News update
  • Dhaka concerned at dwindling funds for Rohingyas     |     
  • Rohingya crisis in uncertainty; WASH sector faces challenges     |     
  • HRW delegation meets Commission of Inquiry on Disappearances     |     
  • US Chargé d'Affaires Ann Jacobson to Meet Political Parties in BD      |     
  • With trees in flowering farmers hopeful of bumper mango crop     |     

বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় মিয়ানমার সীমান্তে ২০০রও বেশি জান্তা সদস্য

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-03-19, 9:45am

hjghjghjj-09aab71518f38c3f0370157f0ef782251710820072.jpg




বাংলাদেশ সীমান্তরেখা থেকে সরে গেছে মিয়ানমারের জান্তা নিয়ন্ত্রিত বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যকার সংঘাতের স্থল। তবুও জান্তা বাহিনীর অন্তত ১৭৯জন সদস্য গত সপ্তাহে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

এমন আরও দুই শতাধিক সদস্য কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিরা।

যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন, এমন কোনও তথ্য তার জানা নেই।

ফেব্রুয়ারিতে সীমান্ত চৌকিগুলোতে আরাকান আর্মির অভিযানের তীব্রতায় টিঁকতে না পেরে বাংলাদেশ পালিয়ে এসেছিলেন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপি-র সদস্যরা। পরে অবশ্য তাদের সবাইকে ফেরত পাঠানো হয়।

সীমান্তের অপর পাশে দুই পক্ষের সংঘাতে কাছাকাছি থাকা বাংলাদেশের গ্রামগুলোতেও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

সেবার ঘটনার কেন্দ্রস্থল ছিল ঘুমধুম সীমান্ত। এবারে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন হয়ে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে।

গত সপ্তাহে আসা ১৭৯ জন বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি-র হেফাজতে রয়েছেন। তাদের রাখা হয়েছে বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

রোববার যারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে বিজিবি-র কঠোর প্রহরার কারণে তারা আর পেরে ওঠেননি।

নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল আবসার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বেশ কয়েকদিন পর গতকাল গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। কিছু লোক আসার চেষ্টা করছিল, কিন্তু আসতে পারে নাই। কারণ, বিজিবি পাহারায় ছিল।”

এবার দুই দফায় আসেন এই ১৭৯ জন।

মি. আবসার জানান, প্রথম দফায় আসেন ২৯ জন, দ্বিতীয় দফায় ১৫০ জন।

সাংবাদিক মি. আহমেদের তথ্য অনুযায়ী এদের মধ্যে দু’জন দোভাষীও রয়েছেন।

প্রথমে সীমান্তের শূন্য রেখায় একটি চা বাগানে আশ্রয় নিয়েছিলেন মিয়ানমারের এই নাগরিকরা।

নুরুল আবসার জানান, সেখানে গিয়ে বিজিবি সদস্যরা তাদের নিরস্ত্র করেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের নিয়ে আসা হয় বর্ডার গার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসাদের নিরাপত্তা, খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা বিজিবি-র তরফেই করা হচ্ছে।

সীমান্ত থেকে সরেছে সংঘাত

গত দোসরা ফেব্রুয়ারি থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়।

জান্তা বাহিনীর দখলে থাকা সীমান্ত চৌকিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহীরা।

এর জেরে ৪ঠা থেকে ৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বিজিপি-র ৩০২জন সদস্যসহ মোট ৩৩০ জন।

বিজিবি-র ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে জানান, "ফেব্রুয়ারির পর আর ওই সীমান্ত দিয়ে কোনও বিজিপি সদস্য প্রবেশ করেননি।"

রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল বলে এখন দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগও নেই।

সপ্তাহ দুয়েক হল গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি জানিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গত কয়েকদিন তারা দূরে সংঘর্ষের আওয়াজ পাচ্ছেন।

"সংঘাত চলছে মংডু শহরের কাছাকাছি। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে খানিকটা দূরে অবস্থিত এই শহরতলি", বলছিলেন তিনি।

অপর পাশে সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে?

মিয়ানমারের পত্রিকা ইরাবতীর ৭ই ফেব্রুয়ারির এক খবরে বলা হয়, মাস খানেক ধরে হামলা চালানোর পর গত ৬ই ফেব্রুয়ারি জাতিগত রাখাইন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাজ্যটির মিনবিয়া শহরাঞ্চলে থাকা দুটি জান্তা সামরিক ইউনিটের সদর দপ্তর দখল করে নিয়েছে।

একই দিনে বাংলাদেশের সাথে সীমান্তে মংডু শহরাঞ্চলের টং পিও টহল চৌকিও দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি।

এছাড়া মঙ্গলবার পর্যন্ত রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে ম্রাউক-ইউ, কায়াকদো, মিনবিয়া, রামরি, আন এবং মাইবন এলাকায় সংঘর্ষ চলেছে।

সিতওয়েতে একসময় বাংলাদেশের মিশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "রাখাইনে সেনাবাহিনীর মূল শক্তি কিন্তু ভেতরে তাদের ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে। বর্ডারে তাদের উপস্থিতি নেই। ফলে ওইসব ক্যাম্প বা সেনাঘাঁটির দিকে সংঘাত বিস্তৃত হয়েছে।"

“সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিজিপি সেনা সদস্যদের মতো প্রশিক্ষিত বা অস্ত্রে সজ্জিত নয়। তাই অপেক্ষাকৃত সহজে তাদের অবস্থান থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়েছে”, যোগ করেন মি. ইসলাম।

এদিকে, বান্দরবান সীমান্তের কোনও চৌকিই আর বিজিপির নিয়ন্ত্রণে নেই বলে ধারণা নাইক্ষ্যংছড়ির ইউপি চেয়ারম‍্যান নুরুল আবসারের।

উপজেলার চার ইউনিয়ন নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুমধুম, দোছড়ি ও সোনাইছড়ির অপর পাশে সব ক্যাম্পই আরাকান আর্মির দখলে বলে জানাচ্ছেন তিনি।

বিপরীত পাশের সীমান্তরেখায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতির কথা বলেন ৩৪ বিজিবি-র অধিনায়কও।

ফেব্রুয়ারির তুলনায় আশ্রয়প্রার্থীদের স্রোত কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। যেটি তাদের উপস্থিতি ও যুদ্ধে অবস্থান হারানোর ব্যাপারে ধারণা দেয়।

মেজর (অব.) এমদাদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, জান্তা হয়তো তাদের সেনা ছাউনি সরিয়ে নিয়েছে। যে কারণে সামরিক উপস্থিতি কমে থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, “অতীতের ঘটনাবলি থেকে বর্ডার গার্ড পুলিশ শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এতে তাদের ওপর হামলা কমেছে। তাদের আশ্রয় চাওয়ার হারও কমেছে।”

সীমান্তের নিরাপত্তা

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটার।

রাখাইনে গৃহযুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টাও দেখা যায়। কিন্তু কোনও ভাবেই যেন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আর কেউ ঢুকতে করতে না পারে সেজন্য কঠোর অবস্থান নেয় বাংলাদেশ।

সেজন্য সীমান্তে সার্বক্ষণিক নজরদারির সঙ্গে অতিরিক্ত কড়াকড়ি এবং বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।

সীমান্তের একটা বড় অংশে বিভাজক রেখা হিসেবে কাজ করেছে নাফ নদ।

দুই দেশের সীমানা নির্ধারণকারী নাফ নদে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে দুই বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি এবং কোস্ট গার্ড। যৌথভাবে নাফ সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন তারা।

স্থলভাগেও অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করতে দেখা গেছে।

সব মিলিয়ে যে ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো, দক্ষিণপূর্ব সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের জনবল অন্তত দ্বিগুণ করা হয়েছে।

রাখাইনের ভৌগোলিক অবস্থান আঞ্চলিক ভূরাজনীতির বিচারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দুই শক্তিধর দেশ চীন ও ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্প সেখানে চলমান।

আরাকান আর্মি গত ১৬ জানুয়ারি পালেতোয়া শহরের দখল নেয়। পাহাড় ঘেরা এই শহরটিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণের প্রকল্প চলমান।

এমদাদুল ইসলাম বলেন, আরাকান আর্মি 'টার্গেট করে ভূরাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই' এই অঞ্চলে তাদের আধিপত্য বাড়াচ্ছে।

যেভাবে ফেরত পাঠানো হয় ৩৩০ জনকে

ফেব্রুয়ারিতে বড় ধরনের অনুপ্রবেশের পর আগতদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে বাংলাদেশ।

পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্য-সহ মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলে কয়েকদিন।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রাখার কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তারা সীমান্তরক্ষী-সহ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। যাদের মধ্যে মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা, ইমিগ্রেশন ও পুলিশের সদস্যরাও ছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় বাংলাদেশের একটি জাহাজে করে তাদের মিয়ানমারের জাহাজে তুলে দেয়া হয়।

মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজটি সিতওয়ে বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সীমানার কাছে আসে। সেটি গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছিল।

বিজিবি-র কক্সবাজার রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয় তাদের।

এই হস্তান্তরের জন্যই মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ সিতওয়ে বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সীমানার কাছে আসে। বিবিসি বাংলা