News update
  • Bumper harvest of Jujube in Ramu Upazila     |     
  • Govt urged to offer scholarships to Palestinian students     |     
  • Caretaker Govt Review Hearing on Supreme Court Cause List     |     
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     

এমভি আব্দুল্লাহর মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলো সোমালি জলদস্যুরা

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-03-20, 8:43pm

trytyrt-1f79d7b1b1de21eb09b107f5f813f4241710945853.jpg




জিম্মি করার আট দিন পর প্রথমবারের মতো এমভি আব্দুল্লাহ’র মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করেছে সোমালি জলদস্যুরা।

বুধবার দুপুরে দস্যুরা তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

“দুপুর দুইটার দিকে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারের ব্যাপারে আমরা আলোচনা শুরু করেছি,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. ইসলাম।

জিম্মি করার পর ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি বেশ কয়েকবার হাতবদল করা হয়। এখন যারা যোগাযোগ করছে তারাই অপহরণের মূল হোতা বলে দাবি জাহাজটির মালিকপক্ষের।

“শুরুতে যারা অপহরণ করেছিল তারা ছিল মূলত ভাড়াটে। এখন মূল পক্ষের সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে,” বলেন মি. ইসলাম।

তবে দস্যুদের সাথে আলোচনার কিছু বিষয় প্রকাশ করেনি মালিকপক্ষ। নাবিকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই গোপনীয়তা বলে জানিয়েছে তারা।

গত ১২ই মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ জন নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সোমালি জলদস্যুরা।

এরপর থেকেই জলদস্যুদের সাথে যোগোযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে আসছিলো জাহাজটির মালিকপক্ষ। এ লক্ষ্যে তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তৃতীয় একটি পক্ষের সহায়তাও নিচ্ছিলো।

মূলত সেই মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমেই দস্যুরা জাহাজের মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছেন মি. ইসলাম।

দস্যুরা যা বলেছে

জিম্মিরা কোথায় আছেন? কেমন আছেন? প্রাথমিকভাবে এসব বিষয়েই অপহরণকারীদের সাথে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

তবে দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে দস্যুরা এখনও কিছু জানায়নি।

“অপহরণের পর আজকেই প্রথম তাদের সাথে যোগাযোগ হলো। ফলে মুক্তিপণ বা অন্য কোনো দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে তারা কিছু জানায়নি। ধীরে ধীরে হয়তো তারা বিষয়টি তুলবে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. ইসলাম।

তবে জানতে চাইলেও জিম্মি নাবিকদের অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি অপহরণকারীরা।

“লোকেশনের ব্যাপারে তারা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি। শুধু এতটুকুই বলেছে যে, জিম্মিরা সবাই সুস্থ আছে,” মিজানুল ইসলাম।

জিম্মি নাবিকদের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মি. ইসলাম।

“খাবার-দাবারের ব্যাপারে তাদের কোনো সমস্যা এখনও হচ্ছে না। তবে মানসিকভাবে সবাই কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. ইসলাম।

খুব শিগগিরই নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে জাহাজের মালিকপক্ষ।

“তারা যোগাযোগ করায় এখন আলোচনার একটা পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সমঝোতার মাধ্যমে খুব শিগগিরই নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা রাখি,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. ইসলাম।

মুক্তিপণ নাকি অভিযান?

সোমালি জলদস্যুরা এমন একটি সময়ে এমভি আবদুল্লাহ’র মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলো, যখন জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করতে সোমালি পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সদস্যদের অভিযান প্রস্তুতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ভারতীয় কমান্ডোরা জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনে অভিযান চালিয়ে ১৭ ক্রুকে উদ্ধারের পর এমভি আবদুল্লাহতে অভিযানের এই পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে সোমালিয়ার জলদস্যু অধ্যুষিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডের পুলিশ কর্মকর্তারা।

এর আগে, রোববার এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাইয়ের সাথে অভিযুক্ত দুইজনকে আটকের কথাও জানিয়েছিলো তারা।

তবে বাংলাদেশি জাহাজটির মালিকপক্ষও এমন অভিযানের পক্ষে না।

“এ ধরনের অভিযান জিম্মি নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

“কাজেই অভিযান নয়, বরং যে উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে এবং নিরাপদে নাবিকদের মুক্ত করা যাবে, সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো,” বলেন মি. ইসলাম।

এক্ষেত্রে মুক্তিপণ চাওয়া হলে, সেটি দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন এমভি আবদুল্লাহ’র মালিকপক্ষ।

“আগেও আমাদের একটি জাহাজ ছিনতাই হয়েছিল এবং মুক্তিপণ দিয়েই সেটি উদ্ধার করা হয়েছিল। এবারও মুক্তিপণ চাওয়া হবে বলে আমরা ধারণা করছি এবং সেটার জন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. ইসলাম।

মুক্তিপণ দাবি করার পর জলদস্যুদেরকে শেষমেশ কত টাকা দেওয়া হবে, সেটি নির্ধারিত হবে দর কষাকষির মাধ্যমে।

“যারা এখন দু’পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে দিচ্ছে, মধ্যস্থতাকারী সেই প্রতিষ্ঠানটিই দর কষাকষিতে সাহায্য করবে,” বলেন মিজানুল ইসলাম।

উল্লেখ্য যে, ২০১০ সালে এমভি জাহান মনি নামে কবির গ্রুপের আরও একটি জাহাজ ছিনতাই করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। তখন জাহাজটির ২৫ জন নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়।

দীর্ঘ চেষ্টার পর ১০০ দিনের মাথায় মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজসহ তাদেরকে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছিলো।

কী বলছে জিম্মি নাবিকদের পরিবার?

জিম্মি নাবিকদের পরিবারও এই ধরনের অভিযান না চালানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের মা শাহানুর বেগম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা কোনো যুদ্ধ করে সন্তান ফেরত চাই না।”

“এমনিতেই টহলের হেলিকপ্টার দেখার পর থেকে দস্যুরা জিম্মিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা চাই মুক্তিপণের মাধ্যমে ওদের ফেরত আনা হোক,” বলেন মিজ বেগম।

সবশেষ যোগাযোগের সময়ও নাবিকরা তাদের পরিবারকে জানিয়েছেন, জলদস্যুরা জাহাজে থাকা খাবার শুধু খাচ্ছেই না, সেগুলো নষ্টও করছে।

এর ফলে কিছুদিনের মধ্যেই খাদ্য সংকট তৈরি হতে পারে, যা জিম্মি নাবিকদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

জাহাজে জিম্মি ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের সাথে তার বড় ভাই ওমর ফারুকের সর্বশেষ কথা হয় তিনদিন আগে।

ওমর ফারুক বিবিসি বাংলাকে জানান, তখন সে জানিয়েছিলো জলদস্যুরা প্রতিদিন প্রায় একশো জনের খাবার নষ্ট করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বড় সংকটে পড়তে হবে তাদের।

এমন পরিস্থিতিতেই এমভি আব্দুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করতে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতির কথা শোনা যাচ্ছিলো।

তবে নাবিকের প্রাণহানির ঝুঁকি থাকায় পরিবার ও জাহাজের মালিকপক্ষের মতো বাংলাদেশের সরকারও সশস্ত্র অভিযানের প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

এখন কোথায় আছে জাহাজটি?

পরিবারের সাথে যোগাযোগ না থাকলেও জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণের থাকা জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান মনিটর করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পাশাপাশি বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনও (বিএমএমওএ) জাহাজটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।

দস্যু বাহিনী জাহাজটিকে নিয়ে কয়েক দফায় ভারত মহাসাগরে স্থান পরিবর্তন করে।

জাহাজটির এই গতিপথ ও অবস্থান দেখে বিএমএমওএ জানিয়েছে, জাহাজটি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার দেড় দিনের মাথায় তারা এটিকে সোমালিয়া উপকূলের কাছাকাছি নিয়ে যায়।

জলদস্যুদের কবলে পড়ার পরদিন বুধবার এটি ছিল সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু উপকূলের কাছাকাছি অবস্থানে। পরবর্তীতে সেটিকে আরো উত্তর দিকে সরিয়ে প্রথমে নেয়া হয় গারদাকে।

এরপরই ভারতীয় নৌবাহিনী জাহাজটি ঘিরে নজরদারি বাড়ালে সেটি আবারো সরিয়ে নেয়া হয় গদবজিরান উপকূলে।

গত তিনদিন ধরে জাহাজটি একই জায়গায় নোঙ্গর করে আছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা জানাচ্ছে, জাহাজটি গদবজিরান শহর থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এমভি আব্দুল্লাহ যে জায়গায় ছিল গত তিনদিন ধরে সেখানেই আছে।” বিবিসি বাংলা