News update
  • Gold price in Bangladesh above Tk 2 lakh per Bhori for 1st time     |     
  • Tarique Vows to Return, be With People During Polls     |     
  • Exports Dip 4.5pc in September Amid US Tariff Impact     |     
  • Hamas calls for swift hostage-prisoner swap as talks set to begin     |     
  • Leadership vacuum cripples primary education in Sonargaon     |     

নাফ নদীতে বেপরোয়া আরাকান আর্মির তাণ্ডবে দিশেহারা বাংলাদেশি জেলেরা

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2025-08-28, 7:50am

22eed207e9f659b69430028f5147b85d72aa8b94bd6004e6-d7e223a1569d86306452b5da60f059851756345837.jpg




বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীর জলসীমায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আরাকান আর্মি। গত ৪ দিনে নাফ নদীর জলসীমা থেকে ৬টি ট্রলারসহ ৪৪ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে তারা। এনিয়ে টেকনাফে উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা। জেলেদের উদ্ধারে পদক্ষেপ ও নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছে ট্রলার মালিক সমিতি। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরাকান আর্মি খাবারসহ প্রয়োজনীয় পণ্য ও টাকা আয়ের জন্যই এমন অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদীর জলসীমা। শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়ার জলসীমা অংশে একের পর এক ট্রলারসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। টেকনাফ থেকে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাওয়া কিংবা মাছ শিকার করে ট্রলার নিয়ে ফেরার সময় অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তারা।

সবশেষ সাগর থেকে মাছ শিকার শেষে টেকনাফ ফেরার পথে শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া নামের এলাকা থেকে ২টি ট্রলারসহ ১১ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া ঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম।

ওই ট্রলারের মাঝি আব্দুল হাফেজের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছে বলে জানান আবুল কালাম। তিনি বলেন, সাগরে মাছ শিকার শেষে টেকনাফে ফেরার পথে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব-দক্ষিণে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা সংলগ্ন নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকেই ওৎপেতে থাকা আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিডবোটে জেলেদের ধাওয়া করে আটক করেন। পরে তাদেরকে আটক করে মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু প্রতিদিন আরাকান আর্মির সদস্যরা বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশি ট্রলারসহ জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। গত চারদিনে ৬টি ট্রলারসহ ৪৪ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছেন বলে ট্রলার মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে।’

বিজিবি ও জেলে মালিকদের দেয়া তথ্য মতে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২৫০ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি ট্রলার-নৌকা ফেরত আনা হয়েছে।

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট বোট মালিক সমিতি জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট ১টি নৌকাসহ ২ জন, ১২ আগস্ট ১টি ট্রলারসহ ৫ জেলে, ২৩ আগস্ট ১টি ট্রলারসহ ১২ জন, ২৪ আগস্ট ২টি ট্রলারসহ ১৪ জন, ২৫ আগস্ট ১টি ট্রলারসহ ৭ জন ও ২৬ আগস্ট ২টি ট্রলারসহ ১১ জনকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এনিয়ে গেলো ২২ দিনে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে ৫১ জন জেলেকে। যাদের কোনো খবর পাচ্ছে না জেলে পরিবারগুলো। আর এখনো পর্যন্ত কোনো জেলেকে ফিরিয়ে না দেয়ায় টেকনাফ উপকূলজুড়ে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।

ট্রলার মালিক ও জেলেদের দাবি, টানা চার দিনে ৪৪ জন জেলে আরাকান আর্মির হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন। আর চলতি আগস্ট মাসের ৫ আগস্ট থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২২ দিনে সাতটি ট্রলার-নৌকাসহ ৫১ জন জেলেকে ধরে নেয়া হয়েছে। তাদের কাউকে এখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব-দক্ষিণে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা সংলগ্ন নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

ট্রলার মালিকদের দাবি, আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিডবোট নিয়ে নাফ নদীর বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ছেন। তারা অস্ত্রের মুখে টেকনাফের জেলেসহ মাছ ধরার ট্রলার ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। বিজিবির তৎপরতায় কিছু জেলেকে ফেরত আনা গেলেও ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। এ নিয়ে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গবেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মিয়ানমার থেকে কোনো প্রকার খাবার, পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে রাখাইনে তাদের মধ্যে খাদ্যসহ নিত্য পণ্যের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট নিরসনে বাংলাদেশ থেকে পণ্য সংগ্রহের জন্য অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। তাই নাফ নদীতে জেলে অপহরণ ও ট্রলার লুট অর্থ আদায় বা চাঁদাবাজিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন। এটা বন্ধের জন্য আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর আরও সতর্ক এবং কৌশলগত অবস্থান জরুরি।

অভিবাসন ও রোহিঙ্গা বিশেষজ্ঞ গবেষক আসিফ মুনীর বলেন, আরাকান আর্মি সীমান্তে তাদের কর্তৃত্বের জানান দিতে এমন আচরণ শুরু করেছে। তার নেপথ্যে কারণ কিন্তু ভিন্ন। মিয়ানমারের জান্তার সাথে আরাকান আর্মির যে সংঘাত চলছে ওখানে রোহিঙ্গাদের জান্তার পক্ষে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এখানে রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির মুখোমুখি করা হয়েছে। ওখানে রোহিঙ্গা আরও অনেকেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন। এসব রোহিঙ্গাদের ভয়-ভীতিতে রাখার কৌশল হিসেবে নাফ নদীতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। এব্যাপারে আমাদের আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে জেলেদের নাফ নদী থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা চাওয়া জরুরি। সময়।