News update
  • Bumper harvest of Jujube in Ramu Upazila     |     
  • Govt urged to offer scholarships to Palestinian students     |     
  • Caretaker Govt Review Hearing on Supreme Court Cause List     |     
  • Bangladesh Single Window to Launch by March: Lutfey Siddiqi     |     
  • UNRWA chief: Ceasefire is the start, not the solution     |     

সময় টেলিভিশনে সাংবাদিক ছাঁটাইয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে

বিবিসি বাংলা খবর 2024-12-26, 10:34pm

img_20241226_222815-8419b43c6488bb5ae65911495985f9bf1735230928.png




সময় টেলিভিশনে কর্মরত পাঁচ গণমাধ্যমকর্মীর একসঙ্গে চাকরি যাওয়ার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সামনে আসছে।

গত মঙ্গলবার ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এজেন্স ফ্রান্স প্রেসে-এএফপি এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

চাকরিচ্যুত পাঁচজন টেলিভিশন চ্যানেলটির বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে ছিলেন।

তাদের অভিযোগ, গত ১৮ই ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ কয়েকজনকে নিয়ে সময় টিভির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন এবং টিভি স্টেশনের ১০ জনের নামের একটি তালিকা দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করতে চাপ দেন।

পরবর্তী সময়ে, সেই তালিকার পাঁচজনকে ডেকে পদত্যাগ করতে বলার পর তারা তাতে অস্বীকৃতি জানালে একই দিন হোয়াটসঅ্যাপে তাদের অব্যাহতিপত্র পাঠানো হয়।

প্রায় ১৫ জনের একটি দলসহ হাসনাত আব্দুল্লাহ সিটি গ্রুপের হেড অফিসে গিয়ে কয়েকজনকে চাকরি থেকে বাদ দেয়ার জন্য চাপ দেয়ার কথা বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবং সময় টিভির পরিচালক মো. হাসান।

তবে সিটি গ্রুপে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও সেখানে গিয়ে ভয় দেখানো বা তালিকা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় সরকারের মুখপত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার নানা অভিযোগ তোলা হয় বেসরকারি সময় টেলিভিশনের বিরুদ্ধে।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর এমন হস্তক্ষেপকে অশনিসংকেত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিবিসি বাংলাকে ওমর ফারুক বলেন, "১৮ তারিখের দিকে আমাদের বস জানান, সিটি গ্রুপের হেড অফিসে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং তার কয়েকজন সহকর্মী গেছেন এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সময় টিভির ১০ জনের একটা লিস্ট দিয়ে তাদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন। আর তা করা না হলে সময় টিভি এবং সিটি গ্রুপের ক্ষতি হবে, এমন হুমকিও দিয়েছেন।"

এনিয়ে আরেক চাকরিচ্যুত সাংবাদিক মো. আরিফুল সাজ্জাত বলেন, "সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সময় টিভির পরিচালক মো. হাসান এডিটোরিয়াল উপদেষ্টা নিয়াজ মোর্শেদ এবং সময় মিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোরশেদুল ইসলামকে জানান যে হাসনাতের নেতৃত্বে একদল ছেলে ওখানে গিয়ে শাসিয়ে আসে। তারা মিসবিহেভ করে তাদের একটি তালিকা ধরিয়ে দিয়ে বলে যে এরা ফ্যাসিস্টের দোসর, এদের এখান থেকে চলে যেতে হবে।"

পরে রোববার পাঁচজনের সঙ্গে বসে 'কোম্পানির বৃহত্তর স্বার্থে' তাদের রিজাইন দেয়ার অনুরোধ করা হয় বলে জানান স্টেশনটির সাবেক চিফ আউটপুট এডিটর মি. সাজ্জাত।

কিন্তু কেউই এতে রাজি না হলে একইদিন কোনো কারণ না দর্শিয়েই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাদের অব্যাহতিপত্র পাঠানো হয়।

চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়া অন্য তিনজন হলেন ডিজিটাল হেড কামাল শাহরিয়ার, সহযোগী বিশেষ প্রতিবেদক দেবাশীষ রায় ও সিনিয়র রিপোর্টার বুলবুল রেজা।

এদিকে চাকরি ছাঁটাইয়ের জন্য কোনো তালিকা দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সাংবাদিকদেরই একটি অংশ এটি করার জন্য 'সাজেস্ট' করেছে বলে দাবি করেন মি. আব্দুল্লাহ।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "আপনাদের জার্নালিস্টদেরই একটা বৃহৎ অংশ, যারা ফ্যাক্টবেসড জার্নালিজমের মধ্যে ছিল, প্রোপাগান্ডাবেসড জার্নালিজমের মধ্যে ছিল না– ওই জার্নালিস্টরাই পরামর্শ দিয়েছে যে ওনার (সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সময় টিভির পরিচালক মো. হাসান) সাথে কথা বলতে পারেন।"

কেবল আলোচনার জন্যই সেখানে গিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

কিন্তু সময় টিভিতে প্রতিবাদ না পাঠিয়ে কিংবা প্রেস কাউন্সিলের মতো যথাযথ প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সরাসরি অফিসে কেন গেলেন এমন প্রশ্নের জাবাবে মি. আব্দুল্লাহ বলেন, "পরবর্তীতে জেনেছি কী কাউন্সিল আছে, এটা-সেটা। কিন্তু এই ইস্যুর একদম প্রথম দিন থেকে জার্নালিস্টরাই বলেছেন ওনার সাথে কথা বলতে।"

তালিকা দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, "আমি ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেই নাই।"

বরং দীর্ঘ সময় ধরে করা প্রমাণহীন নানা রিপোর্টের বিষয় তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি জনসাধারণের যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে তা 'নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা' নেয়ার কথা জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে বিবিসি বাংলাকে অনেকটা ভিন্ন কথাই বলছেন সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সময় টেলিভিশনের পরিচালক মো. হাসান।

তিনি জানান, "১৭ বা ১৮ই ডিসেম্বর বিকেলের দিকে সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। আমি একটি মিটিংয়ে থাকায় অপেক্ষা করতে বললেও, তারা তাদের আর্জেন্সির কথা জানান।"

দেখা করার পর তারা মৌখিকভাবে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে জানান যে তারা পাঁচই অগাস্টের আগে যেমন রিপোর্টিং করছিলেন, এখনও তেমনটাই করছেন।

মো. হাসান বলেন, "ওনারা বলেন যে এদেরকে এখানে রাখা যাবে না, এই ধরনের কথাবার্তা বলে" চাপ দেন।

তবে সমন্বয়করা সময় টিভির শেয়ার চেয়েছেন বলে যে অভিযোগগুলো উঠছে তা সত্য নয় বলেও জানান তিনি।

এদিকে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের অভিযোগটি 'সত্য' বলে জানিয়েছেন মিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোরশেদুল ইসলাম।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "সিটি গ্রুপের এমডিকে তারা ভয়টা দেখিয়েছে। ওখান থেকে আমাদের চাপ দেয়া হয়েছে যে একটা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য, যে কারণে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি। স্বেচ্ছায় আমরা এটা করি নাই।"

তবে নানা দিক থেকে প্রতিবাদ আসার পর চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের আবারও "নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে" উল্লেখ করে সমস্যা সমাধান করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

কী কারণে এই পাঁচজনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা?

মো. আরিফুল সাজ্জাত বলছেন, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এবং বাইরে দুইটি বিষয়ই এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

"আমাদের অফিসেরই কেউ না কেউ তাদের এই তালিকা দিয়েছে," বলেন মো. আরিফুল সাজ্জাত।

"এখন মিডিয়াতে যেটা হচ্ছে, একটা বিশেষ গোষ্ঠী নিজেদের মতো করে লোক বসানোর চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে কি (প্রধান) পোস্টগুলো তাদের টার্গেট", বলছিলেন মি. সাজ্জাত।

অর্থাৎ একটি পক্ষ নিজেদের মতাদর্শের লোক বসাতে চাচ্ছেন এবং টিভি স্টেশনের ভেতরে থাকা আরেকটি পক্ষ নিজেদের স্বার্থে এই ধরনের কাজকে উস্কে দিচ্ছেন বলে জানাচ্ছিলেন মি. সাজ্জাত।

ছাঁটাইয়ের খবর আসার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বলেও জানান মি. সাজ্জাত।

তারা এটাকে 'হাসনাতের ব্যক্তিগত কাজ' হিসেবে জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইংয়ের সাথেও যোগাযোগ করা হয়েছিল বলে জানান সময় টেলিভিশনের চাকরিচ্যুত চিফ ইনপুট এডিটর ওমর ফারুক।

'গণমাধ্যমকে হুমকি দেয়া ওপেন সিক্রেট'

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু না। তবে আগের সরকারের সময় যেভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হতো, বর্তমান সময়ে এসে সেই প্যাটার্নে একটা পরিবর্তন এসেছে বলেই বলছেন অনেক বিশ্লেষক।

তবে আগে 'রাষ্ট্রীয় সংস্থার মাধ্যমে' আগে গণমাধ্যমের ওপর যে হস্তক্ষপে করা হতো পাঁচই অগাস্টের পর 'ইন্টারভেনশন থ্রু মোবোক্রেসি'র মাধ্যমে সেটি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুল আলম চৌধুরী।

"যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি বলছেন যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা কী করছে তার দায় তাদের না, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেয়ার পর বলেছেন উনাকে এনেছেন ছাত্ররা। তাহলে সেই ছাত্র কারা?" প্রশ্ন তোলেন ড. চৌধুরী।

জাতীয় ঐক্যের মিটিংয়ে ডাক পাওয়া একমাত্র ছাত্র সংগঠন ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ফলে সরকারের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা 'মানুষের কাছে পরিষ্কার' বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

"সো এই মোবোক্রেসিটা সময় টিভির মাধ্যমে হয়তোবা অনেক বেশি মানুষের সামনে এসেছে। কিন্তু পাঁচই অগাস্টের পর থেকেই গণমাধ্যম দখল, গণমাধ্যমকে টেলিফোনে হুমকি দেয়া- এগুলো একেবারে ওপেন সিক্রেট হয়ে পড়েছে," বলছিলেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা এই বিশ্লেষক।

তার মতে, আগের সরকারের সময় যেভাবে ছায়া সংগঠনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে চাপের মধ্যে রাখতো, একইভাবে এখনও "নানা ধরনের সংগঠন গজাচ্ছে এবং তাদের পক্ষে না গেলে, বিপক্ষে সংবাদ প্রচার করলে মিডিয়ার ওপর হস্তক্ষেপ করছে।"

সময় টিভির এই ঘটনাকে তারই একটি 'বহিঃপ্রকাশ' বলে মনে করেন ড. চৌধুরী।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে প্রেস কাউন্সিল কিংবা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কাছে যেতে পারে, অথবা মানহানির মামলা করতে পারে।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেয়ার পর সংবাদমাধ্যম আরও বেশি স্বাধীনতা ভোগ করবে এমন মনে করা হলেও 'প্রেস ফ্রিডম বেড়েছে কি না' সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন এই বিশ্লেষক।