News update
  • Caretaker Govt Review Hearing on Supreme Court Cause List     |     
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     
  • Sudan war becomes more deadly: Ethnically motivated attacks up     |     

ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা, পেছনের গল্প জানালেন সমন্বয়ক কাদের

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-09-22, 10:35pm

ertertert-8d3707975628bf503a1cf408ee0f637b1727022947.jpg

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেয়া ৯ দফা দাবি তৈরিতে ছাত্র শিবির অনেকটাই সহায়তা করেছিল বলে জানিয়েছেন সমন্বয়ক আবদুল কাদের। ছবি: সংগৃহীত



বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সাদিক কায়েমের এক ফেসবুক পোস্ট প্রকাশ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিবিরেরে রাজনীতি নিয়ে অনলাইন ও অফলাইনে চলছে আলোচনা।

এরইমধ্যে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের ফেসবুক পোস্টও ভাইরাল হয়েছে। ওই পোস্টে ছাত্র আন্দোলন ঘিরে দেয়া ৯ দফা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন তিনি।

তার দেয়া তথ্যমতে, আন্দোলন এবং ৯ দফার পেছনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির সহায়তা করেছে।

ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, আন্দোলন যাতে ব্যর্থ না হয় এবং সরকারের কোনো চাপে যেন আন্দোলনকারীরা আত্মসমর্পণ না করে সে বিষয়ে ছাত্রশিবির সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। এ বিষয়ে ঢাবি শাখা এবং শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কাজ করেছে।

আবদুল কাদেরের দেয়া পোস্টের ক্যাপশন ছিল ‘ঐতিহাসিক নয় দফা নিয়ে কিছু কথা’।

এতে তিনি লিখেন, কোটা সংস্কারকে উদ্দেশ্য করে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল; কিন্তু সরকার পরিস্থিতি ঘোলাটে করলে আন্দোলন ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ৯ দফার অবতারণা হয়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলাম; কিন্তু ১৬ তারিখ মঙ্গলবার আবু সাঈদসহ ৬ জন যখন শহীদ হয়, ওইদিন রাত ১২টায় সামনের সারির সমন্বয়করা মিলে আমরা একটা অনলাইন মিটিং করি।

“মিটিংয়ে প্রথম এজেন্ডা-ই ছিল, ‘আজকে যে ছয়জন শহীদ হইলো, এই ছয়টা লাশের বিনিময়ে শুধু কোটা সংস্কার কি না?’ তখন সবাই ‘হই হই’ করে বলে উঠে, ‘ছয়টা লাশের বিনিময়ে শুধু কোটা সংস্কার হতে পারে না।’ পরবর্তীতে দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিসহ আরও কিছু দাবি উঠে আসে। বলে রাখা ভালো, আমরা এতদিন ‘বাংলা ব্লকেড’ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশসহ নানান সফ্‌ট এবং হার্ড কর্মসূচি নিয়ে মাঠে অবস্থান করেছিলাম; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে একেবারে নির্বিকার-নির্লিপ্ত মনোভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল”, লিখেন আবদুল কাদের।

তিনি লেখেন, ‘আলাপ-আলোচনার ধার ধারে নাই সরকার, কেবল হাইকোর্টের কাঁধে বন্দুক রেখে চুপচাপ দেখে যাচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যখন বেগতিক হয়ে যায়, ৬ জন শহীদ হয়, ওইদিনই সরকার আলোচনার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দেয়, আমাদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ দিতে থাকে আলোচনায় বসার জন্য। কিন্তু আমরা আলোচনার আহ্বানকে বারাবরের মতোই প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করি। যদিও ভেতর-বাহির থেকে আলোচনায় বসার নানারকম চাপ আসছিল।’

‘সরকার সংলাপের আহবান ফর্মালি জানিয়েছিল, কিন্তু সেটার প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের অবস্থান ফর্মালি ক্লিয়ার করি নাই। ক্লিয়ার করার সুযোগও পাই নাই। বুধবার গায়েবানা জানাজায় ঢাবি ক্যাম্পাসে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি চালায়, আমিসহ কয়েকজন আহত হই। হান্নান মাসউদ গুলিবিদ্ধ হয়। তখন থেকেই আমরা আন্দোলন পরিচালনা করে যাবার স্বার্থে কৌশলি অবস্থান নিয়ে গ্রেফতার এড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। যদিও সরকারের সংলাপকে প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার রাতে আমরা কিছু দাবি দাওয়া ঠিক করেছিলাম; কিন্তু পরবর্তীতে সবাই মিলে আলাপ-আলোচনা করে যে সেই দাবিগুলো ফাইনাল করবো সে সময় পাইনি। তবে আমরা বৃহস্পতিবার মাঠের কর্মসূচি (কমপ্লিট শাটডাউন) দিয়ে নিজেদের অবস্থান ক্লিয়ার করেছিলাম’, পোস্টে বলেন তিনি।

আবদুল কাদের লিখেন, ‘বৃহস্পতিবার আমি আর আসিফ ভাই এক বাসা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে চলে যাই। ওইদিন ১৮ তারিখ রাতেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। আমরাও কর্মসূচি চলমান রাখতে, গ্রেফতার এড়াতে বার বার জায়গা পরিবর্তন করে বেড়াচ্ছি। কারো সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ করতে পারতেছি না।’

শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সহায়তা করেছেন জানিয়ে আবদুল কাদের পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আন্দোলনের শুরুতেই নাহিদ ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে এক লোকের সঙ্গে মিট করায় এবং পরবর্তীতে আন্দোলনের পারপাসে একাধিকবার ওই লোকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়; পরবর্তীতে জানতে পারি তিনি ঢাবি শিবিরের ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু তখনও শিবিরের সভাপতি এবং সেক্রেটারির সঙ্গে ওইভাবে যোগাযোগ হয় নাই।

তিনি লেখেন, “শুক্রবার যাত্রাবাড়ি এলাকায় যখন আন্দোলন করছিলাম তখন শিবিরের ঢাবি সেক্রেটারি ফরহাদ ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলল, ‘আন্দোলনরত কয়েকজন সমন্বয়ক সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে, এত এত শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতেছে তারা। আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে। কিছু দাবি-দাওয়া দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, মানুষের সঙ্গে বেইমানি করা যাবে না।’ আমি সম্মতি জানাই। আমাদের তো আগেই অবস্থান ছিল আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। তাছাড়া মঙ্গলবার রাতের মিটিংয়ে ঠিক করা কিছু দাবি দাওয়া আমার মাথায় আছে।”

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার মতো মাঠে কোনো সিনিয়র নাই। আসিফ-নাহিদ ভাইকে গুম করে রেখেছে। আমি সাত-পাঁচ না ভেবে রিস্ক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ওইদিন জুমার নামাজের পর পরই যাত্রাবাড়িতে কয়কজন শহীদ হয়, সবগুলো আমার চোখের সামনেই ঘটতেছে। মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মেরে ফেলতেছে, এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারতেছিলাম না। তাছাড়া দীর্ঘদিন জেল-জুলুম, হামলা-মামলার শিকার হয়ে হাসিনার এমন অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছি; মাথা নত করি নাই। আমার পরিণতি কী হবে, সেটা ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করি নাই। চোখের সামনে মানুষ মেরে ফেলতেছে, মানুষের কথা চিন্তা করে নিজের জীবনের কথা ভাবার সময় পাই নাই। গত ৪/৫ বছর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই আমাদেরকে দৃঢ়তা ধরে রাখার শিক্ষাই দিয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরার সিদ্ধান্ত নিই।’

তিনি আরও লিখেছেন, “যাইহোক, কিছুক্ষণ বাদে ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি আমাকে আবারও ফোন দিল। বলতেছে, ‘কিছু দাবি দাওয়া খসড়া আকারে করছি, তোমার সঙ্গে আলোচনা করি’। আমাদেরও যেহেতু আগেই আলোচনা হয়েছিল অনেকগুলো দাবির বিষয়ে সেগুলো তখন উনার সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বিতভাবে তৈরি হয় ৯ দফা।”

‘তিনি একে একে কিছু দাবি বললেন। যেগুলা খুব কমন দাবি- যেমন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ, ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ প্রশাসনকে বরখাস্ত, সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনা, ভিসির পদত্যাগ। যেগুলো ৬ জন শহীদ হওয়ার পরে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকের আলোচনাতেই আমরা ভেবেছিলাম। এছাড়া মানুষজনও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছিল’, লেখেন তিনি।

‘শেষের দিকে গিয়ে ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি একটা দাবি অ্যাড করল- ‘ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে’: এটা আমি মানি নাই, দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনা হইলো। পরে আমি বললাম, ঢালাওভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা যাবে না, এক্ষেত্রে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলতে পারেন। পরে সেটাই ঠিক হইলো- ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে’। এই হইলো ৯ দফা তৈরির পেছনের গল্প। তবে ৯ দফা প্রচার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল শিবির”, পোস্টে লেখেন আবদুল কাদের।

তিনি লেখেন, ‘যেহেতু নেট নাই, গোলাগুলি-কারফিউয়ের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশরীরে হাউজে হাউজে পৌঁছে দিয়েছে, বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা তারাই করেছে।’

“আমাকে নতুন একটা সিম এবং মোবাইল কালেক্ট করার পরামর্শ দিল তারা। আমি স্টুডেন্টের বাসা থেকে সিম নিয়ে ওই নম্বরটা ৯ দফা সংবলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে দিয়ে দিলাম। ওইদিন সন্ধ্যায় বাসা থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে হেঁটে গিয়ে পরিচিত সাংবাদিকদেরকে ফোন দিয়ে ৯ দফার বিষয়টা জানাইলাম। টুকটাক ছাত্র রাজনীতি করার সুবাদে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। তো ওই রাতে তাদের অনেককে একটা একটা করে বাটন ফোন দিয়ে ম্যাসেজের মাধ্যমে দাবিগুলো লিখে পাঠাইছি। পুরা ৯টা দাবি একসাথে ম্যাসেজে পাঠানো যায় না। কাউকে আবার মুখে বলে দিছি, সে লিখে নিছে। কেউ আবার রেকর্ড করে নিছে। কনফার্ম হওয়ার জন্য অনেকেই ফোন দিছে, এটা আসলেই আমি দিছি কি না। বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলাকেও ফোন দিয়ে কনফার্ম করা লাগছে, ‘আমার পক্ষ থেকে এটা যাচ্ছে, আপনাকে একজন পেনড্রাইভের মাধ্যমে পৌঁছে দিবে।’ এইভাবে চলল রাতের ১১টা পর্যন্ত”, লেখেন কাদের।  

আবদুল কাদের লিখেন, ‘প্রতিদিন রাতের বেলায় বাসা থেকে দূরে চলে যেতাম। ফোন অন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে ২-৩ ঘণ্টা কথাবার্তা বলে, তাদেরকে কনফার্ম করে, ফোন বন্ধ করে আবার বাসায় ফিরতাম। সিনিয়ররা গুম অবস্থায় ছিল, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না বাকিদের সঙ্গেও। এইভাবেই চলতে থাকলো। আমার বাসা ছিল যাত্রাবাড়ি থানার পাশেই। গ্রেফতারের আতঙ্ক, তারপরও বাসায় থাকতে হতো। শুরুতেই যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। কোনো রাত মসজিদে কাটাইছি, কোনো রাত অর্ধেকটা বাহিরে কিংবা বাসার ছাদে কাটিয়ে শেষ রাতে বাসায় ফিরেছি।’