme heat      |     

আজ সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2023-03-07, 7:30am

resize-350x230x0x0-image-214812-1678125797-617748fa9cf1afb2ad6c84ac2f5362741678152636.jpg




ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন আজ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তরের ৭ মার্চ দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ পরবর্তীতে স্বাধীনতার সংগ্রামের বীজমন্ত্রে রূপ নেয়। এ ভাষণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলিল নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনাও তৈরি করে। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ ছাড়াও এ ভাষণটি পৃথিবীর অনেক ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ এর ৭ মার্চ দেওয়া উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে মুক্তির লক্ষ্যে এগিয়ে যায়।

১৯৪৭ সালে ধর্মীয় চিন্তা, সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা ও দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিসত্তা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয় তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে গর্জে ওঠে উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী শ্লোগানের উদ্দামতায় বসন্তের মাতাল হাওয়ায় সেদিন পত্ পত্ করে ওড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা। লাখ শপথের বজ্রমুষ্টি উত্থিত হয় আকাশে।

সেদিন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন। ফাগুনের সূর্য তখন মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ, তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধু দরাজ গলায় ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি’ এরপর জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার মহাকাব্যের কবি ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম..., এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান বঙ্গবন্ধু।

তিনি বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রীত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত। আমি বলে দিতে চাই- আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সবশেষ দু’টি বাক্য, যা পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিক-নির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়।

বঙ্গবন্ধু বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা’।

সেদিনের সেই সভায় উপস্থিত তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু তার চশমাটা সেদিন ডায়াসের উপর রেখে ১৮ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার পুরোটাই অলিখিত। একদিকে তিনি পাকিস্তানিদের প্রতি চারদফা শর্ত আরোপ করলেন, অন্যদিকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে বললেন। ভাতে মারার কথা বললেন, পানিতে মারার কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের আগে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম। একজন তাকে বললেন জনগণ কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়া মানবে না। বঙ্গবন্ধু তাকে বললেন, তুমি তোমার কাজ কর। আমি তাদের নেতা, আমি তাদের পরিচালিত করব।’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরে ইতিহাসের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের পর পুরো বাংলাদেশে পাকিস্তানীদের পরিবর্তে বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকে বিভিন্ন জায়গায় পূর্ব পাকিস্তান শব্দ মুছে বাংলাদেশ লিখেন।

তিনি বলেন, এ ভাষণের পর পুরো দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় চলতে থাকে। এ ভাষণ গুটি কয়েক রাজাকার ছাড়া পুরো বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।

রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুধু বাঙালি জাতিকে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান নয়। এটি সব জাতির মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিল। তথ্য সূত্র বাসস।