News update
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     
  • Sudan war becomes more deadly: Ethnically motivated attacks up     |     
  • Dhaka's RMG exports reach $38.48 bn in 2024: New markets up     |     
  • Bangladesh’s GDP Growth to Decline to 4.1% in FY25: WB     |     

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-12-14, 8:21am

img_20241214_081856-817e3bf6924d0b8fb9bec57ec797e4751734142899.jpg




আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। ১৯৭১ সালে এই দিনে তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস রক্তগঙ্গা পেরিয়ে গোটা জাতি যখন উদয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখন বরেণ্য শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বহু মানুষ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

দেশের মুক্তির জন্য রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন, বিভিন্ন এলাকাকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে সেক্টরপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান, বাংলাদেশের প্রথম সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বুদ্ধিজীবী হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। তাদের মধ্যে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে মদদ জোগান পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্বে থাকা পাক জেনারেল রাও ফরমান আলী। ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত তালিকা ধরে ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘৃণ্যতম অপকর্মটি করে ঘাতক চক্র।

সান্ধ্য আইনের মধ্যে রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মূলত মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়।

বিজয় অর্জনের পর স্বাধীন বাংলাদেশে রায়েরবাজার, মিরপুরসহ কয়েক জায়গায় পাওয়া যায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত বিকৃত লাশ। বর্তমানে এই দুটি স্থান বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা.আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড.মুর্তজা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিন প্রমুখ।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার সহধর্মিনী বাসন্তী গুহঠাকুরতা তার একটি গ্রন্থে লিখেছেন, নীল নকশার রেখা অংকন শুরু হয়েছিল একাত্তরের পয়লা মার্চের আগেই সত্তরের ১৭ ডিসেম্বর গণভোট বা তারও অনেক আগে উনসত্তরের গণ আন্দোলনের সময় থেকেই, কিংবা বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পরে। একাত্তরে তারা পরিকল্পনা করে যুদ্ধে নামে। যুদ্ধ তো নয়, কেবল নিরস্ত্র মানুষ নিধন। প্রথমে ওদের এলোপাতাড়ি মারা, তারপর শহরে, গ্রামেগঞ্জে বেছে বেছে ধনী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী নিধণ করে নদীতে খালে ফেলে দেওয়া হয়। অনেকে মনে করেন চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে-তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের শিকার বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছরের মতো এ বছরেও যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের লক্ষ্যে প্রস্তুত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ। যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার অংশ হিসেবে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আরটিভি