জুলাই ইতিহাসে রক্তিম এক নারকীয় অধ্যায়ের শুরু হয় গতবছরের এইদিনে (১৬ জুলাই)। সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হয় ৬ জন আর আহত হয় কয়েকশ। এদিনও ছাত্রলীগ সরাসরি গুলি চালায় শিক্ষার্থীদের ওপর।
গত বছরের এইদিনে রক্তিম এক অধ্যায়ের সূচনা হয়, যা মেনে নেয়নি এদেশের আপামর জনতা। এদিন আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ ৬ শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় স্বাধীন দেশের রাজপথ। যে দেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জনে রক্ত দিয়েছে, সেই দেশের মানুষ মেনে নেয়নি ন্যায্যতা আদায়ের লড়াইয়ে রাজপথ রঞ্জিত হওয়ার এই ইতিহাসকে। যা এক দফায় যেতে বাধ্য করে এদেশের নারী, শিশু, শ্রমজীবীসহ সমগ্র জাতিকে।
১৬ জুলাই, ২০২৪, মঙ্গলবার। আগের দিনে ঘটে যাওয়া হামলার ঘটনায় সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছিল টান টান উত্তেজনা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলার নিন্দা ও শাস্তি চেয়ে বিবৃতি দেন ১১৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
এরমধ্যেই এদিনও দেশজুড়ে চলে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করে পুলিশ।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে দুপুরে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা দুইটার দিকে ওই মিছিলেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর সেখানে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।
দেশজুড়ে চলমান হামলায় এদিন নিহত হন ছয়জন, যাদের মধ্যে চট্টগ্রামে পথচারিসহ তিনজন, ঢাকায় দুজন এবং রংপুরে একজন।
দেশজুড়ে চলমান নারকীয় এসব হামলায় আহত হয় কয়েকশ মানুষ। জবিতে গুলিতে আহত হয় ৪ জন, চট্টগ্রামে ৬০, রংপুরে অর্ধ শতাধিক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আহত ১, বগুড়ায় ১, ফরিদপুরে ৫, বরিশালে ২৫, সিরাজগঞ্জে ২০, হাবিপ্রবিতে ৩০ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৫০ জন আহত হন।
এদিকে বিকেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে।
সহযাত্রীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে নতুন কর্মসূচি দেয় শিক্ষার্থীরা। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে পরদিন গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল করার ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন, গায়েবানা জানাজার কর্মসূচির ঘোষণা আসে বিএনপির পক্ষ থেকে।
এদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এক প্রজ্ঞাপনে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে এবং হল খালি করতে নির্দেশনা দেয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সারা দেশের সব স্কুল ও কলেজের জন্য আসে একই নির্দেশনা। স্থগিত করা হয় এইচএসসি পরীক্ষাও।