দেশে মোট চাহিদার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের যোগানদাতা প্রান্তিক খামারিরা হলেও তাদের হাতে নেই ডিমের বাজার। খামার থেকে চলে যাওয়ার একদিন পর জানতে পারেন কত টাকায় বিক্রি হলো তার পণ্য। অদৃশ্য পক্ষের মর্জিমতো নির্ধারণ হয় দাম।
এমন তথ্য উঠে এসেছে সময় সংবাদের অনুসন্ধানে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে মিল রেখে ডিমের স্থায়ী মূল্য বাস্তবায়ন করা না গেলে শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে দাবি খামারিদের।
একমাস ধরে ডিমের বাজারে চরম অস্থিরতা। ব্যবসায়ীদের দাবি, খামারে বাড়তি দাম থাকায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে নেই স্বস্তি। কিন্তু বাস্তবতা কী? উৎপাদকরাই কি সরবরাহ ডিমের দামের ওঠানামা ঠিক করেন? নাকি অন্য কোনো পক্ষ আড়ালে নাড়েন কলকাঠি?
নরসিংদীর খামারিদের কাছে প্রশ্ন ছিল কীভাবে বিক্রি হয় তাদের ডিম। কারা দাম নির্ধারণ করেন তাদের পণ্যের?
ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকা থেকে বলার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম দেন। এটা একটি সিন্ডিকেট। যদি এদের ডিম না দেয়া হয়, তাহলে ডিম বিক্রি কষ্ট হয়ে যায়।
আরেক ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে ডিম নিয়ে যায়। পরেরদিন আমাদেরকে ডিমের বাজার অনুযায়ী দাম দেয়া হয়। আমাদের নির্ধারণ করার কিছু থাকে না, ব্যবসায়ীরাই ডিমের দাম নির্ধারণ করেন।
নরসিংদী ছাড়াও সময় সংবাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের ডিমের খামারিদের অবস্থা। যাত্রাপথে দেখা মিলল ডিম সংগ্রহকারী পিকআপের। সঙ্গে খামারিও। মিল পাওয়া গেল নরসিংদীর খামারিদের দেয়া তথ্যের। অন্যান্য খামারিরাও বলছেন একই কথা।
এ বিষয়ে ডিম সংগ্রহকারী পিকআপের চালক জানান, ঢাকার সমিতির নির্ধারিত দামে ডিম কেনাবেচা হয়।
আর ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের হাতে কিছুই নেই। সন্ধ্যার পর জানতে পারি ডিমের দাম কত হয়েছে। আবার অনেক সময় ডিমের দাম কম দেয়া হয়। তখন ঢাকা থেকে জানানো হয় ডিমের দাম কম, তাই কম দেয়া হচ্ছে। আসলে ডিমের দাম খামারি বা উৎপাদকদের হাতে নেই।
একদিকে বছর বছর বাড়ছে মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম, অন্যদিকে ডিমের দাম নির্ধারণের সুযোগও নেই খামারিদের হাতে। এমন বাস্তবতায় ডিমের স্থায়ী মূল্য বাস্তবায়ন না করা গেলে পোল্ট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে দাবি খামারিদের।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার ডিমের দামের করসাজির জন্য মধ্যস্বত্ত্ব ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, ডিমের উৎপাদন খরচ প্রতিদিন বাড়েও না, কমেও না। ডিমের দামের কারসাজি করেন ব্যবসায়ীরা। আর এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোক্তা ও প্রান্তিক খামারিরা।
দাম নির্ধারণে খামারিদের জিম্মিদশা না কাটলে ডিমের বাজারের অস্থিতিশীলতা দূর হবে না বলেও মনে করেন তারা। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।