প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে চারটি তলা। পুরো ভবনটি ঘিরে রেখে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করে যাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন দলকে সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। অন্যদিকে গঠিত আট সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটির অধিকাংশ সদস্য সকালে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন।
বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সচিবালয়ের মূল ফটকে পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। তদন্ত কাজের সঙ্গে জড়িত, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে, এখনও সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি বলে জানা গেছে। বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে সাত নম্বর ভবনের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের আগুনের ঘটনার কারণ ও উৎস খুঁজে বের করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সভাপতির দায়িত্বপালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ওনার সঙ্গে থাকবেন গৃহায়ন সচিব, পুলিশের আইজিপি, কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স এর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েট থেকে ৩ জন বিশেষজ্ঞ, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
এদিকে, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য দুটি কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একটিতে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) মোহাম্মদ শফিউল আরিফকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন: যুগ্ম সচিব (আইন ও প্রতিষ্ঠান) জাহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব (প্রশাসন ও বাজেট) আ স ম হাসান আল আমিন, যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুব্রত কুমার সিকদার, উপসচিব (প্রশাসন অধিশাখা-২) ড. অশোক কুমার বিশ্বাস, সিস্টেম এনালিস্ট প্রকৌশলী মো. মোনায়েম উদ্দিন চৌধুরী। এ ছাড়া সদস্যসচিব করা হয়েছে উপসচিব রহিমা আক্তারকে (প্রশাসন)।
আরেকটি কমিটিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন) আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন: স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ), স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন), স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা-২ অধিশাখা), স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অধিশাখা), স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১)। এছাড়া সদস্যসচিব করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিবকে (প্রশাসন অধিশাখা)।
অন্যদিকে, আগুনের ঘটনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন: উপসচিব মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, সিস্টেম এনালিস্ট সুকান্ত বসাক ও সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার এ. এস. এম. মেহরাব হোসেন। এছাড়া সদস্যসচিব করা হয়েছে উপসচিব মো. কামাল হোসেনকে।
গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। সময়।