জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকছে না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম।
সোমবার (২১ জুলাই) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
জুলাইযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারকে সরকারিভাবে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে বলে খবরে দেখছি এবং সরকারি চাকরিতে কোটা বরাদ্দ করা হবে; এ তথ্য সঠিক কি-না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুসারে মন্ত্রণালয় যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এই কার্যক্রমের মধ্যে ফ্ল্যাট দেওয়া কিংবা চাকরির কোটা দেওয়া—এসব বিষয় নেই।
তিনি বলেন, পুনর্বাসন কর্মসূচি আছে। পুনর্বাসন নানানভাবে হতে পারে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি যেভাবে পুনর্বাসিত হতে চান সেভাবে করা হবে। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য যদি হাস-মুরগি কিংবা পশু পালন, মৎস্য পালন; যেভাবে তিনি জীবিকা সংস্থান করতে চাইবেন সে ধরনের সুবিধাদি সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের সরকার অনুদান দেবে সেটা স্বাভাবিক, তাদের আত্মত্যাগ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারাও এখন ভাতা পাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা, জুলাই যোদ্ধারাও পাচ্ছেন ২০ হাজার টাকা। দুটো কি সমান হয়ে গেল কি-না, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা কি বাড়ানো হবে- এসব প্রশ্নের জবাবে ফারুক-ই আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গটা এখানে না আসাই উচিত। মুক্তিযোদ্ধারা মহান। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। এটা সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত। এখানে এই প্রসঙ্গ নিয়ে আসা উচিত না।
জুলাই যোদ্ধাদেরকে মুক্তিযোদ্ধাদের সমকক্ষ করা হচ্ছে কি-না; এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওইভাবে (সমকক্ষ) কেউ দেখছে না। আমরাও দেখছি না। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা পেতে ৩০-৩৫ বছর লেগেছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা তো ভাতাই পায়নি, তালিকাই হয়নি। অথচ ২০০৫ সালেই শহীদের তালিকা হয়েছে। এগুলো সব রেকর্ডেড। তাহলে এত বছর ধরে হলো না কেন? আমি মুক্তিযোদ্ধার প্রসঙ্গ এখানে আনতে চাচ্ছি না।
সরকারি চাকরিতে তাহলে সত্যিই জুলাই যোদ্ধাদের জন্য কোনো কোটা থাকবে না? এ প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, না না। কোনো কোটা থাকবে না। তারা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাবেন।
ফারুক-ই আজম বলেন, স্বৈরশাসন এবং সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার এক রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় এবং ৮ আগস্ট বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থান সরকারিভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নামে অভিহিত হয়। ১২ ডিসেম্বর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণ এবং যাবতীয় বিষয়াদির প্রশাসনিক দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ২৮ এপ্রিল ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠন করা হয়। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের জুলাই শহিদ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার।
মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি ৮৩৪ জন এবং ৩০ জুন আরও ১০ জন সর্বমোট ৮৪৪ জন শহিদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশ করে। আহত হওয়ার ধরণ অনুসারে জুলাই যোদ্ধাদের তিনটি শ্রেণিভুক্ত করে ২৭ ফেব্রুয়ারি ৪৯৩ জন জুলাই যোদ্ধাকে ‘ক’ শ্রেণিতে, ৯০৮ জনকে ‘খ’ শ্রেণিতে এবং ৪ এবং ৫ মার্চ ১ হাজার ৬৪২ জনকে ‘গ’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ‘ক’ শ্রেণির ১১৪ জন, ‘খ’ শ্রেণির ২১৩ জন এবং ‘গ’ শ্রেণির ১৪৪২ জন সর্বমোট ১৭৬৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। আরটিভি