উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জে আলুর দাম ঠেকেছে ৬০ টাকায়। এরই মধ্যে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও ভুতুড়ে বিলের কারণ দেখিয়ে হিমাগারগুলো ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে, যার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। আলুর এ অস্বাভাবিক মূল্য বাড়ায় সাধারণ ভোক্তারা ক্ষুব্ধ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হিমাগারকে কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে ঘোষণার দাবি ওঠেছে।
মে মাসেই হিমাগার থেকে আলু বের হতে শুরু হয়েছে। পণ্যটি সংরক্ষণ করতে না করতেই চড়া দামের কারণে তা বের করে বাজারজাত করা হচ্ছে। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আলু ২২০ থেকে ২৩০ টাকার স্থলে ভাড়া ২৬০ টাকা করার কথা বলতেই ফুঁসছে কৃষক ও সংরক্ষণকারীরা।
সংরক্ষণকারী কৃষকরা বলেন, ‘আমরা যখন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করি, তখন লিখিত দিয়েছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। সেখানে কোথাও লেখা নেই যে, বিদ্যুতের দাম বাড়লে হিমাগারের ভাড়া বাড়বে। তাহলে কেন এ পাঁয়তারা। ভাড়া নির্ধারণ হিমাগারের যেন ইচ্ছাধীন।’
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, মার্চ মাসে জেলার ৩৩ হিমাগারের বিদ্যুৎ বিল ছিল ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এপ্রিল মাসে সেই বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৫ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। বিল বাড়ার পাশাপাশি ভৌতিক বিলও করা হচ্ছে।
সিরাজদিখান উপজেলার নেপচুন কোল্ড স্টোরেজের চেয়ারম্যান ড. খালেদা বেগম বলেন, ‘হঠাৎ করে বিদ্যুতের বিল দ্বিগুণ হয়ে গেল, এতে আমরা মানসিক ও আর্থিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। আগে তো ১৫ দিন সময়ও দিত অ্যাপ্লাই করতে। সঠিক টাইমে বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে, তা নাহলে ৫০ হাজার টাকা ফাইন দিতে হবে। এখন ১৫ লাখ টাকা লোন নেয়া কি সোজা কথা! এ জুলুম থেকে আমরা কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা মুক্তি চাই।’
মুন্সীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মো. হামিদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কড়া নির্দেশনা রয়েছে, কোনো ভৌতিক বিল করা যাবে না। আমরা করবও না। বিদ্যুতের রেট বেড়েছে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। এপ্রিল থেকে শিল্পের বিলটা আমরা কার্যকর করেছি। অন্য গ্রাহকদেরও এপ্রিল থেকে কার্যকর করেছি। আমাদের ডিমান্ডের রেটও বেড়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শান্তনা রাণী পুতুল বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজগুলো যেহেতু এখন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত। সেখান থেকে যদি কৃষি মন্ত্রণালয় অথবা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের হাতে দেয়া যায়, তাহলে তারা কৃষিভিত্তিক ভর্তুকিটা পাবে। বিদ্যুতের অযাচিত মূল্য কৃষকের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না। আমাদের সবারই উচিত এ ব্যাপারে প্রশাসন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিদ্যুতের অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি সুরাহা করা জরুরি।’
জেলায় এবার ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে ১০ লাখের বেশি মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। সচল ৫৮টি হিমাগারে এবার প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন আলু ও প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন বীজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। সময় সংবাদ