বন্যায় দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে গিযে পানিতে ডুবে তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া যায়। এই খবরে নোয়াখালীর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা হাসপাতালে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
ত্রাণ দিতে যাওয়া শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার উত্তরা ৩ নং সেক্টর এলাকা থেকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে নোয়াখালীতে যান একদল শিক্ষার্থী। তারা নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে নেয়া শুকনো খাবার ও চাল-ডাল বিতরণ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় নোয়াখালীর সদর উপজেলার ২ নং দাদপুর ইউনিয়নের খলিফার হাটে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে সড়কের পাশে থাকা দীঘির পানিতে ডুবে আহত হন কথা (২১), আরবী (১৮) এবং সালমান (২২)।
এ সময় সঙ্গে থাকা অপর শিক্ষার্থীরা তাদের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠান। মেডিসিন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা তাদের দেখে ওষুধ ও স্যালাইন লিখে দেন। প্রথমে তাদের স্যালাইন সংকটের কথা বলে বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়। পরবর্তীতে তারা ঢাকা থেকে ত্রাণ বিতরণ করতে এসেছে বলে জানালে ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স তাদের হাসপাতাল থেকেই স্যালাইন দেন।
পরবর্তীতে অসুস্থ আরবীর ওয়াশরুমে যাবার প্রয়োজন হলে হাতের ক্যানুলা খুলতে একাধিকবার নার্সকে ডাকেন। নার্স না আসায় পাশের এক রোগীর স্বজন তার হাতের ক্যানুলা খুলে দেন। কিন্তু ক্যানুলার মুখ বন্ধ করেননি। এতে তার হাত থেকে অনেক রক্ত ঝরে সে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখনো নার্স না আসায় সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাদের তিনজনকেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভর্তি করেন।
পরবর্তীতে স্থানীয় ছাত্রদের বিষয়টি জানানো হলে তারা সবাই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ করেন এবং ক্যানুলা খুলে দেয়া অন্য রোগীর স্বজনকে মারধর করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়লে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল সেখানে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
পরবর্তীতে হাসপাতালের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাসিনা জাহান, সিভিল সার্জন ডাঃ মাছুম ইফতেখার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিমসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম, রোগীদের হয়রানি, দালাল চক্রের দৌরাত্ম, সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রাখা, হাসপাতালের ঔষধ অবৈধভাবে বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রি করা, হাসপাতাল কম্পাউন্ডে দোকান দিয়ে উন্মুক্তভাবে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করা, ডাক্তার ও নার্সদের সঠিকভাবে ডিউটি না করা, রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায়সহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন স্বেচ্ছাসেবী ও ছাত্ররা।
উত্তরা ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্টাডিজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সাল ইবনে মাসুদ বলেন, আমরা ত্রাণ বিতরণ করতে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়বো এটা কখনো ভাবিনি। আমাদের সাথে থাকা শিক্ষার্থীরা পানিতে ডুবে অসুস্থ হয়েছেন। তারা সরকারি হাসপাতালেও সঠিকভাবে চিকিৎসা পাননি। বিষয়টি অত্যন্ত কষ্ট দিয়েছে আমাদের। এখানের ডাক্তার নার্স সবাই গাফিলতি করেছে।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডাঃ মাছুম ইফতেখার বলেন, আমি যদিও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের কোনো দায়িত্বে নেই তবুও নোয়াখালীতে ত্রাণ দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার গাফিলতির খবর শুনে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আশা করছি এর সঠিক সমাধান হবে।
এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিনকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তথ্য সূত্র সময় সংবাদ।