সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিন শুনানিতে মামলা, হামলা এবং প্রাণনাশের হুমকির মুখে কোনো আইনজীবীকে তার পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
জামিনের শুনানির জন্য চিন্ময় দাসকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
এমন প্রেক্ষাপটে জামিন আবেদনের শুনানি এক মাস (২রা জানুয়ারি) পিছিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত।
গত ২৬শে নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিনকে ঘিরে সংঘর্ষ, ভাঙচুর এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হওয়ার পরে করা এক মামলায় ৭০ জন হিন্দু আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় মি. দাসের জামিন আবেদনকারী আইনজীবীকেও আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া তার পক্ষে আদালতে শুনানি করতে পারেন এমন হিন্দু জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাও এসব মামলার আসামি।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলা এবং এ সংক্রান্ত কোনো মামলাগুলোতে যাতে কোনো আইনজীবী অংশ না নেন সে বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
ফলে এসব মামলায় অন্য আসামিদের জামিনের পক্ষে যেসব আইনজীবী ওকালতনামা দিতে যাচ্ছেন তারাই এক ধরনের চাপ ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিনের দাবি কোনো আইনজীবীর ওপর হুমকি বা নিরাপত্তাজনিত কোনো ধরনের সংশয় ছিল না এবং নাই।
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো আসামির পক্ষে আইনজীবীকে লড়তে না দিলে তার আইনি অধিকার বিঘ্নিত হয়।
এদিকে, মি. দাসের গ্রেপ্তার ও আইনি অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, যারা অপরাধে অভিযুক্ত তাদেরও উপযুক্ত আইনি সুযোগ দিতে হবে এবং মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মি. প্যাটেল।
কেন চিন্ময় দাসের পক্ষে আদালতে আইনজীবী দাঁড়ায়নি?
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর গত ২৬শে নভেম্বর চট্টগ্রামের সিএমএম কোর্ট জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে মি. দাসের অনুসারীদের বিক্ষোভের মুখে ওইদিন তাকে আদালত থেকে কারাগারে নিতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
এক পর্যায়ে সংঘর্ষে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। আহত হন অন্তত ৩০ জন।
ওইদিনই চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা এ আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করে জামিন চায়। কিন্তু সেদিন শুনানি হয়নি। তেসরা ডিসেম্বর শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছিল।
ওইদিন বিকেলে আইনজীবী আলিফ নিহতের বিষয়টি জানাজানি হলে পরবর্তী দুই দিন কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি।
এসব প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে চিন্ময় দাসকে সব মামলায় আসামি করার দাবি জানানো হয়।
আবার আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকেও আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়াতে আহ্বান জানানো হয়।
আইনজীবীদের গ্রুপেও এ বিষয়ে পোস্ট দেয়া হয়।
পরে পহেলা ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম আদালতের স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর জানা যায় মি. দাসের জামিন শুনানির দিন তেসরা ডিসেম্বর মঙ্গলবার।
কিন্তু রোববার পুলিশের কাজে বাধাদানের অভিযোগে করা এক মামলায় একজন আসামি মুফতি আহমদ হোসাইনের আইনজীবী কাজী মফিজুর রহমান ওকালতনামা জমা দিয়ে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। কারণ হিসেবে জানা যায়, এ ঘটনার কোনো মামলায় আইনজীবীদের না লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনজীবী সমিতি।
এ বিষয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, যেহেতু ঐ তিন মামলায় ওকালতনামা না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাহলে আমি ঐ ওকালত নামার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি এবং প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।
বিবিসি বাংলাকে মি. রহমান বলেন, “জামিন চাওয়া যদি অপরাধ হয় আমি বারের পেইজে বলছি যে তাহলে আমি জামিন চাইবো না ,প্রত্যাহার করে নিব।”
“ওকালত নামা দেয়াটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের রুলসে আছে। কেউ বাধা দেয় নাই, আজকে সকালে ফেসবুকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে যে আমি আলিফ হত্যা মামলার মধ্যে ওকালতনামা দিয়েছি।”
মি. রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, নিহত আইনজীবী আলিফ তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই। স্বার্থান্বেষী মহল এ বিষয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। কারণ যে মামলায় আসামির পক্ষে তিনি আইনজীবী হতে গিয়েছেন সেটি পুলিশের করা মামলা। আলিফ হত্যা মামলা পৃথক আরেকটি মামলা।
তিনি বলেন, “যেহেতু পুলিশের ওই মামলায় অজ্ঞাত ২১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় একজন সিনিয়র অ্যাডভোকেট কাইয়ুম জেল খাটতেছে দশ দিন। তাহলে আমি, আপনি কেউতো এখানে নিরাপদ না। এগুলা-তো আলিফ হত্যা মামলা না।”
মি. রহমান জানান আইনজীবী হত্যা মামলায় সবাই হিন্দু আসামি, মুসলিম নেই। আর পুলিশের করা ভাঙচুর মামলায় মি. দাসকে আসামিও করা হয় নাই বলে জানান তিনি।
২৬শে নভেম্বরের ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে তাতে আসামিদের পক্ষে না দাঁড়াতে এক ধরনের চাপ রয়েছে কি না এমন প্রশ্নে এই আইনজীবী বলেন, “অবশ্যই, অবশ্যই। না হলে বার কাউন্সিলের রুলস এন্ড অর্ডারের মধ্যে একজন আইনজীবী আসামির পক্ষে ওকালতনামা দেবে এটা স্বাভাবিক। মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। আমিই নিরাপদ না, আমার স্ত্রী, আমার বউ, আমার বাচ্চা নিরাপদ না।”
পুলিশের কাজে বাধাদানের এসব মামলায় ভিডিও দেখে শনাক্ত করে আসামি করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার দোসরা ডিসেম্বরও একই ঘটনা ঘটে।
এদিন পুলিশের ওপর হামলার মামলায় দুই জন আসামি দেলোয়ার হোসেন এবং মো. নুরুর পক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর নেজাম উদ্দিনের নামে আদালতে ওকালতনামা জমা দেয়া হয়।
পরে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে ওকালতনামা প্রত্যাহার করা হয়।
মঙ্গলবার চিন্ময় দাসের জামিন আবেদনের শুনানির আগেও আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করে আইনজীবীরা।
হামলা, ভাঙচুর ও হত্যা মামলার কোনটিতেই মি. দাসকে আসামি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের অন্তত একশত আইনজীবী এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিল। আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ অনেক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
পরে দেখা যায় জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আদালতে চিন্ময় দাসের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত নেই। সময় আবেদনও করেননি চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মফিজুল হক ভুঁইয়া সময় আবেদন করেন।
একইসাথে চিন্ময় দাসের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় পরবর্তী শুনানি দোসরা জানুয়ারি হবে বলে নির্ধারণ করে আদালত।
মি. ভুঁইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আসামির পক্ষে কেউ রেসপন্স না করায় আমি টাইম পিটিশনের কথা বললাম যে এটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা, সেনসিটিভ মামলা। পরে উনি একটা তারিখ দিলেন। দরখাস্ত পেন্ডিং আছে। নামঞ্জুর করেনি আদালত। ওইদিন ওনারা আসলে শুনানি হবে।”
মি. ভুঁইয়া জানান এর আগের দিন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটরের আসামিদের পক্ষে ওকালতনামা দেয়ার যে ঘটনা ঘটেছে এটি তার ইমেজকে খর্ব করার জন্য করা হয়েছে।
আসামিদের পক্ষে মামলা লড়তে আইনজীবীদের ওপর চাপ রয়েছে কি না এ প্রশ্নে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সমিতির পক্ষ থেকে আমরা অনুরোধ করেছি আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ড ও এই সংক্রান্ত অন্য মামলাগুলোতে যেন কোনো আইনজীবী আসামিদের পক্ষে না দাঁড়ান। বিশেষ করে হত্যা মামলাতে অংশ না নিতে আমরা বেশি বলছি।”
“অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর নেজাম উদ্দিন কালকে একটি আবেদন করছে যে ওকালতনামার বিষয় নিয়ে সে ভিকটিমাইজ হয়েছে। সে এটা দেয় নাই। তার চেম্বারের একজন জুনিয়র দিয়েছে,” জানান মি. উদ্দিন।
চিন্ময় দাসের আইনজীবীদের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করলে সমিতির সভাপতি এবং মহানগর দায়রা আদালতের পিপি দুইজনই অভিযোগ নাকচ করে দেন।
তবে এ ধরনের আবেদনের ক্ষেত্রে আইনজীবী না থাকলে মামলাটি শুধুমাত্র নথি-জাত করে রাখা হয়।
আইনজীবী না থাকা নিয়ে সনাতনী জোটের বক্তব্য
কেন আইনজীবীরা চিন্ময় দাসের মামলা লড়তে আদালতে ছিল না এর কারণ সম্পর্কে সম্মিলিত সনাতনী জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি আইনজীবী সুমন কুমার রায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আইনজীবী ছিল না তা নয়, কোনো আইনজীবীকে আদালতে দাঁড়াতে দেয়া হয় নাই। সেখানে প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।”
গত দুই দিন বিভিন্ন মামলায় আসামিদের পক্ষে আদালতে শুনানি করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হয় আইনজীবীরা এবং সমাবেশ করে যারা লড়বে তাদের গণপিটুনি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় বলে দাবি করেন মি. রায়।
“এখানে তো প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। হুমকি নিয়ে সে কীভাবে দাঁড়াবে আদালতে। এর আগে হিন্দু আইনজীবীদের চেম্বারও ভাঙচুর করা হয়েছে,” বলেন মি. রায়।
সবকিছু মিলিয়ে একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যে কোন আইনজীবী সেখানে দাঁড়াতে পারেনি বলে দাবি করেন মি. রায়।
আইনজীবী সমিতির সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত হলে জামিন শুনানি এগিয়ে আনতে আদালতকে অনুরোধ করা হবে বলে জানান মি. রায়।
আর এটি নামঞ্জুর হলে মামলা প্রত্যাহারের পিটিশন দিব। মামলা প্রত্যাহার হলে নিম্ন আদালতে শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। যদি সেখানেও নামঞ্জুর হলে হাইকোর্টে আবেদন করা হবে বলে জানান মি. রায়।
এটা রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র দাবি করে মি. রায় বলেন, “রাষ্ট্রীয়ভাবেই সে যাতে ন্যায়বিচার না পায়, তাকে যাতে জেলখানায় রেখেই আমাদের আট দফা দাবি ভূলুণ্ঠিত করা যায়। সেজন্য এক মাসের সময় দেয়া হয়েছে। এখানে নামঞ্জুর হলে আমরা খুশি হতাম। এখানে ন্যায়বিচার আমরা পাই নাই।”
তবে মঙ্গলবার কোনো হামলার ঘটনা না ঘটলেও এর আগে রিগ্যান আচার্য নামে একজন আইনজীবীর ওপর হামলা এবং চেম্বার ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তার বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।
এদিকে, সম্মিলিত সনাতনী জোটের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক মানুষের আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার আছে।”
জোটের পক্ষ থেকে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানানো হয়।
আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা
আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে।
এ মামলায় আসামিদের মধ্যে ৭০ জন আইনজীবী এবং দুজন সাংবাদিকও রয়েছেন। হত্যা মামলাটিসহ এখন পর্যন্ত মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে।
গত শুক্রবার ৩০শে নভেম্বর রাতে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলামের ভাই জানে আলম।
বিস্ফোরক আইনের এ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন আবেদনকারী আইনজীবী শুভাশীষ শর্মাসহ জ্যেষ্ঠ অনেক হিন্দু আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে।
ওই দিনই নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
এছাড়া পুলিশের কাজে বাধাদান, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হয়েছে তিনটি মামলা।
‘আইনি অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে’
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের পর আদালতে তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে লড়তে দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো আইনজীবী লড়তে চাইলেও মারধরের শিকার হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
সে সময় প্রধান বিচারপতি এসব আসামিদের পক্ষে লিগ্যাল এইডের আইনজীবী নিয়োগ করতে নির্দেশ দেন।
একইসাথে বিচারক ও আইনজীবীদের নিরাপত্তাসহ দেশের সব আদালতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন আদালতে আসামির পক্ষে আইনজীবী উপস্থিত না হতে পারলে তার আইনি অধিকার ব্যাহত হয়।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমি মনে করি যদি উনি প্রপারলি ডিফেন্ডেড না হন, যদি ওনার পক্ষে বিষয়টা আদালতে কোনো আইনজীবী উপস্থাপন করতে না পারেন কিংবা উপস্থাপন করার যদি সুযোগ দেয়া না হয় সেক্ষেত্রে তার আইনগত অধিকারটা ব্যাহত হচ্ছে।”
মি. সমাজী বলছেন ইতোমধ্যেই প্রধান বিচারপতির নির্দেশ অনুযায়ী চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে উচ্চ আদালতকে এবং প্রধান বিচারপতিকে জানাতে পারেন।
এমনকি চিন্ময় দাসের পক্ষে আইনজীবী দাঁড়াতে না পারলে লিগ্যাল এইডের আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে বলেও জানান মি. সমাজী।
মি. সমাজী বলছেন চিন্ময় দাসের আইনজীবীদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি অবশ্যই রেকর্ডেড থাকা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত এক ব্রিফিং এ উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলেছেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করা প্রয়োজন।
‘চিন্ময় দাস বাংলাদেশে ইসকনের নেতা। এছাড়াও ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রস্তাবিত পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডও ইসকনের সদস্য। চিন্ময় দাসকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, কারাগারে রাখা হয়েছে এবং বাংলাদেশের কোনো আইনজীবী তার পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে রাজি নয়, কারণ তার আইনজীবীকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আপনারা কোন ব্যবস্থা নেবেন কি না’- ব্রিফিংয়ে এমন প্রশ্ন করা হয় মি. প্যাটেলকে।ৎ
তিনি বলেন, “আমার কাছে এই মামলার কোনও বিবরণ নেই। কিন্তু আবারও বলব, আমরা জোর দিয়ে যাচ্ছি এবং ইতোমধ্যেই জোর দিয়েছি, যারা আটক আছে তাদের পক্ষেও উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব করতে দিতে হবে এবং মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সাথে আচরণ করা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
মি. প্যাটেল বলেন, “আমরা প্রতিটি সরকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করি, যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। আমরা স্পষ্ট করেছি, মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান থাকা দরকার। ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার। যে কোনো ধরনের প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ হওয়া উচিত এবং যে কোনো ধরনের ক্র্যাক-ডাউন এমনকি ক্র্যাক-ডাউন না হলেও সব দেশের সরকারকে আইনের শাসনকে সম্মান করতে হবে এবং এর অংশ হিসেবে মৌলিক মানবাধিকারকে সম্মান করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা গুরুত্বারোপ করে যাবো।”